ক্রমশ তাঁদের তদন্ত গুটিয়ে আনছেন বিবেকানন্দ রোড উড়ালপুলের তদন্তকারীরা। উড়ালপুলের ৪০ নম্বর স্তম্ভটিকে পাখির চোখ করে এখন এগোতে চাইছেন তাঁরা।
প্রথম দিন ঘটনাস্থলে গিয়েই ৪০ নম্বর স্তম্ভটিকে বিশেষ ভাবে পর্যবেক্ষণ করে রাজ্য সরকারের উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি। নবান্ন সূত্রে খবর, ৩১ মার্চ উড়ালপুলের নির্মীয়মান ১০০ মিটার অশ ভেঙে পড়ার কারণ হিসেবে ৪০ নম্বর স্তম্ভের অক্ষমতাকেই মূলত দায়ী করেছেন আইআইটি কানপুরের তিন বিশেষজ্ঞ এবং রাজ্য সরকারের ইঞ্জিনিয়ারেরা।
নবান্ন সূত্রে খবর, বিশেষজ্ঞদের মনে হয়েছে, কোনও কারণে ৪০ নম্বর স্তম্ভটি তার উপরে তৈরি কাঠামো এবং ঢালাইয়ের চাপ সহ্য করতে পারেনি। এর কারণ হিসেবে চারটি বিষয়ে জোর দিচ্ছেন তদন্তকারীরা। (১) ৪০ নম্বর স্তম্ভের নকশাতেই কোনও গলদ ছিল কি না, (২) নকশা যথাযথ থাকলেও তা মেনে স্তম্ভ তৈরি হয়েছে কি না, (৩) স্তম্ভ তৈরিতে যে ইস্পাত ব্যবহার করা হয়েছে তা ঠিক মানের কি না এবং (৪) ম্তম্ভের কোনও অংশে কোনও খুঁত মেরামতি হয়ে থাকলে তা ঠিক ভাবে সারানো হয়েছিল কি না। খোঁজ নেওয়া হচ্ছে, কোন সংস্থা থেকে ইস্পাত কেনা হয়েছিল। ইতিমধ্যেই নির্মাতা সংস্থার গুদাম থেকে সংগ্রহ করা ইস্পাতের নমুনার মান খতিয়ে দেখতে পরীক্ষাগারেও পাঠানো হয়েছে।
৪০ নম্বর স্তম্ভটি নিয়ে যে সব প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, কেএমডিএ-র কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসে বিশেষজ্ঞেরা তার জবাব চাইবেন বলে নবান্ন সূত্রে খবর। কাল, বুধবার সল্টলেকে কেএমডিএ অফিসে য়াওয়ার কথা তদন্ত কমিটির সদস্যদের। এখনও পর্যন্ত বিবেকানন্দ উড়ালপুলের মূল নকশাটি হাতে পাননি বিশেষজ্ঞেরা। তা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন খোদ রাজ্যের মুখ্য সচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়ও। কেএমডিএ সূত্রে খবর, বুধবার ওই উড়ালপুলের বেশ কিছু নকশা বিশেষজ্ঞদের হাতে তুলে দেওয়া হবে। ওই দিনের বৈঠকেই কেএমডিএ-র অফিসারেরা তদন্ত কমিটির সদস্যদের সব প্রশ্নের জবাব দেওয়ার চেষ্টা করবেন। তাঁদের প্রশ্নের জবাব পেয়ে গেলে আর দুই সপ্তাহের মধ্যেই তদন্ত কমিটি তাদের রিপোর্ট নবান্নে জমা দেবে বলেই সূত্রের খবর।
৩১ মার্চের উড়ালপুল ভেঙে পড়ার ঘটনায় ২৭ জনের মৃত্যুর দায় অবশ্য প্রশাসনের উপরেই চাপিয়েছে তদন্ত কমিটি। নবান্নের এক কর্তা বলেন, ৩০ মার্চ রাতে যে ঢালাই শুরু হয় তা শেষ হতে ৩১ মার্চের সকাল হয়ে যায়। কিন্তু পোস্তার ওই ঘিঞ্জি এলাকায় ঢালাইয়ের সময়ে কেন সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হল না, সে প্রশ্ন তুলেছেন তদন্তকারীরা। তাঁদের প্রশ্ন, ঢালাইয়ের সময়েই কেন গাড়ি ছেড়ে দেওয়া হল? এ নিয়ে পুলিশ প্রশাসনের কর্তাদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে বলে নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে।