যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক শ্লীলতাহানির ঘটনায় উপাচার্যকে যে অভিযোগ জানানো হয়েছে সেই অভিযোগপত্র ফেসবুকে পোস্ট করে দেওয়ায় ক্ষুব্ধ উপাচার্য সুরঞ্জন দাস। পরে উপাচার্যের আপত্তিতে সেই অভিযোগপত্র ফেসবুক থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়।
স্নাতক স্তরের কলা বিভাগের এক ছাত্রীর শ্লীলতাহানির অভিযোগ ওঠে কলা বিভাগেরই স্নাতকোত্তর স্তরের এক ছাত্রের বিরুদ্ধে। সোমবার বিষয়টি নিয়ে ওই ছাত্রী প্রথমে ফেসবুকে লেখেন। তার পরে উপাচার্যের কাছে তাঁর অভিযোগপত্র জমা দেন। উপাচার্য জানিয়েছিলেন, বিষয়টি
তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনাল কমপ্লেনটস কমিটিতে (আইসিসি) পাঠিয়ে দেবেন। তবে উপাচার্য আইসিসি-তে চিঠি পাঠানোর আগেই ওই চিঠি ছড়িয়ে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়। এই ঘটনায় বিস্মিত উপাচার্য মঙ্গলবার বলেন, ‘‘আমরা ছাত্রছাত্রীদের সব রকম সাহায্যের চেষ্টা করছি। কিন্তু এই কাজ অত্যন্ত অনৈতিক এবং বেআইনি। কর্তৃপক্ষের উপরে পড়ুয়ারা যদি আস্থা না রাখতে পারেন তা খুবই দুর্ভাগ্যজনক হবে। আইসিসি-র তদন্তে গোপনীয়তা রাখাটা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ ক্ষেত্রে গোপনীয়তা ভঙ্গ হল।’’ তবে অভিযোগকারী ছাত্রী বলেন, ‘‘ওই অভিযোগপত্র উপাচার্যের কথায় ফেসবুক থেকে সরিয়ে দিয়েছি। কিন্তু সুবিচার না পেলে এর চেয়ে বেশি প্রচার চালানো হবে।’’
এ দিন আরও চার ছাত্রী ওই ছাত্রের বিরুদ্ধে উপাচার্যের কাছে শ্লীলতাহানির অভিযোগ জানিয়েছেন। উপাচার্য জানান, সব ক’টি অভিযোগই তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিসি-তে পাঠিয়েছেন। আইনানুগ তদন্ত হবে। তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে এ দিনই কলা বিভাগের ছাত্র সংসদ উপাচার্যকে যে স্মারকলিপি দিয়েছে, তাতে অতীতে বিশ্ববিদ্যালয়ে যে সব যৌন নিগ্রহের ঘটনা ঘটেছে তার যথাযথ তদন্ত হয়নি বলেই অভিযোগ করা হয়েছে। স্নাতকোত্তর স্তরের ওই ছাত্রের বিষয়ে সাত দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করার দাবি জানিয়েছে কলা বিভাগের ছাত্র সংসদ। বলা হয়েছে, অভিযুক্ত ছাত্রের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষের আর দেড় মাস বাকি। এর মধ্যেই ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
এ দিকে, উপাচার্যকে দেওয়া অভিযোগপত্র সোশ্যাল মিডিয়ায় চলে যাওয়ার বিষয়ে কলা বিভাগের ছাত্র সংসদের চেয়ারপার্সন সোমাশ্রী চৌধুরী বলেন, ‘‘যিনি শ্লীলতাহানির অভিযোগ করেছেন, তিনি নিজেই উপাচার্যকে দেওয়া অভিযোগপত্র ফেসবুকে
পোস্ট করেছেন। এটা তাঁর ব্যক্তিগত বিষয়।’’ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি জুটা-র সাধারণ সম্পাদক নীলাঞ্জনা গুপ্ত অবশ্য মনে করেন ক্যাম্পাসের মধ্যে ঘটনা ঘটলে কর্তৃপক্ষের উপরে আস্থা রাখা বাঞ্ছনীয়। নিয়ম হল আইসিসি-র কাছে কোনও অভিযোগ গেলে সে বিষয়ে কখনওই আইসিসি-র সদস্যেরা বাইরে কিছু বলতে পারেন না। পাশাপাশি ধরেই নেওয়া হয় অভিযোগকারী এবং অভিযুক্তের পক্ষ থেকেও বিষয়টি বাইরে যাবে না। তিনি বলেন, ‘‘সিস্টেমের উপরে আস্থা রাখা প্রয়োজন। যদি কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা না নেন তা হলে তো অন্য পথ খোলা থাকে।’’