অনিশ্চয়তার মধ্যেও স্কুল রক্ষার লড়াই

বিনা ব্যয়ে গ্রামে বেসরকারি স্কুলে ইংরেজি শিক্ষায় সন্তানদের শিক্ষিত করতে চেয়েছিলেন অনেকেই। ২০০৯ সালে ওই স্কুল তৈরি হওয়ার কয়েক বছরের মধ্যেই কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮ ০২:০৮
Share:

—প্রতীকী ছবি।

সরকারি স্কুলের পঠনপাঠনের উপরে ভরসা রাখতে পারেননি। আবার খেতমজুরের কাজ করেও সন্তানকে ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত করার স্বপ্ন দেখাও বন্ধ করতে পারেননি তাঁর। ফলত গ্রামের এক ‘রুগ্ন’ বেসরকারি স্কুলে পাঠিয়েছিলেন সন্তানদের। গত দু’ বছর সেই স্কুল মোটামুটি চলছে কলকাতার বাসিন্দা কয়েক জন বন্ধুর উদ্যোগে। কিন্তু ফের আর্থিক সমস্যা তৈরি হওয়া ওই স্কুলের ১০০ জন পড়ুয়ার লেখাপড়ার ব্যয় বহন করতে শহরবাসীর কাছে আবেদন করেছেন তাঁরা। তাতে সাড়াও মিলেছে। তবে প্রশ্ন থেকেই যায় এ ভাবে কত দিন?

Advertisement

বিষ্ণুপুরের পেদ্দা মৌজার মোরার গ্রাম পঞ্চায়েতে রয়েছে ওই স্কুল।

বিনা ব্যয়ে গ্রামে বেসরকারি স্কুলে ইংরেজি শিক্ষায় সন্তানদের শিক্ষিত করতে চেয়েছিলেন অনেকেই। ২০০৯ সালে ওই স্কুল তৈরি হওয়ার কয়েক বছরের মধ্যেই কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছিল। অভিযোগ, তৎকালীন কর্তৃপক্ষ তার পরে আর স্কুলটি চালাতে ততটা উদ্যোগী হননি। তার পরে ২০১৬ সালে মানিকতলার বাসিন্দা কয়েক জন বন্ধু স্কুলটি চালাতে এগিয়ে আসেন। তবে ফের আর্থিক সংকট শুরু হওয়ায় তাঁরা সোশ্যাল মিডিয়ায় লোকজনের সাহায্য চান। তাঁদের কেউ পেশায় চিকিৎসক।

Advertisement

কেউ বা আইনজীবী। কেউ অন্য পেশার পেশাদার। এখন ওই স্কুলে লোয়ার কেজি থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত প়ড়ানো হয়। মধ্যশিক্ষা পর্ষদের অন্তর্গত অন্য স্কুলের সহযোগিতায় পরীক্ষা দেয় পড়ুয়ারা।

স্থানীয় বাসিন্দা মদন হাঁসদা কিংবা খাদু সোরেনদের বক্তব্য, ‘‘সরকারি স্কুলেই প্রথমে সন্তানদের ভর্তি করেছিলাম। কিন্তু ক্লাস হয় না। ইংরেজি পড়ানো হয় না। এই স্কুলে লেখাপড়া ভালো হয়। আমাদের খরচা দিতে হয় না।’’

স্কুল কর্তৃপক্ষ জানান, বছরে ছাত্রছাত্রী পিছু খরচ আট হাজার টাকা। তবে আপাতত সদর্থক মনোভাব নিয়েই এগোতে চাইছেন সকলে।সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া কমলিনী দাসবিশ্বাসের কথায়, ‘‘বহুদিনের ইচ্ছে একটা বাচ্চার দায়িত্ব নেব। বয়স এবং আয়ের দিক থেকেই আটকে যাচ্ছিলাম। এত দিনে সম্ভব হচ্ছে।’’ফেসবুক দেখে এমন উদ্যোগে সাড়া দিয়ে এগিয়ে এসেছেন বাগুইআটির বাসিন্দা নবমিতা দত্তও। স্কুলের তরফে রজত মাইতি বলেন, ‘‘হতদরিদ্র পরিবারের ওই কচিকাঁচাদের জন্য আমরা যে ভাবতে পারি এটা জেনেই ভাল লাগছে।’’

সর্বশিক্ষা মিশনের তরফে জানানো হয়েছে সরকারি স্তরে আবেদন করলে ওই স্কুলকে সাহায্য দেওয়া হবে। মিশনের কলকাতার চেয়ারপার্সন কার্তিক মান্না বলেন, ‘‘আমরা সবাই রয়েছি। এই ধরনের উদ্যোগকে সব সময় স্বাগত।’’ তবে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সরকারি স্কুলে বিনা ব্যয়ে লেখাপড়া করার সব ব্যবস্থাই রয়েছে। তবে শিক্ষার প্রসারে বেসরকারি উদ্যোগ খারাপ নয়।’’

‘রুগ্ন’ স্কুলের দায়িত্ব নিয়ে বাঘের পিঠে সওয়ার হয়েছেন সেটা বুঝতেও পেরেও হাল ছাড়তে রাজি নন চিকিৎসক রজত মাইতি কিংবা আইনজীবী সমিত পোদ্দারেরা। তাঁদের কথায়, ‘‘শেষ দেখেই ছাড়ব। খেতে-পড়তে না পাওয়া মানুষগুলোকে আমরাই বলেছিলাম সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে। স্বপ্ন দেখিয়েছিলাম স্কুলে এলে ব়ড় হয়ে চাকরি করবে, মানুষ হবে। স্কুলেই দুপুরে খাওয়াও মিলবে। তাই স্কুল চালাবই।’’

কী ভাবে? এ ভাবে কি আজীবন অন্যের ‘দাক্ষিণ্য’ নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যৎ গড়া সম্ভব?

উদ্যোক্তাদের জবাব, ‘‘ উদ্দেশ্য সৎ হলে সবই সম্ভব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন