Hoogly

পাইকপাড়ায় ৪ তলার ফ্ল্যাট থেকে ঝাঁপ, মৃত্যু দাগী অপরাধীর, ফ্ল্যাট মালিক দাপুটে তৃণমূল নেতা

তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ জানতে পারে, সেন্টিয়া যে ফ্ল্যাটে ছিল সেটি মালদহের রতুয়ার জেলা পরিষদ সদস্য পায়েল খাতুনের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০২০ ২০:০৩
Share:

এই আবাসন থেকেই ঝাঁপ দেন আব্দুল হুসেন ওরফে সেন্টিয়া।

গভীর রাতে উত্তর কলকাতার একটি অভিজাত আবাসন থেকে ঝাঁপ মারল এক যুবক। তার পরই কেচো খুঁড়তে গিয়ে কেউটে! জানা গেল মৃত যুবক হুগলির কুখ্যাত অপরাধী। আর উত্তর কলকাতার যে আবাসনে সে ছিল, সেটি মালদহের জেলা পরিষদ সদস্য এবং স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ পায়েল খাতুনের।

Advertisement

শনিবার গভীর রাতে পাইক পাড়ার অভিজাত আবাসন কেভেন্টার নর্থের বাসিন্দাদের ঘুম ভাঙে ব্যপক গণ্ডগোলের আওয়াজে। আবাসনের নিরাপত্তা কর্মীরা দেখেন চারতলার একটি ফ্ল্যাট থেকে শোনা যাচ্ছে গন্ডগোলের আওয়াজ। সেখানে তাঁরা পৌঁছনোর আগেই দেখা যায়, ফ্ল্যাট থেকে মত্ত অবস্থায় বেরিয়ে আসছেন তিন যুবক। তারা মদের ঘোরে নিজেদের মধ্যে মারামারি করছেন। বোতল ভেঙে একজন আরেকজনেক দিকে ছুটে যাচ্ছেন।

পরিস্থিতি বেগতিক দেখে চিৎপুর থানায় খবর দেন আবাসনের নিরাপত্তা কর্মীরা। কয়েক মিনিটের মধ্যেই পুলিশ পৌঁছয়। পুলিশ দেখে ওই মত্ত যুবকদের মধ্যে একজন চারতলা থেকে হাতে একটা ব্যাগ নিয়ে কার্নিসে ঝাঁপ মেরে পালাতে যান। কিন্তু দেহের ভারসাম্য রাখতে না পেরে তিনি নীচে পড়ে যান। তাঁকে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে গেলে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়।

Advertisement

সেই মৃত্যুর তদন্ত করতে গিয়েই জানা যায়, মৃত যুবকের নাম আব্দুল হুসেন ওরফে সেন্টিয়া। হুগলি শিল্পাঞ্চলের কুখ্যাত অপরাধী। খুন, তোলাবাজি থেকে শুরু করে অন্তত ৬ টি মামলায় অভিযুক্ত। বর্তমানে ফেরার। ভদ্রেশ্বরের বাসিন্দা সেন্টিয়ার বিরুদ্ধে বেলঘড়িয়া থানা এলাকাতেও অভিযোগ রয়েছে। কামারহাটির একাধিক বোমাবাজি, গুলি চালানোর ঘটনায় অভিযুক্ত সে।

আরও পড়ুন: কোভিডে মৃত্যু ২ পুলিশ কর্মীর, সংক্রমণ বাঁচিয়ে পুজোর ভিড় সামলানো চ্যালেঞ্জ পুলিশের

তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ জানতে পারে, সেন্টিয়া যে ফ্ল্যাটে ছিল সেটি মালদহের রতুয়ার জেলা পরিষদ সদস্য পায়েল খাতুনের। তাঁর স্বামী ইয়াসিন শেখ প্রায়ই কলকাতায় ওই ফ্ল্যাটে এসে থাকেন। সেই সময় সেন্টিয়া তাঁর সঙ্গে থাকে। ফ্ল্যাটের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ এবং ঢোকা বেরনোর রেজিস্টার দেখে পুলিশ জানতে পারে, ১২ অক্টোবর মালদহ জেলা পরিষদের সরকারি গাড়ি চেপে ওই আবাসনে ঢোকেন ইয়াসিন। তাঁর সঙ্গে ছিল সেন্টিয়া।

আবাসনের রেজিস্টার অনুযায়ী ১৬ অক্টোবর রাতে বেরিয়ে যান ইয়াসিন। পুলিশ বিমানবন্দর থেকে জানতে পেরেছে, শনিবার রাত ৯টা ৪০ মিনিটের বিমানে জয়পুর গিয়েছেন। আর তাঁর ফ্ল্যাটে রেখে যান সেন্টিয়া-সহ তাঁর গাড়ির চালক এবং ফ্ল্যাট দেখাশোনা করার এক কর্মীকে।

আরও পড়ুন: ‘করোনার শিখর পেরিয়ে এসেছে দেশ, ফেব্রুয়ারিতে শেষ হবে অতিমারি’

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ইয়াসিন কলকাতা ছাড়ার পরই, সেন্টিয়া এবং ইয়াসিনের গাড়ির চালক সোনাগাছি থেকে দু’জন যৌন কর্মীকে নিয়ে আসে। ওই আড্ডায় হাজির হয় এক পুলিশ কর্মীও। তারপর তারা মদ্যপান শুরু করে। মত্ত অবস্থায় যৌনকর্মীদের নিয়ে গণ্ডগোল শুরু হয়ে যায় এদের। সেই গন্ডগোল দেখেই পুলিশকে খবর দেন আবাসনের নিরাপত্তা কর্মীরা।

যদিও, রবিবার ইয়াসিনকে ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন,‘‘সেন্টিয়াকে আমি জানি না। আমার ফ্ল্যাট তো তালাবন্ধ। আমাকে আবাসনের নিরাপত্তা কর্মীরা শনিবার রাতে একটা ঘটনার কথা জানায়। তবে আমি তাদের জানাই যে আমার ফ্ল্যাট তালাবন্ধ রয়েছে।” পুলিশ যদিও ইয়াসিনের ওই বয়ান গ্রহণযোগ্য নয় বলেই ইঙ্গিত দিচ্ছে। এক তদন্তকারী বলেন, ‘‘আবাসনের সিসিক্যামেরার ফুটেজ থেকে স্পষ্ট যে সেন্টিয়া কার সঙ্গে এসেছিল এবং কোথায় ছিল।” পায়েলকে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, এ বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। কারণ, তিনি শিলিগুড়িতে রয়েছেন।

মালদহ জেলা পুলিশ সূত্রে খবর, রতুয়ার বাহারলের বাসিন্দা ইয়াসিন শেখ জেলার অন্যতম জমি মাফিয়া হিসাবে পরিচিত। একাধিক বার মালদহ পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছে। অন্যদিকে চূঁচূড়া পুলিশ কমিশনারেট সূত্রে খবর, ভদ্রেশ্বরের সেন্টিয়া যে ইয়াসিনের আশ্রয়ে রয়েছে তা তাঁরা খবূর পেয়েছিলেন। তবে সেন্টিয়াকে যে নিজের অভিজাত ফ্ল্যাটে রাখার ব্যবস্থা করেছিলেন ইয়াসিন তা তাঁরা জানতেন না। কলকাতা পুলিশ সূত্রে খবর, ইয়াসিনকে তলব করা হবে। তিনি কী করে একজন দাগী আসামীকে আশ্রয় দিয়েছিলেন তা জানতে চাওয়া হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন