Calcutta News

‘পুকুর চুরি’র জেরে ঝিল কমে অর্ধেক

এমনই অবস্থা দক্ষিণ কলকাতার বিক্রমগড় ঝিলের। ওই ঝিলকে এলাকার মানুষ ‘অক্সিজেন চেম্বার’ বলেই মনে করেন। ‘

Advertisement

অনুপ চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০১৮ ০১:২৬
Share:

ক্রমহ্রাসমান: আয়তনে কমে গিয়েছে বিক্রমগড়ের এই ঝিল। —নিজস্ব চিত্র

ঝিলের আয়তন ছিল প্রায় সাড়ে সাত একর। ভরাট হয়ে এখন তার কলেবর মাত্র সাড়ে তিন একর। অর্থাৎ, অর্ধেকের বেশি জলাভূমি উধাও!

Advertisement

এমনই অবস্থা দক্ষিণ কলকাতার বিক্রমগড় ঝিলের। ওই ঝিলকে এলাকার মানুষ ‘অক্সিজেন চেম্বার’ বলেই মনে করেন। ‘গ্রিন সিটি মিশন’ প্রকল্পে সম্প্রতি ওই ঝিলের সৌন্দর্যায়নের জন্য প্রকল্প রিপোর্ট তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয় এক বিশেষ়জ্ঞ সংস্থাকে। বৃহস্পতিবার সেই রিপোর্ট জমা পড়েছে পুরসভায়। যা দেখে চক্ষু চড়কগাছ পুর প্রশাসনের! ২০০২ সাল থেকে গত বছরের তোলা স্যাটেলাইট চিত্র দেওয়া হয়েছে ওই রিপোর্টে। তাতে দেখা গিয়েছে, ঝিলের আয়তন ছিল সাড়ে সাত একরেরও বেশি। সেই আয়তন কমতে কমতে এখন তা দাঁড়িয়েছে মাত্র ৩.২৫ একরে। অভিযোগ, ঝিল বুজিয়ে নির্মাণকাজ হওয়ার কারণেই ওই হাল। পুরসভার এক পদস্থ আধিকারিকের কথায়, ‘‘ভাগ্যিস, ওই ঝিলের উপরে নজর পড়েছে। না হলে তো এক দিন ঝিলটার অস্তিত্বই থাকত না।’’

খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেখানে বারবার জলাভূমি সংরক্ষণের কথা বলছেন, সেখানে ওই জলাশয় বুজিয়ে নির্মাণকাজ চলে কী করে? কেনই বা এত দিন এ বিষয়ে উদাসীন ছিল পুরসভার সংশ্লিষ্ট দফতর?

Advertisement

২০১০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ওই ঝিলের উন্নয়ন নিয়ে লাগাতার সরব ছিলেন ৯৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তপন দাশগুপ্ত। বলেছিলেন, ওই ঝিল বাঁচানো দরকার। ওই ঝিলে ভাসমান বাজারের পরিকল্পনাও করা হয়। সঙ্গে নৌকাবিহার। ২০১৪-’১৫ সালে ওই ঝিলকে শহরের অন্যতম আকর্ষণ হিসেবে গড়ে তুলতে টাকাও বরাদ্দ করেন মুখ্যমন্ত্রী। এমনকি, বিক্রমগড় ঝিলের উন্নয়নের শিলান্যাসও করেছিলেন তিনি। তার পরেও হয়নি সেই কাজ। এখন ওই ঝিলের বিষয়ে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন তপনবাবু। তাঁর একটাই কথা, ‘‘ঝিলের উন্নয়ন হোক, এটা সব সময়েই চাইব।’’

কিন্তু কেন হচ্ছে না সেই কাজ? দক্ষিণ কলকাতার এক কাউন্সিলরের বক্তব্য, ‘‘নিজেদের পকেট ভরাতে এবং পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতি করতে গিয়ে পুকুর, জলাশয় সব বুজে যাচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ থাকলেও তা অমান্য করা হচ্ছে।’’ বিক্রমগড় ঝিল এ ভাবে পড়ে থাকলে ভরাটের হাত থেকে যে বাঁচানো যাবে না, তা বুঝেছেন দক্ষিণ কলকাতার একাধিক মেয়র পারিষদ ও কাউন্সিলর। প্রকল্প রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পরে এখন সেই আশঙ্কা দেখা দিয়েছে পুর মহলেও। এখন অবশ্য চেষ্টা চলছে, যেটুকু অবশিষ্ট রয়েছে, তা ঘিরেই ঝিলের সৌন্দর্যায়ন হোক এবং সেখানে ভাসমান সোলার চ্যানেল বসানোর কাজ দ্রুত করা হোক।

পুরসভার পার্ক ও উদ্যান দফতরের এক আধিকারিক জানান, রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর কলকাতা শহরকে গ্রিন সিটি প্রকল্পের আওতায় আনতে অর্থ বরাদ্দ করে। চলতি আর্থিক বছরে সেই টাকা দিয়েই ঝিলের উন্নয়নে হাত দিতে চায় পুরসভা। প্রকল্প রিপোর্ট তৈরি হয়েছে তা নিয়েই। বিকল্প শক্তি বিশেষজ্ঞ শান্তিপদ গণচৌধুরী ওই প্রকল্প রিপোর্ট তৈরি করেছেন। তাতে রয়েছে, পুরো প্রকল্প করতে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা খরচ হবে। তাতে ঝিলের সৌন্দর্যায়ন হবে। এবং ভাসমান সৌর চ্যানেল বসিয়ে বছরে ৬ লক্ষ ইউনিট সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন