গিরিশ ভবনের প্রতিমা।— নিজস্ব চিত্র
দুর্গাপুজো, কালীপুজোর মতোই আকর্ষণীয় বনেদি বাড়ির জগদ্ধাত্রী পুজো। তেমনই কিছু পুজোর হদিস।
সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবার (আটচালা বাড়ি, বড়িশা): পুজোর শুরু ১৯৬৬ সালে। দিনে তিন বার পুজো হয়। প্রতিমা ডাকের সাজে। ভোগে থাকে খিচুড়ি, পোলাও, সাদা ভাত, ভাজা, মরসুমি আনাজের তরকারি ও মাছ।
গিরিশ ভবন (ভবানীপুর): প্রায় ২০০ বছর আগে পুজো শুরু করেন কালাচাঁদ মুখোপাধ্যায়। জগদ্ধাত্রী পুজোয় এই বাড়ির ঐতিহ্য যাত্রাপালা। এখানে অভিনয় করেছেন গিরিশচন্দ্র ঘোষ, উত্তমকুমার। এখন যাত্রা হয় সন্ধ্যায়। পরিবারের সদস্যরা অভিনয় করেন। প্রতিমাকে বেনারসি শাড়ি ও সোনা-রুপোর গয়না পরানো হয়। খিচুড়ি, পোলাও, লুচি, ভাজা ইত্যাদি ভোগে দেওয়া হয়।
রানি রাসমণির বাড়ি (জানবাজার): ১৮২০ নাগাদ পুজোর শুরু করেন প্রীতরাম দাস। আগে বীরভূম থেকে শিল্পীরা এসে প্রতিমা গড়তেন। এখন প্রতিমা আসে কুমোরটুলি থেকে। সাবেক প্রতিমা।
ভট্টাচার্যবাড়ি (তালতলা): পুজোর সূচনা তারকেশ্বরের বৈকুণ্ঠপুর গ্রামে। পরবর্তী কালে তালতলার বাড়িতে। ডাকের সাজের প্রতিমার চালিতে থাকে পট। তিনবার তিন রকম ভোগ নিবেদন করা হয়। প্রথম পুজোয় সাদা ভাত, শুক্তো, ভাজা, খিচুড়ি। দ্বিতীয় পুজোয় লুচি, এবং তৃতীয় পুজোয় পোলাও নিবেদন করা হয়। দ্বিতীয় পুজোয় নিবেদন করা হয় ১০৮টি পদ্ম ও প্রদীপ।
মতিলালবাড়ি (বউবাজার): দু’শো বছরেরও বেশি পুরনো পুজোর শুরু করেন বিশ্বনাথ মতিলাল। সিংহাসনে দেবীর অধিষ্ঠান। প্রতিমাকে পরানো হয় বেনারসি। ঘোটকাকৃতির সিংহ থাকে লম্বালম্বি। পুজোয় ধুনো পোড়ানো এবং কনকাঞ্জলি আজও হয়।
ছাতুবাবু-লাটুবাবুর বাড়ি (বিডন স্ট্রিট): ১৭৮০ সালে রামদুলাল দে (সরকার) পুজো শুরু করেন। কাঠের সিংহাসনে দেবীর অধিষ্ঠান। ডাকের সাজে অতসী ফুলের রঙের প্রতিমা। গোলাকৃতি চালি কাগজের। তন্ত্র মতে ত্রিসন্ধ্যা দেবীর পুজো হয়। প্রথম পুজোয় চালকুমড়ো ও আখ বলি হয়। দ্বিতীয় পুজোয় কুমারী পুজো এবং দ্বিতীয় ও তৃতীয় পুজোর সন্ধিক্ষণে ১০৮টি রুপোর প্রদীপ উত্সর্গ করা হয়। নৈবেদ্যে থাকে ফলমূল, সন্দেশ, দই। ঘিয়ে ভাজা লুচি, নুন ছাড়া আলু, পটল ও বেগুনভাজা, নাড়ু, সন্দেশ ইত্যাদি দিয়ে ভোগ সাজানো হয়।
দুর্গাচরণ মিত্রের বাড়ি (দর্জিপাড়া): আড়াইশো বছরেরও বেশি সময় ধরে দেবী জগদ্ধাত্রীর পুজো হচ্ছে এই বাড়িতে। সাবেক ডাকের সাজের প্রতিমা। প্রতিমা ডান পায়ের উপর বাঁ পা মুড়ে, ঘোটকমুখী সিংহের উপর। ইষ্ট দেবী বলে জগদ্ধাত্রীকে, তিরকাঠি দিয়ে এখানে ঘেরা হয় না। এখানে দেবীর অর্ঘ্য বাঁধা হয় কলাপাতায়।
বি কে পালের বাড়ি (বেনিয়াটোলা স্ট্রিট): দেবীর দু’পাশে থাকেন চার সখী। দু’পা মুড়ে সিংহের উপর প্রতিমার অবস্থান। ১৯০০ সালে পুজো শুরু করেন বটকৃষ্ণ পাল। দিনে তিন বার
পুজো ছাড়াও হয় সন্ধিপুজো। তাতে আধ মণ চালের নৈবেদ্য, গোটা ফল, ১০৮ পদ্ম ও প্রদীপ নিবেদন হয়। সন্ধিপুজোয় আজও ব্যবহৃত হয় রুপোর বাসন। ভোগে থাকে লুচি, মিহিদানা এবং সন্দেশ। সিংহের গায়ে আজও লাগানো হয় আকন্দ তুলোর কোয়া। বিসর্জনের সময় শোভাযাত্রা আরও এক ঐতিহ্য।
খেলাতচন্দ্র ঘোষের বাড়ি (পাথুরিয়াঘাটা স্ট্রিট): ১৮৪২ সালে পুজো শুরু করেন খেলাতচন্দ্র ঘোষ। ডাকের সাজের সাবেক বাংলা রীতির প্রতিমার পিছনে থাকে সূর্যাকৃতি তামার চালি। এখানে দেবীর বাহন পৌরাণিক সিংহ। দেবীর ডান দিকে থাকে নারদ, বাঁ দিকে থাকে নীলকণ্ঠ ভৈরবের মূর্তি। এক দিনে তিনবার পুজো ছাড়াও রাজসিক ভাবে হয় সন্ধিপুজো। এ ছাড়াও হয় কনকাঞ্জলি ও কুমারীপুজো।