খাটে দাদার দেহ, পাশের ঘরে বোন

ঘরে ঢুকে অবশ্য হতভম্ব হয়ে যায় পুলিশও। দেখা যায়, একতলার একটি ঘরের বিছানায় পড়ে রয়েছে একটি পচাগলা দেহ। তার পাশের ঘরে শুয়ে রয়েছেন এক প্রৌঢ়া। পুলিশের প্রশ্নে নির্বিকার তিনি! বলেন, ‘‘দাদা তো মারা গিয়েছে কয়েক দিন হল।’’ কিন্তু কাউকে জানাননি কেন? সর্বাণী পাল নামের ওই প্রৌঢ়ার জবাব, ‘‘কাকে আর জানাব!’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০১৮ ০৩:২৩
Share:

এলাকায় দুর্গন্ধটা ক্রমশ ছড়াচ্ছিল সকাল থেকেই। দুপুর গড়াতেই তার জেরে পাড়ায় টেকা দায় হয়ে পড়ে বাসিন্দাদের। গন্ধের চোটে রীতিমতো নাজেহাল অবস্থা হয় স্থানীয় স্কুলের পড়ুয়া এবং শিক্ষক-শিক্ষিকাদেরও। মঙ্গলবার নৈহাটিতে সেই দুর্গন্ধের উৎস খুঁজতে গিয়ে দেখা যায়, গন্ধ আসছে স্কুল বাড়ি লাগোয়া দো‌তলা একটি বাড়ি থেকে। সেই বাড়ির দরজায় কড়া নেড়ে অবশ্য প্রথমে কোনও সাড়া মেলেনি। শেষ পর্যন্ত পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। ভাঙা হয় দরজা।

Advertisement

ঘরে ঢুকে অবশ্য হতভম্ব হয়ে যায় পুলিশও। দেখা যায়, একতলার একটি ঘরের বিছানায় পড়ে রয়েছে একটি পচাগলা দেহ। তার পাশের ঘরে শুয়ে রয়েছেন এক প্রৌঢ়া। পুলিশের প্রশ্নে নির্বিকার তিনি! বলেন, ‘‘দাদা তো মারা গিয়েছে কয়েক দিন হল।’’ কিন্তু কাউকে জানাননি কেন? সর্বাণী পাল নামের ওই প্রৌঢ়ার জবাব, ‘‘কাকে আর জানাব!’’

পুলিশ এ দিন মৃতদেহটি উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতের নাম অমরনাথ পাল (৬৫)। এই ঘটনায় পুলিশ অবাক হলেও অবশ্য একেবারেই বিস্মিত নন নৈহাটির বড়দা রোডের বাসিন্দারা। বছর দেড়েক আগেও তাঁরা ওই বাড়িতেই এমনই ঘটনা ঘটতে দেখেছিলেন। সে বার অমরনাথের দাদা কাশীনাথের মৃতদেহ প্রায় দিন পাঁচেক ধরে বাড়িতেই রেখে দিয়েছিলেন সর্বাণীরা।

Advertisement

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, নৈহাটি পুরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বড়দা রোডে দোতলা ওই বড় বাড়ি সর্বাণীদের। অনেক দিন আগেই তাঁদের মা-বাবার মৃত্যু হয়েছে। দুই ভাই এবং এক বোন এক সঙ্গে ওই বাড়িতেই থাকতেন। পারিবারিক সম্পত্তি ছাড়াও তাঁদের একটি ছোট মনোহারি দোকান ছিল। দুই ভাই সেই দোকানেই বসতেন। বছর দুয়েক ধরে অবশ্য সেই দোকানও বন্ধ।

নৈহাটি পুরসভার চেয়ারম্যান অশোক চট্টোপাধ্যায় এ দিন জানান, বছর দেড়েক আগে অমরনাথের দাদা কাশীনাথের মৃত্যুর পরেও তাঁর দেহ ওঁরা কয়েক দিন ধরে বাড়িতেই রেখে দিয়েছিলেন। পাড়ার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, পড়শিদের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ রাখতেন না সর্বাণীরা। ফলে তাঁদের বাড়িতে কী ঘটছে না ঘটছে, তা কারও পক্ষে জানা সম্ভব ছিল না। গত কয়েক মাস ধরে মাঝেমধ্যে সর্বাণীকে বাইরে দেখা গেলেও পড়শিরা অমরনাথকে দীর্ঘ দিন দেখা যায়নি বলেই পুলিশকে জানিয়েছেন।

পুলিশ সূত্রের খবর, অমরনাথের মৃতদেহটি উদ্ধার করার পর তা ইতিমধ্যেই ময়না-তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের সময় সর্বাণী পুলিশকে জানিয়েছেন, তিনি কখনও সখনও রান্না করেন। ইচ্ছা হলে তবেই খাবার খান। ওই প্রৌঢ়ার চিকিৎসা করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন