ট্যাক্সিতে বেহুঁশ তরুণী, রাতভর জাগলেন চালক

ছোট্ট মিনিকে দেখে নিজের মেয়ের কথা মনে পড়েছিল রবি ঠাকুরের ‘কাবুলিওয়ালা’ রহমতের। অনেকটা সে ভাবেই মধ্যরাতে ট্যাক্সিতে বেহুঁশ হয়ে যাওয়া তরুণীকে দেখে নিজের মেয়েদের মুখ দুটো ভেসে উঠেছিল মহম্মদ সোহরাবের চোখে। পুলিশের কাছে গিয়েও তাই নিশ্চিন্ত হতে পারেননি ওই প্রৌঢ়। সারা রাত ধরে হাসপাতালে ঠায় বসেছিলেন তরুণীর জ্ঞান ফেরার অপেক্ষায়।

Advertisement

অভীক বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০১৬ ০১:৩৭
Share:

মহম্মদ সোহরাব

ছোট্ট মিনিকে দেখে নিজের মেয়ের কথা মনে পড়েছিল রবি ঠাকুরের ‘কাবুলিওয়ালা’ রহমতের। অনেকটা সে ভাবেই মধ্যরাতে ট্যাক্সিতে বেহুঁশ হয়ে যাওয়া তরুণীকে দেখে নিজের মেয়েদের মুখ দুটো ভেসে উঠেছিল মহম্মদ সোহরাবের চোখে। পুলিশের কাছে গিয়েও তাই নিশ্চিন্ত হতে পারেননি ওই প্রৌঢ়। সারা রাত ধরে হাসপাতালে ঠায় বসেছিলেন তরুণীর জ্ঞান ফেরার অপেক্ষায়।

Advertisement

যা দেখে লালবাজারের শীর্ষ কর্তারা বলছেন, ‘‘সব ট্যাক্সিচালক ওঁর মতো হলে তো রাতের কলকাতার চেহারাটাই অন্য রকম হত।’’

পুলিশ জানায়, বুধবার রাত দে়ড়টা নাগাদ হোটেলে খাওয়া সেরে ট্যাক্সি চালিয়ে ধর্মতলায় ফিরছিলেন কড়েয়ার বাসিন্দা মহম্মদ সোহরাব। সে সময়ে হাত দেখিয়ে তাঁর ট্যাক্সিতে ওঠেন বছর তেইশের এক তরুণী। যাবেন ধর্মতলা। ধর্মতলায় আসার পরে সোহরাব তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘কোথায় যাবেন?’ দু’তিন বার জিজ্ঞাসা করেও উত্তর না পেয়ে তিনি ফিরে দেখেন, পিছনের সিটে বেঁহুশ হয়ে পড়ে ওই তরুণী।

Advertisement

হতভম্ব হয়ে যান সোহরাব। ট্যাক্সি নিয়ে চলে আসেন ধর্মতলায় টহলদারি গাড়ি নিয়ে দাঁড়ানো পুলিশের কাছে। তাঁকে সঙ্গে নিয়েই পুলিশ তরুণীকে শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে নিয়ে যায়। বৃহস্পতিবার সকালে জ্ঞান ফেরে ওই তরুণীর। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পারে, তিনি পার্ক সার্কাস এলাকার বাসিন্দা। বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে বেরিয়ে পথ ভুল করে ফেলেন। চিকিৎসকেরা জানান, অতিরিক্ত নেশা করেই বেহুঁশ হয়ে পড়েন তিনি। পুলিশ তরুণীর বাড়ির ঠিকানা জেনে পরিবারকে খবর দেয়। জানা গিয়েছে, বছরখানেক আগে ওই তরুণীর মা মারা গিয়েছেন। তিনি এখন মামার বাড়িতে থাকেন।

পুলিশ জানায়, তরুণীর জ্ঞান না ফেরা পর্যন্ত সারা রাত হাসপাতালেই জেগে বসেছিলেন সোহরাব। সকালে তরুণীর জ্ঞান ফেরার পরে তিনি হেয়ার স্ট্রিট থানায় গিয়ে পুরো ঘটনা লিপিবদ্ধ করান। সোহরাব জানান, কড়েয়ার মেসে থাকলেও বেশি রাত হলে ধর্মতলাতেই গাড়ি রেখে ফুটপাথে শুয়ে পড়েন তিনি। বুধবারও ঠিক করেন, ওই তরুণীকে নামিয়ে দিয়ে ফুটপাথেই শুয়ে পড়বেন। কিন্তু ওই ঘটনা সব ভাবনা বদলে দেয়।

সোহরাব জানান, তিনি মেসে থাকলেও তাঁর বাড়ি তিলজলায়। সেখানে তাঁর দুই মেয়ে ও এক ছেলে আছেন। সোহরাব বলেন, ‘‘মেয়েটিকে ওই অবস্থায় দেখে বেশ ঘাবড়ে যাই। বারবার নিজের মেয়ে দু’টোর মুখ ভেসে উঠছিল। কী করব, বুঝতে না পেরে পুলিশের কাছে নিয়ে যাই। তার পরেও ঠিক শান্তি পাচ্ছিলাম না। ওর ঠিকমতো চিকিৎসা হচ্ছে কি না, সে সম্পর্কে নিশ্চিত হতেই হাসপাতালে জেগে বসেছিলাম। ২৭ বছর ধরে ট্যাক্সি চালাচ্ছি। কোনওদিন এমন পরিস্থিতিতে পড়িনি। তবে ভবিষ্যতে এমন অবস্থায় পড়লেও তো আর যাত্রীকে ফেলে চলে যেতে পারব না!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন