BJP

রঙ্গ ভিডিয়োয় ‘বিদ্ধ’ রাজনীতির দাদা-দিদিরা

ব্রিগেডে বিজেপি-র সমাবেশের ঠিক আগে শনিবারই নেট-রাজ্যে ছড়িয়ে পড়েছে একটি ভিডিয়ো।

Advertisement

ঋজু বসু

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০২১ ০৬:০৯
Share:

র‌্যাপ ও নাচের ছন্দে মেতেছেন বাঙালির চেনা কাকু, দিদিমারা। পনিটেল বাঁধা শহুরে যুবক, নাচের পোশাকে সুবেশ পুরুষ বা হিজাবধারী দৃপ্ত নারীও। ঝকঝকে এডিটিংয়ের ভিডিয়োয় গানে-গানে পিএম কেয়ারের তহবিল বা পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যুরও হিসেব চাওয়া হচ্ছে। নীরব-মেহুলদের চুরি, ইউএপিএ-র জুলুম কিংবা গরুর দুধ নিয়ে গবেষণা সংক্রান্ত প্রশ্নও মিশে যাচ্ছে ২০২১-এর ভোট-আবহে।

Advertisement

ব্রিগেডে বিজেপি-র সমাবেশের ঠিক আগে শনিবারই নেট-রাজ্যে ছড়িয়ে পড়েছে একটি ভিডিয়ো। ‘ফ্যাসিস্ট আরএসএস-বিজেপি-র বিরুদ্ধে বাংলা’ নামের একটি মঞ্চ ‘কলকাতা চলো’ মহামিছিলের ডাক দিয়েছে বুধবার, ১০ মার্চ। রামলীলা ময়দান থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত মিছিলের আগে এই ‘মিউজ়িক ভিডিয়ো’ বলছে, ‘দশের মিছিল দিচ্ছে ডাক, বাংলায় বিজেপি নিপাত যাক’।

সপ্তাহখানেক আগে বাম জোটের ব্রিগেড সমাবেশকে প্রচারের আলোয় তুলে আনতে কাজে এসেছিল ‘টুম্পা সোনা’র প্যারোডির ভিডিয়ো। এর পরে ‘দ্য থটফুল বেঙ্গলি’ নামে একটি ফেসবুক পেজ বাম-কংগ্রেস ও ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের জোট নিয়ে ‘খাও ধর্মের ক্ষীর’ বলে একটি কার্টুন ভিডিয়ো পেশ করেছে। তাদের দলে গেরুয়াধারী ধর্মীয় মুখ নিয়ে কটাক্ষের জবাব হিসেবে বিজেপি-শিবিরও ওই ভিডিয়োটি ব্যবহার করছে।

Advertisement

ভোটের টক্করে পশ্চিমবঙ্গে ভিডিয়ো-অস্ত্রকে এতটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে আগে দেখা যায়নি। তবে জাতীয় রাজনীতির পটভূমিতে ২০১৪-র লোকসভা ভোট থেকেই এই প্রচার-কৌশলের গুরুত্ব মালুম হয়েছে। প্রসূন জোশী, আদেশ শ্রীবাস্তব, সুখবিন্দর সিংহদের মতো পেশাদার শিল্পীদের দিয়ে তখন নরেন্দ্র মোদীর স্তুতিগান তৈরি করেছিল বিজেপি। কংগ্রেস, বিজেপি— দু’দলই পেশাদার বিজ্ঞাপন নির্মাতাদের সাহায্য নিয়েছিল। এ রাজ্যেও এজেন্সির সাহায্যে ঝকঝকে প্রচারের পথে হেঁটেছেন কেউ কেউ। কিন্তু তা কিছুটা ব্যতিক্রম। তবে রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাসী সৃজনশীল নানা মুখের জন্যও এই ভোট হয়ে উঠেছে বুদ্ধিদীপ্ত ভাবনার খোরাক। বিজেপি-বিরোধী একটি নাগরিক মঞ্চের আহ্বায়কেরা বলছিলেন, ‘‘জেলায় জেলায় মহামিছিলের প্রচারের পাশাপাশি ইন্টারনেটের ভিডিয়ো-প্রচারও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। গান বাঁধা, গাওয়া, রেকর্ডিং, এডিটিং ইত্যাদিতে কয়েক জন বন্ধুরা এগিয়ে এলেন বলেই কাজটা সম্ভব হল।’’

২০১৪-র ভোটের সময় থেকেই ‘ইস্ট ইন্ডিয়া কমেডি’ বা ‘ঢোল কে পোল’-এর মতো কয়েকটি মঞ্চ ফেসবুক, ইউটিউবে ফেকু, পাপ্পু বা কেজরুর মতো কয়েকটি চরিত্রকে নিয়ে রঙ্গ-ব্যঙ্গে মেতেছিল। তখন অনেকের আফশোস ছিল, দাদাঠাকুর বা ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়দের যুগ থেকে ভোট-রসিকতায় অভ্যস্ত বাংলার কোনও মুখের কথা এই ভোটরঙ্গে উঠে আসছে না। এ বার অবশ্য নরেন্দ্র মোদী স্বয়ং বাঙালির ভোটের চরিত্র। তাঁর রবীন্দ্র-কবিতা আবৃত্তির ভিডিয়ো ভাইরাল। আবার পেট্রলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের টলমলে ই-স্কুটার যাত্রার ছবির আবহে শোনা যাচ্ছে ‘ইধার চলি ম্যায় উধার চলি’! ভোট সামনে, অতএব সেলুলয়েডের বিখ্যাত পিতা-পুত্র কমল মিত্র, উত্তমকুমারদেরও থাকতেই হয়। ‘দেয়া-নেয়া’র বিখ্যাত দৃশ্যের নতুন প্যারোডিতে উত্তমকুমার বাবার সঙ্গে ঝগড়া করে নাগপুরে সঙ্ঘের শরণ নিতে গৃহত্যাগ করছেন। ছায়াদেবীর আর্তস্বর, ‘‘যাসনি, বিজেপি-র রাজত্বে দেশে চাকরিবাকরি নেই।’’

চিত্র পরিচালক অনীক দত্তের সঙ্গে তৃণমূল-শিবিরের সম্পর্ক ‘মধুর’ বলেই শোনা যায়। তবে ‘বাংলার গর্ব মমতা’ পেজে অনীকের ‘ভূতের ভবিষ্যৎ’-এর একটি দৃশ্যে মুখ্যমন্ত্রী বাছাই নিয়ে ‘দিলু মোষ’, ‘শুভেন্দু তরকারি’ ও ‘ছিপি নড্ডা’র সংলাপ শোনা যাচ্ছে। ভোট-আমোদে এমন নানা ভিডিয়োই ঘুরছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভোটের ফলে এই প্রচারের প্রভাব কতটা?

মনোরোগ চিকিৎসক জয়রঞ্জন রামের মতে, ‘‘ভুয়ো খবর কিন্তু সত্যিই ভোটে প্রভাব ফেলতে পারে। মজাদার ভিডিয়ো লোকে দেখতে ভালবাসে, হাসে, শেয়ার করে এই পর্যন্ত!’’ তবে এমন রসিকতা এক ধরনের বাক-স্বাধীনতার অধিকার বলে সওয়াল করে তিনি বলছেন, ‘‘এখনও যে অবাধে এমন হাসি-ব্যঙ্গ ভিডিয়ো চালানো যাচ্ছে, তা-ও আমাদের সৌভাগ্যই বলব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন