পায়ে-পায়ে: ‘আনন্দবাজার পত্রিকা ট্যুরিস্ট স্পট’-এর উদ্বোধনে আবীর চট্টোপাধ্যায়। শুক্রবার, স্বভূমিতে। নিজস্ব চিত্র
কথায় আছে, বাঙালির পায়ের তলায় সর্ষে! এমনকী যাঁরা সচরাচর বেরোন না সুখী গৃহকোণ ছেড়ে, তাঁরাও মাঝেমধ্যে একঘেয়েমি থেকে মুক্তি পেতে দুই-চার দিনের ছুটি কাটিয়ে আসতে ভালবাসেন। তবে কোথাও বেড়াতে যেতে হলে তার আগে যে প্রস্তুতি, তাতে অনেকেই সময় দিতে পারেন না। কত দিন আগে রেল বা বিমানের টিকিট কাটবেন, হোটেল বুক করবেন কী ভাবে, যেখানে ঘুরতে যাচ্ছেন সেখানে দর্শনীয় স্থানই বা কী কী আছে— এ সব তথ্য পেতে ভরসা সেই ইন্টারনেট। কিন্তু যদি এক ছাতার নীচে দেশ-বিদেশের জায়গার প্রয়োজনীয় তথ্য মেলে, কেমন হয় তা হলে? এই ভাবনা থেকেই শুক্রবার স্বভূমিতে শুরু হল তিন দিনব্যাপী পর্যটন মেলা ‘ট্যুরিস্ট স্পট’। যৌথ উদ্যোগে আনন্দবাজার পত্রিকা ও এয়ার ইন্ডিয়া। মেলায় হাজির কেরল থেকে কাশ্মীর— বিভিন্ন রাজ্যের পর্যটন দফতর। হরেক সাজ-পোশাক ও হরেক সংস্কৃতির পসরা সাজিয়ে যোগ দিয়েছে ভিন্ দেশও। মেলায় এ বারের প্রথম অতিথি কোরিয়া।
মেলার সূচনা করেন অভিনেতা আবীর চট্টোপাধ্যায়। প্রথম দিনেই বিভিন্ন স্টলে ভ্রমণপ্রিয় শহরবাসীর উপচে পড়া ভিড়। বিভিন্ন জায়গার ছবি দেখা, সহজ প্যাকেজের খোঁজ নেওয়া, ক্যালেন্ডার খুলে ছুটির হিসেব মিলিয়ে নেওয়া। বেহালার উৎপল সরকার সপরিবার এসেছিলেন মেলায়। বললেন, ‘‘পর্যটন মেলায় না এসে থাকতে পারি না। এক ছাদের তলায় সারা দেশে ঘোরার সুলুক মেলে যে!’’
আবীরের কথায়, ‘‘আমি এমনিতে ঘরকুনো। কিন্তু শ্যুটিংয়ের কারণে নানা জায়গায় ঘুরতে হয়। এই মেলায় রাজস্থানের স্টল দেখে সব চেয়ে ভাল লাগল। কারণ রাজস্থানে শ্যুটিং করার অনুমোদন পদ্ধতিটিকে আলাদা করে গুরুত্ব দিয়েছেন ওঁরা।’’
উপস্থিত ছিলেন পর্যটন মন্ত্রকের একাধিক কর্তা। পূর্ব ভারতের আঞ্চলিক অধিকর্তা জয়প্রকাশ শাও জানালেন, দেশের যে সব বিমানবন্দরের কর্মীরা আন্তর্জাতিক অতিথিদের মুখোমুখি হন, তাঁদের শেখানো হচ্ছে আতিথেয়তার পাঠ। বিমানবন্দরের বাইরে ট্যাক্সি ও অটোচালকদেরও শেখানো হচ্ছে ধোপদুরস্ত পোশাক পরতে, পানের পিক নিয়ে পর্যটকের সঙ্গে কথা না বলতে বা পর্যটকের অনুমতি না নিয়ে গাড়িতে জোরে গান না বাজাতে। জানা গেল ই-ট্যুরিস্ট ভিসার কথাও। এই পদ্ধতিতে ভারতে আসার জন্য দ্রুত অনলাইনে ভিসার আবেদন করতে পারেন ১৫০টি দেশের পর্যটকেরা। পর্যটন কর্তারা জানালেন, সব চেয়ে বেশি উপকৃত হচ্ছেন চিকিৎসার কারণে ভারতে আসতে চাওয়া বিদেশিরা। ই-ট্যুরিস্ট ভিসা নিয়ে এ দেশে পৌঁছনো পর্যটকেরা যাতে বিমানবন্দরে নেমে সিমকার্ড পান, তাঁরও ব্যবস্থা শুরু হয়েছে সম্প্রতি।
জয়প্রকাশ জানালেন, রাজনৈতিক অশান্তির জেরে ক্ষতির মুখে পড়ছে পর্যটন। তাঁর কথায়, ‘‘ভারতের মতো বড় দেশে রাজনীতি থাকবেই। তা যদি পর্যটকদের দুশ্চিন্তার কারণ হয়, বেশি ক্ষতি হয় স্থানীয়দেরই। পর্যটনের উপরেই তাঁদের সারা বছরের রুজি-রুটি নির্ভর করে। সংশ্লিষ্ট রাজ্যের সরকারকে কঠোর হতে হবে।’’ মেলায় এ বছর আত্মপ্রকাশ করেছে কোরিয়া পর্যটন। কম খরচে ভ্রমণের নতুন দেশ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা নিয়ে এই আত্মপ্রকাশে খুশি মেলায় উপস্থিত মানুষ। কোরিয়া পর্যটনের তরফে বংশিকা কপূর রেখি বললেন, ‘‘মানুষ খোঁজ নিচ্ছেন। ২০০৮ থেকে ভারতের নানা জায়গায় কাজ করছি, কলকাতায় এই প্রথম। আশা করছি সাড়া পাব।’’