ধৃত ‘প্রেমিক’

বাড়ির সামনেই গুলিবিদ্ধ তরুণী

ভরসন্ধ্যায় শহরে এক যুবকের গুলিতে আহত হলেন এক তরুণী। গুলি লাগে তরুণীর মাথায়। পুলিশ জানিয়েছে, ওই তরুণী অন্তঃসত্ত্বা। হামলাকারী যুবক ওই তরুণীর প্রেমিক বলে পুলিশ জানিয়েছে। তাকে ঘটনাস্থল থেকে আগ্নেয়াস্ত্র-সহ গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে বেলেঘাটা থানার অন্তর্গত কালীতারা বোস লেনে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০১৬ ০১:২৪
Share:

ভরসন্ধ্যায় শহরে এক যুবকের গুলিতে আহত হলেন এক তরুণী। গুলি লাগে তরুণীর মাথায়।

Advertisement

পুলিশ জানিয়েছে, ওই তরুণী অন্তঃসত্ত্বা। হামলাকারী যুবক ওই তরুণীর প্রেমিক বলে পুলিশ জানিয়েছে। তাকে ঘটনাস্থল থেকে আগ্নেয়াস্ত্র-সহ গ্রেফতার করা হয়েছে।

ঘটনাটি ঘটেছে বেলেঘাটা থানার অন্তর্গত কালীতারা বোস লেনে। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনায় অভিযুক্ত যুবকের নাম দিবাকর দে। সে রায়গঞ্জের বাসিন্দা। পুলিশ জানাচ্ছে, দিবাকর নিজেকে চিকিৎসক বলে দাবি করেছে। তবে তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, কলকাতার বিভিন্ন থানায় দিবাকরের বিরদ্ধে প্রতারণা, খুনের চেষ্টার মতো একাধিক অভিযোগ রয়েছে।

Advertisement

পুলিশ সূত্রের খবর, বেলেঘাটা থানা এলাকার কালীতারা বোস লেনের ঠাকুরবাগানের বাসিন্দা ওই তরুণী বিবাহিতা। স্বামীর সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় তিনি আলাদা থাকছিলেন। কিন্তু তাঁদের মধ্যে আইনি বিচ্ছেদ এখনও হয়নি। এরই মাঝে ওই তরুণীর সঙ্গে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটের মাধ্যমে রায়গঞ্জের বাসিন্দা দিবাকরের আলাপ হয় বলে তদন্তকারীরা জানান। কয়েক মাসের আলাপ ঘনিষ্ঠতায় পৌঁছয়। এমনকী তিনি রায়গঞ্জে গিয়ে দিবাকরের সঙ্গে গিয়েও থাকতে শুরু করেছিলেন বলে জানাচ্ছে পুলিশ। তারা জানায়, মার্চ থেকে অগস্ট পর্যন্ত ওই তরুণী রায়গঞ্জেই ছিলেন।

তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, দিবাকরের সঙ্গেও বনিবনা হয়নি ওই মহিলার। সেপ্টেম্বর মাসে তিনি কলকাতায় ফিরে আসেন এবং বেলেঘাটা থানায় দিবাকরের বিরুদ্ধে অস্ত্র দেখিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করেন।

পুলিশের কাছে জমা দেওয়া অভিযোগে ওই তরুণী জানিয়েছিলেন, ধর্ষণের ফলে তিনি সন্তানসম্ভবা হয়ে পড়েছেন জেনেও দিবাকর তাঁকে বিয়ে করতে অসম্মত হয়। অতি সম্প্রতি লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগ বেলেঘাটা থানা থেকে মামলা নিজেদের হাতে নিয়ে নেয়। কলকাতা গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল পৌঁছে যায় রায়গঞ্জে। কিন্তু সেখানেও দিবাকরের খোঁজ মেলেনি।

পুলিশ দিবাকরের খোঁজ না পেলেও, ওই তরুণী যে তার বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে ধর্ষণের অভিযোগ করেছেন তা দিবাকর জেনে যায়। পুলিশ জানাচ্ছে, তাঁকে ‘শিক্ষা’ দিতেই দিবাকর মঙ্গলবার সোজা পৌঁছে যায় কালীতলা বোস লেনে। সেখানে ফোন করে তরুণীকে বাইরে আসতে বলে। তরুণী বাইরে এলে তাঁকে গুলি করে দিবাকর।

এ দিন রাতে ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখা যায়, ওই মহিলার বাড়ির সামনে তখনও পড়ে রয়েছে চাপ চাপ রক্ত। বাড়ির সামনে ভিড়। পুলিশে পুলিশে ছয়লাপ গোটা এলাকা। গুরুতর আহত অবস্থায় তরুণীকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় এনআরএস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে তাঁর মাথায় অস্ত্রোপচার হয়। এর পরেই ঘটনাস্থল থেকেই স্থানীয় মানুষ খুঁজে পান দিবাকরকে। প্রথমে ওই তরুণীর ভাই ধরে ফেলেন দিবাকরকে। তাঁর হাতে কামড়ে দিয়ে দিবাকর পালানোর চেষ্টা করলেও ওই তরুণীর ভাই এলাকার লোকজনের সাহায্যে তাকে ধরে ফেলেন। তাঁরাই পুলিশের হাতে তুলে দেন দিবাকরকে।

জখম তরুণীর বেলেঘাটার বাড়িতে তাঁর বাবা-মা, ভাই, বোন ছাড়াও তিন বছরের এক মেয়ে রয়েছে। ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে ওই তরুণীর পরিবারের এক সদস্য পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ এনেছেন। তাঁর এক আত্মীয় বলেন, ‘‘সেপ্টেম্বরে থানায় অভিযোগ দায়ের করার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ যথাযথ ব্যবস্থা নিলে এমন ঘটনা ঘটত না।’’ ঘটনাস্থলে উপস্থিত এক পুলিশ কর্তা বলেন, ‘‘অভিযুক্তকে ধরার জন্য স্থানীয় থানা থেকে তদন্তের ভার লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগের হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। গোয়েন্দারা রায়গঞ্জেও পৌঁছে গিয়েছিলেন। কিন্তু দিবাকরের খোঁজ মেলেনি।’’ পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তাই ধোপে টেকে না বলে ওই পুলিশ-কর্তা মন্তব্য করেছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন