পায়ে পচন, পাঁচ দিন এই যুবক পড়ে যাদবপুরের সাবওয়েতে

স্থানীয় দোকানদার ও বাসিন্দারা জানিয়েছেন, যাদবপুর স্টেশন সংলগ্ন রেলের সাবওয়েতে এ ভাবেই পড়ে ছিলেন ওই যুবক। পরে এলাকায় দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ায় পিন্টু ঘড়ুই নামে এক দোকানি সাবওয়েতে নেমে অসুস্থ ওই যুবককে দেখতে পেয়ে খবর দেন সার্ভে পার্ক থানায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০১৮ ০১:৩৪
Share:

অবহেলিত: পায়ে পচন নিয়েই সাবওয়েতে পড়ে রয়েছেন বুবাই। শুক্রবার, যাদবপুরে। নিজস্ব চিত্র

কালো প্যান্ট আর হাফ শার্ট পরা এক যুবক সাবওয়ের এক পাশে শুয়ে। বাঁ পা ফুলে কালো হয়ে গিয়েছে। যেটুকু দেখা যাচ্ছে, তাতেই স্পষ্ট, পায়ের পাতায় পচন ধরে পোকা ধরে গিয়েছে। কিন্তু অসুস্থ সেই যুবককে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কাউকে পাওয়া গেল না। পরে দুর্গন্ধে টিকতে না পেরে স্থানীয়দের উদ্যোগে একপ্রকার বাধ্য হয়েই তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেল জিআরপি। তবে সেটুকুও করতে লেগে গেল পাঁচ দিন!

Advertisement

স্থানীয় দোকানদার ও বাসিন্দারা জানিয়েছেন, যাদবপুর স্টেশন সংলগ্ন রেলের সাবওয়েতে এ ভাবেই পড়ে ছিলেন ওই যুবক। পরে এলাকায় দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ায় পিন্টু ঘড়ুই নামে এক দোকানি সাবওয়েতে নেমে অসুস্থ ওই যুবককে দেখতে পেয়ে খবর দেন সার্ভে পার্ক থানায়। কিন্তু সাবওয়েটি জিআরপি-র অধীনে হওয়ায় থানার পুলিশ আসতে চায়নি। শেষে কয়েক জন স্থানীয় দোকানদার আর ব্যবসায়ী মিলে ফের জিআরপি-র কাছে গিয়ে ব্যবস্থা নিতে বললে টনক নড়ে তাদের। শুক্রবার সকালে ওই যুবককে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায় তারা। যাদবপুর জিআরপি জানিয়েছে, স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকেই তারা জানতে পেরেছে যে, ওই যুবকের নাম বুবাই। তিনি ওই সাবওয়েতেই বেশির ভাগ সময়ে নেশা করে পড়ে থাকতেন।

জখম ওই যুবকের কোনও বাড়ি রয়েছে কি না, সে খবরও তারা পায়নি বলে জানিয়েছে যাদবপুর জিআরপি। এই ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে ওই সাবওয়ের নিরাপত্তা নিয়েও। কারণ, ওই সাবওয়ে ব্যবহারকারীর সংখ্যা এমনিতেই হাতেগোনা। তাই দিনের বেশির ভাগ সময়েই সেখানে মদ্যপ ও মাদকাসক্তেরা আসর বসান বলে অভিযোগ। এমনকি, ওই

Advertisement

সাবওয়ে রাতেও বন্ধ রাখার কোনও ব্যবস্থা নেই। অথচ, জিআরপি-র নজরদারিও সেখানে নেই বললেই চলে। আর সেই কারণেই গত চার-পাঁচ দিন ধরে ওই যুবকের পা পচে গিয়ে দুর্গন্ধ ছড়ানোর আগে পর্যন্ত তাঁর বিষয়ে কেউ কোনও খবরই পাননি। স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, ওই সাবওয়েতে কোনও বড় অঘটন ঘটে গেলেও কয়েক দিনের আগে সে খবর জানা যাবে না।

কী বলছেন উদ্ধারকারী পিন্টুবাবু?

আরও পড়ুন: গুলি খেলে তিন ছাত্রকে স্কুলে ফেরালেন প্রধান শিক্ষক

তাঁর কথায়, ‘‘দুর্গন্ধে টিকতে না পেরে সাবওয়ে লাগোয়া দোকানদারেরাই জানালেন যে, ভিতরে এক জন পড়ে রয়েছেন। পায়ে পচন ধরেছে। তখনই নীচে নেমে দেখি, নিস্তেজ হয়ে যুবকটি পড়ে রয়েছেন।’’

শুক্রবার বেলায় ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখা গেল, জল আর কাদায় মাখামাখি সাবওয়ের যত্রতত্র প্লাস্টিক আর কাচের বোতল পড়ে রয়েছে। দিনের আলো ঢোকে না। টিমটিম করে একটি আলো জ্বলছে।

নোংরায় ভর্তি চার দিকের দেওয়াল। এতটাই পূতিগন্ধময় যে, টেকা দায়। অনেক ক্ষণ দাঁড়িয়ে সাবওয়ে ব্যবহারকারী এক প্রৌঢ়ের দেখা মিলল। কোনও মতে সিঁড়ি ভেঙে আস্তে আস্তে নেমে আবার উল্টো দিকের সিঁড়ি ধরে উপরে উঠলেন। আর কাউকেই কিন্তু সাবওয়ে ধরে যেতে দেখা গেল না। সকলেই যাদবপুর রেলগেট ধরেই যাতায়াত করছেন। আর জিআরপি-র কোনও লোকজন? চারপাশে কাউকেই পাওয়া গেল না। জিআরপি-র দেখা পেতে হলে যেতে হবে যাদবপুর স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে। যাদবপুর জিআরপি-র কর্তারা অবশ্য দাবি করেছেন, সাবওয়ে ঠিকই রয়েছে। তবে সারাক্ষণ পাহারা দেওয়ার মতো লোক তাঁদের নেই। তাই টহলদারি চলে মাঝেমধ্যে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন