মমতা বসাক।
স্কুটার নিয়ে দুই মহিলা কনস্টেবল যাচ্ছিলেন তাঁদের অফিস, কড়েয়া মহিলা থানায়। গ্যালিফ স্ট্রিট ও বিধান সরণির সংযোগস্থলের কাছাকাছি এসে বিধান সরণিতেই বেসামাল হয়ে উল্টে যায় স্কুটারটি। ঠিক তখনই পিছন দিক থেকে আসা একটি মালবাহী গাড়ি পিষে দেয় স্কুটারের পিছনে বসা মহিলা কনস্টেবলকে।
শুক্রবার দুপুর একটা নাগাদ ঘটনাটি ঘটে শ্যামপুকুর থানা এলাকায়, বিধান সরণিতে। পুলিশ জানিয়েছে, মৃত কনস্টেবলের নাম মমতা বসাক (২৯)। আর স্কুটারটি চালাচ্ছিলেন যিনি, তাঁর নাম সান্ত্বনা ওরাং (২৮)। জখম অবস্থায় তাঁকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল বলেই জানা গিয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, দুর্ঘটনার সময়ে দু’জনের মাথাতেই হেলমেট ছিল। এ দিনের ঘটনাস্থলের কাছেই আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। সপ্তাহখানেক আগেই ওই হাসপাতালের সামনে বাসের ধাক্কায় এক মহিলার মৃত্যু হয়েছিল।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দুপুর একটা নাগাদ ঘটনাটি যখন ঘটে, তখন ওই রাস্তায় যানবাহন খুব বেশি ছিল না। ওই দুই মহিলা কনস্টেবলেরই বাড়ি বেলঘরিয়ার নোয়াদাপাড়া পুলিশ আবাসনে। রোজই স্কুটার চালিয়ে দুই বন্ধু কড়েয়ার মহিলা থানায় যেতেন। এ দিনও তাঁরা বাড়ি থেকে নির্দিষ্ট সময়ে বেরিয়েছিলেন। গ্যালিফ স্ট্রিট ও বিধান সরণির কাছে কোনও ভাবে স্কুটারটি উল্টে যায়। ওই এলাকার এক দোকানি অসীম পাত্র জানান, রাস্তা তখন মোটামুটি ফাঁকাই ছিল। তিনি দোকানের বাইরে বসে খাওয়াদাওয়া করছিলেন। হঠাৎ প্রচণ্ড জোরে একটা শব্দ শুনে চমকে যান। অসীমবাবু বলেন, ‘‘ছুটে গিয়ে দেখি, এক মহিলা রাস্তায় পড়ে রয়েছেন। তাঁর মাথা রক্তে ভেসে যাচ্ছে। প্রাথমিক ভাবে দেখে মনে হল, গাড়ির চাকায় তাঁর মাথা ঘষটে গিয়েছে। ওই মহিলার পাশেই পড়ে ছিল একটি হেলমেট। আর এক জন মহিলাও ফুটপাতে পড়ে কাতরাচ্ছিলেন। তাঁর পায়ে চোট লেগেছে। তিনি চিৎকার করে কাঁদছিলেন। স্কুটারটি উল্টে রাস্তায় পড়ে ছিল।’’
কিছু ক্ষণের মধ্যেই ঘটনাস্থলে আসে পুলিশ। অ্যাম্বুল্যান্সে করে দু’জনকেই নিয়ে যাওয়া হয় আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে মমতাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। সান্ত্বনাকে আর জি করে প্রাথমিক পরীক্ষা করানোর পরে ইস্টার্ন বাইপাসের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁর চিকিৎসা চলছে। মালবাহী গাড়িটি আটক করা হলেও চালক পলাতক বলে জানিয়েছে পুলিশ।
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তায় দুই মহিলারই চটি পড়ে রয়েছে। রক্ত অবশ্য তখন ধুয়ে দেওয়া হয়েছে। স্কুটারটি রাস্তায় পিছলে পড়ে উল্টে গিয়েছিল, না কি মালবাহী গাড়িটি পিছন দিক থেকে ধাক্কা মারায় সেটি উল্টে যায়, তা অবশ্য এখনও পরিষ্কার নয় বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
মমতার বাড়ি নদিয়ার শান্তিপুরে বলে জানা গিয়েছে। তাঁর স্বামী তরুণ মজুমদার কাপড়ের ব্যবসা করেন। তাঁদের সাত বছরের একটি ছেলে রয়েছে। সে তার মায়ের সঙ্গেই বেলঘরিয়ার ওই পুলিশ আবাসনে থাকত। তরুণবাবুকে তাঁর স্ত্রীর দুর্ঘটনার খবর ফোনে দেওয়া হলে সঙ্গে সঙ্গে তিনি আর জি করের উদ্দেশে রওনা দেন। সান্ত্বনার বাড়িও নদিয়ার শান্তিপুরে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এ দিন বিকেলেই মমতার দেহ আর জি করের মর্গে ময়না-তদন্তের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, মমতার সহকর্মীরা এসে জড়ো হয়েছেন। মৃতার কয়েক জন মহিলা সহকর্মী জানান, দুর্ঘটনার খবর শুনে তাঁরা প্রথমে ভেবেছিলেন, মমতার চোট লেগেছে। কিন্তু তিনি বেঁচে আছেন। তবে মৃত্যুর খবর শুনে সকলেই বাক্রুদ্ধ হয়ে পড়েন। ছুটে আসেন আর জি কর হাসপাতালে।