কসবার একটি আবাসনের ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হল এক গৃহবধূর নিথর দেহ। বুধবার রাতে, ৫৬ রাজডাঙা মেন রোডে। স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকেরা মৃত বলে ঘোষণা করেন তাঁকে। পুলিশ জানায়, অনমোল জৈন (৪৫) নামে ওই গৃহবধূর শরীরে শ্বাসরোধের চিহ্ন মিলেছে। তার ভিত্তিতে একটি খুনের মামলা রুজু করা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, ওই মহিলার স্বামী মনোজকুমার জৈনের শীতবস্ত্রের ব্যবসা রয়েছে। এ দিন সকালে মনোজবাবু দুই ছেলেকে নিয়ে বড়বাজারে নিজের সংস্থার অফিসে ছিলেন। দুপুর থেকে স্ত্রীর মোবাইলে বার বার ফোন করলেও সাড়া না মেলায় প্রতিবেশীদের জানান তিনি। তাঁরা গিয়ে দেখেন মনোজবাবুর ফ্ল্যাটের দরজা বাইরে থেকে হ্যাচবোল্ট দিয়ে আটকানো। তা শুনেই এক ছেলেকে নিয়ে বাড়ি ফিরে আসেন মনোজবাবু। ভিতরে ঢুকে তাঁরা দেখেন, ছেঁড়া পোশাকে শোওয়ার ঘরের মেঝেতে পড়ে অনমোলের দেহ।
এর পরেই প্রতিবেশীদের ডাকেন মনোজবাবু। আসেন পরিজনেরাও। হাসপাতালে অনমোলকে চিকিৎসকেরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। এক প্রতিবেশী তপন দাস জানান, ওই ফ্ল্যাটে ঢুকে দেখা যায় অনমোলের দেহ মেঝেতে পড়ে। ঠোঁটের কোন থেকে রক্ত গড়াচ্ছিল। ঘরের মেঝেতে ছিল শুকিয়ে থাকা রক্ত মাখানো পায়ের ছাপও।
খবর পেয়ে কসবা থানার পুলিশ, কলকাতা পুলিশের হোমিসাইড শাখা ও গোয়েন্দা দফতরের আধিকারিকেরাও ঘটনাস্থলে যান। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানায়, অনমোলের গলায় ও ঘাড়ে শ্বাসরোধের চিহ্ন মিলেছে। পাশাপাশি, ওই ফ্ল্যাটের বিভিন্ন ঘরে রয়েছে লুঠপাটের চিহ্নও। তবে লুঠের উদ্দেশেই খুন কি না, তা নিয়ে নিশ্চিত কিছু বলতে পারেনি পুলিশ।
পরিজনেদের সন্দেহ, মনোজবাবুর সংস্থা থেকে বছর খানেক আগে বরখাস্ত করা এক কর্মীর হাত থাকতে পারে এই খুনের পিছনে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, এ দিন সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ মনোজবাবুর ফ্ল্যাটে আসেন ওই কর্মী। ওই সময়ে প্রায় ঘণ্টা দেড়েক ধরে অনমোল পুজো করতেন। কারও ফোন ধরতেন না। তাই দুপুরের পরে স্ত্রীকে ফোন করেন মনোজবাবু। কিন্তু তখনও ফোন না পাওয়াতেই সন্দেহ হয়। পুলিশ সূত্রে খবর, ওই মহিলার কল রেকর্ড খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তা থেকেই জানা গিয়েছে, এ দিন সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ শেষবার তিনি ফোনে কথা বলেন ওই কর্মীর সঙ্গেই। বিষয়টি খতিয়ে দেখছে পুলিশ। তবে রাত পর্যন্ত সেই কর্মীর খোঁজ মেলেনি।
স্থানীয় বাসিন্দাদের একটি অংশের অভিযোগ, ওই আবাসনে কোনও নিরাপত্তারক্ষী নেই। ফলে কারা আবাসনে যাতায়াত করছেন সে দিকে নজরদারির কোনও উপায় নেই। ফলে মনোজবাবুদের ফ্ল্যাটে এ দিন সকাল থেকে কেউ গিয়েছিলেন
কি না, সে বিষয়ে কিছুই জানাতে পারেননি প্রতিবেশীরা।