ল্যাপটপে রাশ, মার্কিন যাত্রায় বিরক্ত যাত্রীরা

নিউ জার্সির বাসিন্দা পিনাকী দত্ত ঠিকই করে রেখেছেন, এ বার কলকাতায় এলে এমিরেটসে আর নয়।

Advertisement

সুনন্দ ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৯ মার্চ ২০১৭ ০২:০৯
Share:

নিউ জার্সির বাসিন্দা পিনাকী দত্ত ঠিকই করে রেখেছেন, এ বার কলকাতায় এলে এমিরেটসে আর নয়।

Advertisement

‘‘এত ক্ষণের লম্বা উড়ানে ল্যাপটপ না থাকলে করবটা কী! দূরপাল্লার উড়ানে বসে হয় প্রোজেক্টের কাজ করি, নয় তো প্রেজেন্টেশেন তৈরি করি,’’ বললেন তিনি।

মার্কিন সরকারের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত— পশ্চিম এশিয়ার আটটি দেশ থেকে মার্কিন মুলুকের যে বিমান উড়বে, সেখানে কেবিনের মধ্যে মোবাইল ছাড়া যাত্রীরা আর কোনও বৈদ্যুতিন সামগ্রী সঙ্গে রাখতে পারবেন না। যার অর্থ, ল্যাপটপ বা ট্যাবলেট নিষিদ্ধ। হিউস্টন থেকে বিদ্যুৎ ঘোষ বললেন, ‘‘শুনলাম, ল্যাপটপের ভিতরে নাকি বিস্ফোরক রাখা থাকতে পারে বলে খবর এসেছে। তাই এই সিদ্ধান্ত। অনেক সময়ে সরাসরি উড়ান থাকে না। মাঝে অন্য বিমানবন্দরে বসেও অনেক ক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়। অতটা সময় ল্যাপটপ ছাড়া ভাবাই যায় না।’’

Advertisement

আর সেখানেই বিপাকে পড়েছেন কলকাতার যাত্রীরা। দিল্লি, মুম্বই থেকে অন্য উড়ানের বিকল্প থাকলেও কলকাতার হাতে বিকল্প নেই বেশি। সেই এমিরেটস, কাতার আর এতিহাদ। ইউরোপ হোক বা আমেরিকা— কলকাতা থেকে যাওয়ার প্রধান বিমান সংস্থা বলতে ওই তিনটিই। পশ্চিম আমেরিকার ক্ষেত্রে অনেকে সিঙ্গাপুর, হংকং ঘুরেও যান। কলকাতা থেকে সরাসরি উড়ান না আছে ইউরোপে, না আমেরিকায়। আগে যারা ছিল, তাদের অনেকেই এখান থেকে পরিষেবা গুটিয়ে চলে গিয়েছে। এখন টিমটিম করছে কয়েকটি। কলকাতা থেকে ইউরোপ বা আমেরিকা যেতে হলে হয় দিল্লি-মুম্বই হয়ে, নয় বিদেশের অন্য শহর ঘুরে যেতে হবে।

অগতির গতি পশ্চিম এশিয়ার ওই তিন বিমান সংস্থা। দুবাই, দোহা এবং আবু ধাবি হয়ে তাদের বিমান যায় মার্কিন মুলুকে। ওই তিনটি বিমানবন্দরই নিষেধের তালিকায় ঢুকে পড়েছে। ফলে, কলকাতা থেকে ওই তিন সংস্থার উড়ানে এখন কেউ আমেরিকা যেতে চাইলে তিনি সঙ্গে ল্যাপটপ বা ট্যাব রাখতে পারবেন না। তা অন্য মালপত্রের সঙ্গে বিমানের পেটের ভিতরে ঢুকিয়ে দিতে হবে।

কলকাতার বাসিন্দা রাজেশ গিদওয়ানি যেমন আগামী জুনে আমেরিকায় ছেলের কাছে যাবেন বলে আগে থেকে এমিরেটসের টিকিট কেটেছিলেন। কিন্তু, এ বার তা বাতিল করে দিল্লি হয়ে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানে যাবেন বলে মনস্থ করেছেন। বললেন, ‘‘কী দরকার বাবা! শুধু শুধু ঝামেলা। আমি লম্বা উড়ানে ল্যাপটপ ব্যবহার করি।’’

চিন্তিত কলকাতার ট্র্যাভেল এজেন্টরা। ট্র্যাভেল এজেন্ট ফেডারেশনের চেয়ারম্যান অনিল পঞ্জাবির কথায়, ‘‘ভয় ঢুকে গিয়েছে মানুষের মনে। কেউ বলছেন, ল্যাপটপ বিমানের পেটে চালান করে দেওয়ার পরে যদি হারিয়ে যায়! সেখানে এত তথ্য থাকে!’’ মার্কিন দেশে যে ভারতীয়‌েরা পাকাপাকি ভাবে বসবাস করেন, তাঁদের আত্মীয়েরা এখান থেকে সে দেশে বেড়াতে যাওয়ার জন্য এই সময়টা বেছে নেন বলে অনিল জানিয়েছেন। চিন্তিত বয়স্ক যাত্রী এসে প্রশ্ন করছেন, কোনও বিপদ আঁচ করেই তো ওই সব দেশ থেকে বিমানের ভিতরে ল্যাপটপ নিষিদ্ধ করা হয়েছে, তাই না?

আমেরিকার বাসিন্দা রানা রায় জানিয়েছেন, বাচ্চাদের নিয়ে যাঁরা যাতায়াত করেন, তাঁরাও সমস্যায় পড়েছেন। এই দূরপাল্লার উড়ানে বাচ্চাদের শান্ত রাখতে ট্যাব একটা অস্ত্র হিসেবে কাজ করে। এখন ট্যাব ব্যবহার করতে না পারলে এত ক্ষণের উড়ানে বাচ্চাদের ব্যস্ত রাখাটাই সমস্যার হবে।

এখনও অবস্থা ততটা খারাপ হয়নি বলে দাবি এমিরেটস ও এতিহাদের। কাতার বিমান সংস্থার এক কর্তার কথায়, ‘‘ভারতের অন্য শহর থেকে অনেকে উড়ান বাতিল করছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন