Dengue

ডেঙ্গি-জর্জর পাড়ায় ফের জমছে জল

তাঁদের বক্তব্য, বৃষ্টি হলেই তো পরিত্যক্ত জমিতে জল জমবে। জল জমবে চৌবাচ্চা এবং ডোবায়।

Advertisement

আর্যভট্ট খান

শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০১৭ ০২:৩২
Share:

জল-আতঙ্ক: দমদম ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় জমা জল। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

গত কয়েক দিন ধরে দমদম এলাকায় ডেঙ্গির হানা ছিল অপেক্ষাকৃত কম। কিন্তু মঙ্গলবার রাত থেকে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় ফের শঙ্কিত এলাকাবাসী। তাঁদের একটাই প্রশ্ন, ডেঙ্গির জীবাণুবাহী মশা আবার পুরনো মেজাজ ফিরে পাবে না তো?

Advertisement

অক্টোবর মাসের শেষে দক্ষিণ দমদম পুরসভায় ডেঙ্গি রোগীর সংখ্যা যে অন্য পুরসভার তুলনায় অনেক বেশি ছিল, তা দেখা গিয়েছে পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের করা এক সমীক্ষাতেই। সমীক্ষা দেখিয়েছে, অন্তত ২২টি বাড়িতে দু’জনের বেশি ডেঙ্গি রোগীর খোঁজ পাওয়া গিয়েছে। সেখানে দক্ষিণ দমদম সংলগ্ন অন্য পুরসভায় এমন বাড়ি কোথাও ৫টি, কোথাও ৪টি, কোথাও বা ৮টি। নভেম্বরের মাঝামাঝি দক্ষিণ দমদম পুরসভায় রোগীর সংখ্যা কিছু কমলেও বুধবার সকাল থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টিতে আবার বাসিন্দাদের মনে দেখা দিয়েছে ভয়। তাঁদের বক্তব্য, বৃষ্টি হলেই তো পরিত্যক্ত জমিতে জল জমবে। জল জমবে চৌবাচ্চা এবং ডোবায়।

আতঙ্ক ছড়িয়েছে দমদমের মধুগড় থেকে শুরু করে সাতগাছি, নাগেরবাজার, মল রোড, এম সি গার্ডেন রোড, প্রাইভেট রোড, পাতিপুকুর এলাকায়। যেমন, পূর্ব সিঁথির মধুগড়ের ফকির ঘোষ পাড়ায় রাস্তার ধারে শুরু হয়েছে বহুতল নির্মাণের কাজ। ওখানে মাটির গর্তে বৃষ্টির জল জমতে দেখে আতঙ্কিত স্থানীয়েরা। এক বাসিন্দা বিবেক কর বলেন, ‘‘ছোট ছোট এমন জমিই মশার প্রধান উৎসস্থল। এই জমা জল পরিষ্কার না করলে ফের ডেঙ্গির প্রকোপ বাড়বে।’’ বৃষ্টিতে কিছু অঞ্চলে যে জল জমেছে, তা মেনে নিয়েছেন কাউন্সিলর প্রবীর কর। তিনি বলেন, ‘‘শুক্রবার থেকে ফের পুরসভার দল রাস্তায় নামবে। কয়েকটি অঞ্চল চিহ্নিত করেছি। সেখানে গিয়ে পাম্প দিয়ে জল তুলে মোবিল ছিটিয়ে দেওয়া হবে।’’

Advertisement

ছবিটা অনেকটা একই দমদমের সাতগাছি মোড়ে। সেখানে ডেঙ্গির প্রকোপ পুরোপুরি কাটেনি। কয়েক জন এখনও ভর্তি নিকটবর্তী হাসপাতালে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, পুরকর্মীরা শুধু ব্লিচিং ছড়িয়েই দায় সারছেন। নতুন করে কোথায় বৃষ্টির জল জমছে, তা তাঁরা খতিয়ে দেখছেন না। বাসিন্দাদের বক্তব্য, এ ব্যাপারে পুরসভার কর্মীদের আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত।

সেই সচেতনতার অভাব যে পুর প্রশাসনের মধ্যে স্পষ্ট, তা বোঝা গেল ভিআইপি রোড সংলগ্ন বাঙুরের এক আবাসনে গিয়েই। আবাসনের নীচে দেখা গেল, মাঝারি মাপের একটা চৌবাচ্চা বৃষ্টির জলে ভর্তি। ওই আবাসনের পাশের আবাসনটির কেয়ারটেকার শুভঙ্কর দাস বলেন, ‘‘আমার স্ত্রী, দুই ছেলে-মেয়ের ডেঙ্গি হয়েছিল। ওই চৌবাচ্চাই মশার উৎসস্থল। ফের বৃষ্টির জলে চৌবাচ্চা ভরে ওঠায় আমরা আতঙ্কিত।’’

শুধু আবাসন বা বাড়ির পাশেই নয়, জল জমেছে দমদম পুর হাসপাতাল চত্বরেও। হাসপাতালের পিছনে ডাঁই করে ফেলে রাখা পরিত্যক্ত নানা জিনিসপত্র। তার মধ্যে রয়েছে হাসপাতালের বেড থেকে শুরু করে চেয়ার, এমনকী টেবিলও। ওই আবর্জনার স্তূপের পাশেই রয়েছে মেল ওয়ার্ড। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষই জানালেন, ওই ওয়ার্ডের অধিকাংশ রোগীই ডেঙ্গিতে আক্রান্ত।

এ রকম জায়গায় জমে থাকা পরিষ্কার জমা জলই যে ডেঙ্গির মশার আদর্শ স্থান তা জানা সত্ত্বেও কেন তা পরিষ্কার করা হয়নি? হাসপাতালের ইন-চার্জ সমীর ঘোষ দস্তিদার বলেন, ‘‘হাসপাতালে নির্মাণকাজ চলছে। তাই কিছু পুরনো জিনিস পিছনে রেখে দেওয়া হয়েছে। ওখানে জমে থাকা জল দ্রুত পরিষ্কার করা হবে।’’

আবার, ফেলে দেওয়া টায়ারের মধ্যে জল জমে থাকতে দেখা গিয়েছে দমদম পুরসভার সামনেই। এ নিয়ে পুর চেয়ারম্যান হরীন্দ্র সিংহ বলেন, ‘‘পুরসভার সামনে জঞ্জাল বা জল জমলেই পরিষ্কার করে দেওয়া হয়। বুধবারের বৃষ্টি নিয়ে আমরাও চিন্তিত। কোথাও কোথায় জল জমে আছে, সে সব জায়গা চিহ্নিত করে পাম্প দিয়ে জল তুলে ফেলা হবে।’’ সাধারণ মানুষের প্রতি দমদম পুরসভার চেয়ারম্যানের আবেদন, ‘‘বৃষ্টিতে কোথাও জল জমতে দেখলেই তা পরিষ্কার করে ফেলুন। কোনওভাবেই জল জমতে দেবেন না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement