—প্রতীকী ছবি।
আনন্দপুরে মনে আনন্দ নেই কালু, এটকু, হংকং, বুড়ো, কিংকং, মুন্নুদের। আবাসিকদের আপত্তিতে মনিব অম্লান দত্তের মাথার উপর থেকে সরে গিয়েছে দু’বছরের আস্তানা। এই পরিস্থিতিতে তাদের নিয়ে মনিবের দুশ্চিন্তাই মনমরা করে রেখেছে ওই পোষ্যদের।
অম্লান জানান, ২০১৬ সালে আনন্দপুরের মাদুরদহ এলাকার একটি আবাসনের একতলায় মা ও পোষ্যদের নিয়ে থাকার অনুমতি পান তিনি। কথা ছিল, বিনিময়ে ফ্ল্যাটের আবাসিকেরা যে কাজ বলবেন, তা তিনি করে দেবেন। অম্লানের দাবি, ওই বছরের অক্টোবরে থাকার জন্য এক হাজার টাকা করে তাঁর কাছে ভাড়া চাওয়া হয়। যদিও সেই ভাড়ার কোনও রসিদ দেওয়া হয়নি। রসিদ ছাড়া থাকতে কেন রাজি হলেন? অম্লান জানান, পোষা কুকুর কালু ও এটকু, বেড়াল হংকং ও কিংকংয়েরাও যে থাকার অনুমতি পেয়েছে, সে কথা ভেবেই তিনি আপত্তি না জানিয়ে আপসে রাজি হয়েছিলেন।
কিন্তু গত ১৮ ডিসেম্বর আবাসিকদের একাংশ জানান, পোষ্যদের সেখানে রাখা যাবে না। অম্লান জানান, পোষ্যেরা তাঁর কাছে সন্তানের মতো। তাদের এ ভাবে আশ্রয়হীন করার প্রস্তাবে তিনি রাজি হননি। এ নিয়ে কথা কাটাকাটি শুরু হলে এক আবাসিক অম্লানকে ধাক্কা দিয়ে আবাসনের বাইরে বার করে দেন বলে অভিযোগ। যার প্রেক্ষিতে আনন্দপুর থানার দ্বারস্থ হন অম্লান। গোটা ঘটনা শুনে থানা একটি জেনারেল ডায়েরি করে। অম্লান যাতে ওই আবাসনে ঢুকতে পারেন, তারও ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু অম্লানকে মুচলেকা দিতে হয়, ৩১ জানুয়ারির মধ্যে তিনি ওই আবাসন ছেড়ে দেবেন। তত দিন পোষ্যদের সেখানে
রাখতেও পারবেন না।
টানাপড়েনের মধ্যে পড়ে প্রথমে পোষ্যদের নাজিরগঞ্জের একটি ক্রেশে রাখেন তিনি। দশ দিনে ২০ হাজার টাকার ভার বইতে পারেননি সল্টলেকে একটি বেসরকারি সংস্থায় ভেন্ডর হিসেবে কর্মরত অম্লান। বিকল্প হিসেবে সেই মাদুরদহেই পোষ্যদের জন্য ঘর ভাড়া করেন তিনি। অম্লানের কথায়, ‘‘মাসে আট হাজার টাকা বেতন পাই। তা থেকে আমার পোষ্যদের খাবার, ওষুধের খরচ আছে। এর উপরে পাঁচ হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে ওদের বেশি দিন নতুন ঘরে রাখতে পারব না। আবার রাস্তায় ফেলে দিতেও পারব না। আমার অনুভূতিটা কেউ বুঝছে না! কিন্তু আমার পোষ্যেরা আমার মনের অবস্থা বুঝতে পারছে। সব মনমরা হয়ে রয়েছে।’’
গত কয়েক দিনে যত্নের অভাবে চারটি বেড়াল মারা গিয়েছে জানিয়ে অম্লান বলেন, ‘‘কালী, চুন্নু, নন্টে, কচির খুব ঠান্ডা লেগেছিল। বাঁচাতে পারলাম না। নিজের হাতে সন্তানদের কবর দেওয়ার যে কী জ্বালা!’’
অম্লানের অভিযোগ প্রসঙ্গে পুলিশ জানিয়েছে, অভিযোগকারীর বিষয়টি সহানুভূতির সঙ্গে দেখা হয়েছে। কিন্তু এ ধরনের সামাজিক ব্যাধির নিরসনে ইচ্ছা থাকলেও আইনি পদক্ষেপ করার সুযোগ সে ভাবে নেই।