শিশু সুরক্ষা কমিশনে পরিবার

শ্লীলতাহানির অভিযোগ করে ‘হেনস্থা’

কিশোরীর অশালীন ছবি তুলে তা এলাকায় ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল স্থানীয় এক কিশোরের বিরুদ্ধে। লোকলজ্জার ভয়ে সেই কিশোরী এমনকী, তার ছোট বোন বাড়ি থেকে বেরোতেও পারছিল না। স্কুল, টিউশনে যাওয়াও বন্ধ ছিল। বন্ধু-বান্ধব বা আত্মীয়-স্বজনদের বাড়ি যাওয়াও বন্ধ ছিল মাসের পর মাস।

Advertisement

দীক্ষা ভুঁইয়া

শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০১৬ ০০:২৫
Share:

কিশোরীর অশালীন ছবি তুলে তা এলাকায় ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল স্থানীয় এক কিশোরের বিরুদ্ধে।

Advertisement

লোকলজ্জার ভয়ে সেই কিশোরী এমনকী, তার ছোট বোন বাড়ি থেকে বেরোতেও পারছিল না। স্কুল, টিউশনে যাওয়াও বন্ধ ছিল। বন্ধু-বান্ধব বা আত্মীয়-স্বজনদের বাড়ি যাওয়াও বন্ধ ছিল মাসের পর মাস। থানা বা পঞ্চায়েতের কেউ-ই তাঁদের পাশে দাঁড়ায়নি। বরং উল্টে অভিযুক্ত যুবক ও তার পরিবারের পাশে দাঁড়ানোয় এলাকায় থাকা অসম্ভব হয়ে উঠেছিল কিশোরীর পরিবারের। এমন অবস্থায় রাজ্যের শিশু সুরক্ষা কমিশেনর দ্বারস্থ হয়েছিল ওই কিশোরীর পরিবার। সেই কমিশনের হস্তক্ষেপেই নড়েচড়ে বসে জেলার পুলিশ। অভিযুক্ত কিশোরকে গ্রেফতার করার পাশাপাশি মেয়ে দু’টি যাতে নিরাপদে বাইরে বেরোতে পারে, তার ব্যবস্থা করতে বাধ্য হল পুলিশ।

উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পুলিশ অবশ্য পুলিশি গাফিলতির বিষয়টি মানতে রাজি নয়। সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘আইন মেনে যা করণীয়, পুলিশ তা-ই করেছিল।’’

Advertisement

কমিশনের চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘অভিযুক্তকে বাঁচানোর জন্য অভিযোগকারী পরিবারটিকে পঞ্চায়েত সদস্যার স্বামী হুমকি দিচ্ছিলেন বলে অভিযোগ করে কিশোরীর পরিবার। পুলিশ সুপারকে বলে অভিযুক্ত কিশোরকে গ্রেফতারের পাশাপাশি পঞ্চায়েতেও খবর পাঠাই যাতে কোনও রকম হুমকি দেওয়া না হয়। তার পর থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে।’’

রাজ্যের শিশু সুরক্ষা কমিশন সূত্রের খবর, মাস খানেক আগে দত্তপুকুর থানা এলাকার বাসিন্দা রাকেয়া বিবি (নাম পরিবর্তিত) তাদের দফতরে এসে কমিশনের হস্তক্ষেপ চেয়ে আবেদন করেন। ওই আবেদনে রাকেয়া বিবি জানান, তাঁর স্বামী অসুস্থ এবং দুই মেয়েকে নিয়ে দত্তপুকুর থানা এলাকায় থাকেন। মাস চারেক আগে তাঁর ব়়ড় মেয়ে একাদশ শ্রেণির ছাত্রীর অশালীন ছবি মোবাইলে তুলে তা নিজের বন্ধুদের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছিল পড়শি এক কিশোর। সেটি ছড়িয়ে যায় পাড়া-পড়শিদের মধ্যেও। যার ফলে ঘটনার পরেই ওই ছাত্রী ও তার বোনকে দেখে নানা রকম কটূক্তি করা শুরু হয় বলে অভিযোগ।

লোকলজ্জার ভয়ে একাদশ শ্রেণির ওই ছাত্রী ও তার বোন নবম শ্রেণির পড়ুয়ার রাস্তায় বেরোনো বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। রীতিমতো গৃহবন্দি হয়ে ছিল দু’জন। অভিযোগ, দত্তপুকুর থানায় অভিযোগ জানানোর পরেও পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। ওই কিশোরীর মায়ের আরও অভিযোগ, পুলিশের এই নিষ্ক্রিয়তার জন্যই অভিযুক্ত কিশোর, তার বন্ধুবান্ধব এবং পাড়ার লোকজন কিশোরীর পরিবারকে উত্যক্ত করতে শুরু করে।

এর পরেই অভিযোগকারী পরিবারটি পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ নিয়ে রাজ্যের শিশু সুরক্ষা কমিশনের দ্বারস্থ হয়। কমিশনের ফোন পেয়ে কিশোরকে পুলিশ তুলে নিয়ে গেলেও সে ছাড়া পেয়ে যায়। মেয়েটির পরিবার জানায়, পুলিশের কাছে অভিযোগ জানানোর জন্য মেয়েদের আরও ক্ষতি করার হুমকি দিয়ে যাচ্ছিল অভিযুক্তের পরিবার। ওই এলাকায় থেকে পড়শি ছেলের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ জানানোর জন্য পঞ্চায়েতও তাঁদের রীতিমতো ভয় দেখাচ্ছিল বলে ফের নভেম্বরের প্রথমে কমিশনের কাছে অভিযোগ জানায় কিশোরীর পরিবার। এর পরে ৭ নভেম্বর খোদ কমিশনের চেয়ারপার্সন মেয়েটির পাড়ায় পৌঁছন। আর তাতেই কাজ হয়। স্থানীয় যে পঞ্চায়েত সদস্যা প্রিয়াঙ্কা ঢালির স্বামী শ্যামল ঢালির বিরুদ্ধে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। সেই শ্যামলবাবুর দাবি, ‘‘আমরাই তো প্রথম থেকে কিশোরীর পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছিলাম। ওদের নিয়ে পুলিশের কাছে গিয়েছিলাম। কোথাও একটা ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement