Tiljala Death

তিলজলায় ট্যাঙ্কারে মৃত্যুতে ধৃত দুই, লোক দিয়ে তরল মাপানো নিয়ে বিতর্ক

এই ঘটনায় গাফিলতির একাধিক অভিযোগ উঠে আসছে, যা নিয়ে কোনও স্পষ্ট উত্তর মেলেনি পুলিশ বা সংশ্লিষ্ট কারখানা কর্তৃপক্ষের তরফে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০২৩ ০৭:৩৪
Share:

ট্যাঙ্কারে পড়ে দুই শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনায় দু’জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। প্রতীকী ছবি।

তিলজলায় সাবানের কারখানায় সাবান তৈরির উপকরণ বোঝাই ট্যাঙ্কারে পড়ে দুই শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনায় দু'জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। ধৃতদের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ আনা হয়েছে। কিন্তু তাঁদের রবিবার আলিপুর আদালতে তোলা হলে বিচারক জামিন মঞ্জুর করেন। সরকারি আইনজীবী সৌরীন ঘোষাল বলেন, ‘‘গাফিলতির অভিযোগে জামিন-যোগ্য ধারায় মামলা করা হয়েছিল। সেই কারণেই বিচারক ধৃতদের জামিন দিয়েছেন।’’ যদিও এই ঘটনায় গাফিলতির একাধিক অভিযোগ উঠে আসছে, যা নিয়ে কোনও স্পষ্ট উত্তর মেলেনি পুলিশ বা সংশ্লিষ্ট কারখানা কর্তৃপক্ষের তরফে।

Advertisement

পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের নাম অমিত চক্রবর্তী এবং কে কুমার। অমিত ওই কারখানার সুপারভাইজ়ার। বেঙ্গালুরুর বাসিন্দা কে কুমার ট্যাঙ্কারটির চালক। নিম তেল বোঝাই ওই ট্যাঙ্কারটি বেঙ্গালুরু থেকে শনিবার তিলজলার ওই কারখানায় পৌঁছেছিল। পুলিশের অনুমান, ট্যাঙ্কারের ছাদে থাকা ঢাকনা খুলে ভিতরের তরল মাপতে গিয়ে পড়ে যান সেটির খালাসি, বেঙ্গালুরুরই বাসিন্দা বছর ৩৩-এর লোগাননাথন। তিনি আর সাড়াশব্দ করছেন না দেখে ছুটে যান কারখানার এক কর্মী, সোনারপুরের বাসিন্দা কার্তিক হালদার। কিন্তু অত্যন্ত পিচ্ছিল পদার্থ ভর্তি ট্যাঙ্কারের মধ্যে পড়ে যান তিনিও। দীর্ঘ লড়াই শেষে প্রায় তিন ঘণ্টার চেষ্টায় ট্যাঙ্কার থেকে আঁকশি দিয়ে দু'জনের দেহ উদ্ধার করে কলকাতা পুলিশের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী এবং দমকল। কলকাতা পুলিশের এক কর্তা এ দিন বলেন, ‘‘এই ঘটনায় কারখানার সুপারভাইজ়ার এবং ট্যাঙ্কারের চালকের গাফিলতি রয়েছে। তাঁরা সতর্ক হলে এমন ঘটনা ঘটত না।’’

কিন্তু কোনও ট্যাঙ্কারের পেটের মধ্যে থাকা পদার্থের ওজন মাপার এটাই কি পদ্ধতি? রাস্তার ম্যানহোলের মতো এ ক্ষেত্রেও কি মানুষ নামিয়ে কাজ করানোই পথ? কলকাতা পুলিশের কোনও কর্তাই এই বিষয়ে আলোকপাত করতে পারেননি। তাঁরা শুধু জানিয়েছেন, ঘটনার তদন্ত হবে। তবে ‘ফেডারেশন অব ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রাক অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশন'-এর সাধারণ সম্পাদক সজল ঘোষ বলেন, ‘‘এ ভাবেই মানুষ দিয়ে লম্বা লাঠির গায়ে আঁকা এক ধরনের স্কেল ট্যাঙ্কারেরপেটের ভিতরে ফেলে তরল মাপা হয়। এ ক্ষেত্রে কিছু বাধ্যবাধকতা কাজ করে।’’

Advertisement

তিনি জানান, ট্যাঙ্কারটির ধারণক্ষমতা ছিল ২৫ হাজার লিটার। এই ধরনের ট্যাঙ্কার কয়েক দিন সময় নিয়ে গন্তব্যে পৌঁছয়। ট্যাঙ্কারের পেটের মধ্যে পাঁচ হাজার লিটার করে জায়গা ভাগ করা থাকে। প্রতিটি ভাগে তরল ভরা এবং তোলারজন্য একটি করে ঢাকনা দেওয়া থাকে। ২৫ হাজার লিটারের হওয়ায় এ ক্ষেত্রে পাঁচটি ঢাকনা ছিল। সজল বলেন, "এমনিতে যেখান থেকে ট্যাঙ্কার ভর্তি করা হয়, সেখানে প্রথমে গোটা ট্যাঙ্কারটির ওজন মাপা হয়। এর পরে গন্তব্যে পৌঁছে ফাঁকা করার আগে আর এক বার ট্যাঙ্কারের ওজন মেপে নিয়ে দু'টি ওজনের কাগজ মিলিয়ে নিলেই হয়। কিন্তু এই গোটা প্রক্রিয়ায় নানা সমস্যা হতে পারে ভেবে ৬০ লিটার পর্যন্ত ওজনে কিছুটা ছাড় দেওয়া হয়। কিন্তু যখন ২৫ হাজার লিটারের ট্যাঙ্কার অনেকে মিলে বরাত দেন, তখনই দেখা দেয় সমস্যা। এক-একটি জায়গায় পাঁচ হাজার লিটার করে ফাঁকা করতে করতে ট্যাঙ্কারটি তার গন্তব্যে পৌঁছয়। যে হেতু ভাগ ভাগ করে নেওয়া হচ্ছে, তাই গোটা ট্যাঙ্কারের ওজন করে আর পরিমাপ করা যায় না। সেই কারণেই কাউকে উপরে উঠে স্কেল ফেলে মেপে দেখতে হয়।’’

হাওড়া জেলা লরি সংগঠনের সম্পাদক বীরেন্দর সিংহ বলেন, ‘‘যাঁরা বরাত দিচ্ছেন, তাঁদেরই ওজন মেপে নেওয়ার কথা। তার বদলে ট্যাঙ্কারের খালাসি কেন ওজন মাপতে গেলেন, তা স্পষ্ট নয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন