একই এলাকায় করের হার দু’রকম, অভিযোগ

অতীন ঘোষ বলেন, ‘‘কর কাঠামোয় ফারাক নিয়ে অভিযোগ জানাতে সোমবার আমার দফতরে এসেছিলেন শহরের বেশ কয়েক জন বাসিন্দা। ওঁদের বলেছি, পুর প্রশাসন বিষয়টা খতিয়ে দেখছে।’’

Advertisement

অনুপ চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:২২
Share:

একই রাস্তার উপরে দু’টি বাণিজ্যিক কমপ্লেক্স। একটির সম্পত্তিকর ধার্য হয়েছে প্রতি বর্গফুটে ১ টাকা ৮০ পয়সা। অন্যটির ক্ষেত্রে তা প্রতি বর্গফুটে ৬ টাকা ৮০ পয়সা। একই জায়গার দুই বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কর কাঠামোয় ধরা পড়েছে এমন ফারাক। সম্পত্তিকর নির্ধারণে এমন বৈষম্য ধরা পড়েছে গৃহস্থের বসতবাড়ির ক্ষেত্রেও। কলকাতা পুরসভায় চালু হওয়া এলাকাভিত্তিক কর (ইউনিট এরিয়া অ্যাসেসমেন্ট) নিয়ে এমনই বিস্তর অভিযোগ জমা পড়েছে। এই বৈষম্য কেন তৈরি হল, এ বার তার কারণ জানতে উদ্যোগী হচ্ছে পুর প্রশাসন। ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ বলেন, ‘‘কর কাঠামোয় ফারাক নিয়ে অভিযোগ জানাতে সোমবার আমার দফতরে এসেছিলেন শহরের বেশ কয়েক জন বাসিন্দা। ওঁদের বলেছি, পুর প্রশাসন বিষয়টা খতিয়ে দেখছে।’’

Advertisement

বছর দু’য়েক আগে কলকাতায় এলাকাভিত্তিক কর কাঠামো চালু হয়েছিল। তখনই বলা হয়, নতুন ব্যবস্থায় করের পরিমাণ সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ বাড়বে। কারও ক্ষেত্রে তা কমলে তা-ও ২০ শতাংশের মতোই কমবে। পুর আইন সংশোধন করে ওই ‘ক্যাপ ইন’ পদ্ধতি চালু করেছিল পুর প্রশাসন। সে সময়ে পুরসভার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, নতুন কর কাঠামো চালু হলেও পুরনো কর আদায় পদ্ধতি বহাল থাকবে। ধীরে ধীরে তা বন্ধ করা হবে। কিন্তু গত দু’বছরের হিসেবে দেখা গিয়েছে, মাত্র ২০ হাজার করদাতা নতুন পদ্ধতিতে যোগ দিয়েছেন। এ শহরে করদাতার সংখ্যা প্রায় সাড়ে সাত লক্ষ। অর্থাৎ, মোট করদাতার মাত্র ১২ শতাংশ নতুন পদ্ধতিতে নাম লিখিয়েছেন।

এলাকাভিত্তিক কর কাঠামোয় শহরবাসীর এই অনীহার কারণ কী, এ বার তারই খোঁজ করতে চান অতীনবাবুরা। প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের হাতে ছিল কর মূল্যায়ন দফতর। নতুন মেয়র হিসেবে চেয়ারে বসার পরে ফিরহাদ হাকিম ওই দায়িত্ব দিয়েছেন ডেপুটি মেয়রের হাতে। এখন দু’জনেই চান, বকেয়া করের টাকা পুরসভার ভাঁড়ারে তুলতে। যার পরিমাণ এখন প্রায় ৪৭০০ কোটি টাকা।

Advertisement

পুরসভা সূত্রের খবর, এলাকাভিত্তিক কর কাঠামো চালু হওয়ার পরে তার জটিলতা নিয়ে নানা প্রশ্ন ওঠে। এ নিয়ে পুরসভার পক্ষ থেকে কর মূল্যায়ন দফতরের আধিকারিকেরা বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলরকে বিষয়টি বোঝাতে কর্মশালা করেছেন। বুঝিয়ে বলা হয়েছে সাধারণ মানুষকেও। তবু সেই জটিলতা কাটানো যায়নি। এক সময়ে পুর প্রশাসন সিদ্ধান্ত নেয়, এই জটিলতা কাটাতে এজেন্সি নিয়োগ করা হবে। যারা সাধারণ মানুষের হয়ে এলাকাভিত্তিক কর কাঠামোর আবেদনপত্র পূরণ করে দেবে। শহরে মোট সাতটি এজেন্সিকেও নিয়োগ করে পুরসভা। অভিযোগ, তাতেও সুরাহা হয়নি। বরং পুর প্রশাসনকে শুনতে হয়েছে, কোনও কোনও এজেন্সি মোটা টাকা নিয়েছে আবেদনপত্র পূরণ করতে।

সম্প্রতি কর মূল্যায়ন দফতরের দায়িত্ব পেয়েই সে সব জানতে পেরেছেন অতীনবাবু। ওই সব এজেন্সি রাখা কতটা যুক্তিযুক্ত, এ বার তা নিয়েও ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে। তেমন হলে ওই সব এজেন্সি বাতিল করাও হতে পারে বলে সূত্রের খবর। সেই সঙ্গে প্রতিটি বরোয় অভিযোগ জানানোর জন্য বাক্স রাখা হবে। এলাকার বাসিন্দারা সেখানে তাঁদের বক্তব্য জানাতে পারবেন। কোন অফিসারের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ওই বাক্সে তা জানানোর সুযোগ থাকবে। অভিযোগকারীর পরিচয় কোনও ভাবেই প্রকাশ করা হবে না।

অতীনবাবু বলেন, ‘‘বিষয়টি নিয়ে মেয়রের পরামর্শ চাইব। এমনিতেই এলাকাভিত্তিক কর কাঠামো জটিল প্রক্রিয়া। মেয়র নিজেও তা বুঝেছেন। তা সরল করার কথাও জানিয়েছেন।’’ চলতি সপ্তাহেই এ নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে বলে জানান তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন