Pregnancy

জেলেই অন্তঃসত্ত্বা, প্রশ্নের মুখে সন্তানের ‘পিতৃত্ব’, জাতীয় মহিলা কমিশনের সামনে ক্ষোভ বন্দিনীদের

কারা দফতরের দাবি, গত এক বছরে সংশোধনাগারে ১১টি শিশুর জন্ম হয়েছে। সংশোধনাগারে আসার আগেই ওই মহিলারা অন্তঃসত্ত্বা হয়েছিলেন। করোনাকালে এক মহিলা বন্দিকে প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল।

Advertisement

রাজীব চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৬:১৩
Share:

— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

রাজ্যের সংশোধনাগারে মহিলা বন্দিদের পরিস্থিতি নিয়ে দায়ের হওয়া একটি জনস্বার্থ মামলার পরিপ্রেক্ষিতে কলকাতা হাই কোর্টে জমা পড়েছিল ‘আদালতবান্ধব’-এর রিপোর্ট। সেই রিপোর্ট সম্পর্কে জাতীয় মহিলা কমিশনের প্রতিনিধিদের সামনেই প্রশ্ন তুললেন দমদম ও আলিপুর মহিলা সংশোধনাগারের বন্দিনীদের একাংশ। আইনজীবীদের সূত্রে খবর, ওই রিপোর্টে দাবি করা হয়েছিল, গত এক বছরে রাজ্যে জেলের ভিতরে জন্ম হয়েছে ১৯৬টি শিশুর। ‘আদালতবান্ধব’ হিসাবে নিযুক্ত আইনজীবী তাপস ভঞ্জ বিষয়টিকে ‘গুরুতর’ বলে উল্লেখ করেছিলেন।

Advertisement

সোমবার জাতীয় মহিলা কমিশনের সদস্য ডেলিনা খোংদুপ ও শালিনী সিংহ দমদম কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের মহিলা বন্দিদের ব্লক এবং আলিপুর মহিলা সংশোধনাগার পরিদর্শন করেন। কারা দফতর সূত্রের খবর, তাঁদের সামনে বেশ কয়েক জন মহিলা বন্দি অভিযোগ করেন, ওই রিপোর্টের জেরে তাঁদের সামাজিক সম্মান ক্ষুণ্ণ হয়েছে। প্রশ্নের মুখে সন্তানের ‘পিতৃত্ব’। জেল থেকে বেরোনোর পরে তাঁরা সমাজে ফিরে গিয়ে কী ভাবে মুখ দেখাবেন?

মহিলা সংশোধনাগারে পুরুষদের প্রবেশাধিকার নেই। আদালতবান্ধবের রিপোর্টের সারাংশ প্রকাশ্যে আসার পরে প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কী ভাবে জেলের অন্দরে বন্দিনীরা অন্তঃসত্ত্বা হলেন? আইনজীবীদের একাংশ মনে করছেন, এই ঘটনা সত্যি হলে কারাকর্মীদের দিকে যেমন অভিযোগের আঙুল উঠতে পারে, তেমনই সংশোধনাগারে বহিরাগত পুরুষদের আনাগোনা ঘটছে কি না, সেই প্রশ্নও আসতে পারে।

Advertisement

যদিও কারা দফতরের এক কর্তার বক্তব্য, ‘‘জাতীয় মহিলা কমিশনের প্রতিনিধিদের ওই বন্দিরা জানিয়েছেন, জেলে আসার পরে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ার ঘটনা ঘটেনি। জেলে এমন ঘটনা ঘটেছে বলেও তাঁরা শোনেননি। ওই রিপোর্ট তৈরির আগে তাঁদের সঙ্গে কথা বলা হয়নি বলেও দাবি বন্দিনীদের। কমিশনের সদস্যেরা তাঁদের বক্তব্য শুনেছেন, কিন্তু কোনও মন্তব্য করেননি।’’ জেল আধিকারিকদের সঙ্গেও কমিশনের সদস্যেরা কথা বলেন। সংশোধনাগারে জন্ম নেওয়া শিশুদের সম্পর্কে তথ্যও সংগ্রহ করেন তাঁরা।

কারা দফতরের খবর, জেল পরিদর্শনের সময়ে কমিশনের সদস্যদের সঙ্গে ছিলেন দফতরের স্পেশ্যাল আইজি অজয় ঠাকুর, ডিআইজি (দমদম) গৌতম মণ্ডল এবং ডিআইজি (প্রেসিডেন্সি) দেবাশিস চক্রবর্তী। বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ তাঁরা যান দমদম কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে। দু’ঘণ্টা পরিদর্শনের পরে তাঁরা আসেন আলিপুর মহিলা সংশোধনাগারে।

কারা দফতরের দাবি, গত এক বছরে সংশোধনাগারে ১১টি শিশুর জন্ম হয়েছে। সংশোধনাগারে আসার আগেই ওই মহিলারা অন্তঃসত্ত্বা হয়েছিলেন। করোনাকালে এক মহিলা বন্দিকে প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। এক বছর দু’মাস পরে তিনি সংশোধনাগারে ফেরেন। মুক্ত থাকাকালীন তিনি অন্তঃসত্ত্বা হয়েছিলেন। এ ছাড়া, অনেক মহিলা বন্দি সংশোধনাগারে এসেছেন তাঁদের সন্তানদের নিয়ে। এ দিন জাতীয় মহিলা কমিশনের সদস্যেরা তাঁদের সঙ্গেও কথা বলেন।

কারা দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, রাজ্য মহিলা কমিশনের প্রতিনিধিরা নির্দিষ্ট সময় অন্তর সংশোধনাগার পরিদর্শন করেন। সংশোধনাগারে আসার পরে মহিলারা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ছেন, এমন কোনও রিপোর্ট তাদের তরফে দেওয়া হয়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন