Wall capturing

অধিকারের প্রশ্ন উড়িয়ে অব্যাহত ‘দেওয়াল দখল সংস্কৃতি’

আবার এক নির্বাচনের মুখে দাঁড়িয়ে ওই দেওয়াল কি ফের গন্ডগোলের কেন্দ্রে?

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০২১ ০৭:১৮
Share:

দেওয়ালে লেখার সুযোগই নেই কসবার সেই বাড়িতে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

গত লোকসভা নির্বাচনের আগে দেওয়াল লিখন নিয়ে প্রবল গন্ডগোল হয়েছিল কসবার এন কে ঘোষাল রোডে। বাড়ির দেওয়াল সিপিএমকে দিতে চেয়েছিলেন বাড়ির মালিক, বৃদ্ধা দেবযানী গুহ। কিন্তু তাঁর কলেজ পড়ুয়া মেয়ে দিয়ার পছন্দ ছিল তৃণমূল। থানায় সিপিএমের তরফে মায়ের স্বাক্ষর করা দেওয়াল ব্যবহারের অনুমতিপত্র দেখালে, তৃণমূল পাল্টা মেয়ের সই করা কাগজ দেখিয়েছিল। দুই প্রজন্মের ব্যক্তিগত পছন্দের ভিন্নতার এই লড়াই গড়িয়েছিল কসবা থানা পর্যন্ত। শেষে দেবযানীদেবীর পক্ষেই রায় দিয়েছিল পুলিশ। জানানো হয়েছিল, বাড়ির উপরে মেয়ের চেয়ে মায়েরই বেশি অধিকার। কারণ, তিনিই বাড়িটির মালিক।

Advertisement

আবার এক নির্বাচনের মুখে দাঁড়িয়ে ওই দেওয়াল কি ফের গন্ডগোলের কেন্দ্রে? খোঁজ করে জানা গেল, বাড়িটির মালিকানা বদলেছে। গত বছরের জানুয়ারিতে মৃত্যু হয়েছে দেবযানীদেবীর। বাবার আগেই মৃত্যু হয়েছিল, ফলে মেয়েই বাড়ির মালিক। দুই প্রজন্মের মতের পার্থক্য হওয়ার আর সুযোগ নেই। তবে ওই দেওয়াল এ বারও পাওয়া হচ্ছে না তৃণমূলের। সেই পথ নিজেই বন্ধ করে দিয়েছেন দিয়া। ফোনে তিনি বললেন, ‘‘রাজনৈতিক পছন্দের পার্থক্য ছিল যে মানুষটার সঙ্গে, তিনিই তো আর নেই। বাড়ি রং করানোর সময়ে দেওয়ালগুলো সিমেন্ট দিয়ে এমন করিয়ে নিয়েছি যে কোনও তুলিই তাতে আঁচড় কেটে লাভ করতে পারবে না।’’

কসবার ওই দেওয়াল ঘিরে এ বার লড়াই না থাকলেও শহরের পাড়ায় পাড়ায় দেওয়াল দখলের লড়াই এই মুহূর্তে চরমে উঠেছে বলে অভিযোগ। প্রায় প্রতি রাতেই দেওয়াল ঘিরে রাজনৈতিক সংঘর্ষের জের থানা পর্যন্ত পৌঁছচ্ছে। প্রার্থী তালিকা প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে যা আরও বাড়ছে। কলকাতা পুলিশ সূত্রের খবর, গত ১০ দিনে কলকাতা পুলিশের এলাকায় দেওয়াল দখলের লড়াই ঘিরে রুজু হওয়া এমন অভিযোগের সংখ্যা ৩০০ ছাড়িয়ে গিয়েছে। এর মধ্যে সরাসরি মামলা রুজু হয়েছে ১৩৫টি ক্ষেত্রে। বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত হিসেব, এমন অভিযোগের জেরে গ্রেফতার হতে হয়েছে ৩২ জনকে। যদিও সব ক্ষেত্রেই মামলা হয়েছে জামিনযোগ্য ধারায়। আটক হয়েছেন প্রায় ৮০ জন।

Advertisement

যাদবপুরের শ্রী কলোনির একটি ঘরের দেওয়ালে লেখা নিয়ে গন্ডগোল আবার অন্য মাত্রা পেয়েছে। ওই ঘরের বাসিন্দা, বৃদ্ধা মায়ারানি ঘোষ তাঁর বাড়ির দেওয়াল কংগ্রেসকে দিতে চান। কিন্তু বাম-কংগ্রেস জোট হওয়ায় এক রাতে কয়েক জন সিপিএম কর্মী গিয়ে দেওয়ালটিতে সাদা রং করে একাংশে দলীয় চিহ্ন এঁকে এসেছিলেন। ঠিক ছিল, প্রার্থীর নাম ঘোষণা হলে ওই দেওয়ালে লেখা হবে। কিন্তু পরের দিন সকালে গিয়ে সিপিএম কর্মীরা দেখেন, ভাতের মাড় ঢেলে দেওয়াল থেকে সিপিএমের চিহ্ন ধুয়ে দিয়েছেন বৃদ্ধা। প্রথমে তাঁদের সন্দেহ গিয়ে পড়ে অন্য রাজনৈতিক দলের উপরে। দু’দলের গোলমাল বচসা থেকে হাতাহাতিতে গড়ায়। খবর যায় যাদবপুর থানায়। পুলিশ গেলে অশীতিপর বৃদ্ধা বেরিয়ে এসে ঘোষণা করেন, ‘‘জোট বুঝিনা। কংগ্রেস লিখলে দেওয়াল দেব, নয়তো নয়।’’ বুধবার ওই কেন্দ্রে বামেদের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়ে গেলেও বৃদ্ধার সিদ্ধান্ত বদলায়নি।

মানিকতলা গড়পার এলাকায় কয়েক জন নিজেদের বিজেপি কর্মী পরিচয় দিয়ে অভিযোগ করলেন, একটি বাড়ির মালিক তাঁদের দেওয়াল ব্যবহারের অনুমতি দিয়ে রেখেছিলেন। কিন্তু দেওয়াল দখল হয়ে গিয়েছে। তাঁদের বলা হয়েছে, ‘‘তোদের প্রার্থীর নামই যখন চূড়ান্ত হয়নি, দেওয়াল আটকে রেখে কী হবে?’’ বাড়ির মালিক তারাপদ ঘোষেরও একই বক্তব্য। তিনি বলেন, ‘‘আমার একটাই কথা, প্রথমে যিনি আসবেন তাঁকেই দেওয়াল দেব। যাঁরা প্রার্থীর নাম নিয়ে এসে কথা বলেছেন, তাঁদের দেওয়াল দিয়ে দিয়েছি।’’ দেওয়াল দখলের একই রকম অভিযোগ ভবানীপুর, বেলেঘাটা, কাশীপুর-বেলগাছিয়ার মতো কেন্দ্রেও। সেখানেও চলছে ‘প্রার্থীর নাম হাতে আছে যাদের, দেওয়াল তাদের’, হিসেব। বাড়ির মালিকের পছন্দ-অপছন্দও বহু ক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ।

জোর করে দেওয়ালে লেখা নিয়ে অবশ্য স্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে নির্বাচন কমিশনের। কোনও দেওয়াল ব্যবহার করার জন্য রাজনৈতিক দলগুলির বাড়ির মালিকের থেকে লিখিত অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক। দেওয়াল লিখনের অন্তত ১০ দিন আগে এই অনুমতি নিতে হয়। যে দল দেওয়াল ব্যবহার করল, প্রচারপর্ব মিটলে লিখন মুছে দেওয়ার দায়িত্ব তাদেরই। এর অন্যথা হলে বা দেওয়াল দখল নিয়ে অভিযোগ থাকলে বাড়ির মালিক জেলার রিটার্নিং অফিসারের কাছে অভিযোগ জানাতে পারেন। কিন্তু বাস্তবে এই বিধির কিছুই মানা হয় না বলে অভিযোগ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন