যতীন দাস পার্ক
নিয়ম রয়েছে নিয়মের মতো। কিন্তু সেই নিয়ম মতে চলছে না কেউই।
শহরে পার্কের সংখ্যা বাড়াতে জলাধারের উপরেও পার্ক তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল পুরসভা। সূত্রের খবর, বর্তমানে শহরের প্রায় ছ’শোটি পার্ক বা উদ্যান রয়েছে কলকাতা পুরসভার আওতায়। কিন্তু বুধবার কলকাতার বিভিন্ন পার্কে ঘুরে বেশির ভাগ জায়গাতেই চোখে পড়ল রক্ষণাবেক্ষণ বা নিরাপত্তার অভাব।
টালা পার্কের ভিতরের ঝিলটিতে যেমন নিয়মিত সাঁতার এবং স্নান করার পাশাপাশি জামাকাপড়ও কাচা হয়। খাবারের অবশিষ্টাংশ ছুড়ে ফেলা হয় ঝিলের জলে। পার্কের রক্ষীদের দাবি, পার্কের সংস্কার হয়েছে। কিন্তু ঝিলের চারধারে বাঁধানো দেওয়াল অনেক জায়গাতেই ভাঙা।
দেশবন্ধু পাকের্র্র ধার দিয়ে লাগানো ছোট ছোট দেবদারু গাছ প্রায় নষ্ট হওয়ার মুখে। ময়লা ফেলার আলাদা জায়গা রয়েছে, তবে সেখানে আবর্জনা বিশেষ ফেলা হয় না। আধভাঙা ছাউনির নিচে বসার বেঞ্চটা উধাও। খেলার মাঠের লাগোয়া বাঁধানো জায়গায় একাধিক আলোকস্তম্ভ ভেঙেচুরে পড়ে রয়েছে। শরৎ স্মৃতি উদ্যান বা ট্র্যাঙ্গুলার পার্কে ঢুকতেই চোখে পড়ল পার্কের ভিতরেই বাইক নিয়ে ঢুকে পড়েছেন এক দল যুবক। পার্কে আসা এক মহিলা জানালেন, তিনটি প্রবেশপথের একটি সব সময়ে বন্ধ থাকে। সেই বন্ধ গেটের ভিতরে জঞ্জালের স্তূপ। গেটের বাইরে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দোকান বসছে।
গিরিশ পার্কের এক দিকের জমির দখল নিয়েছে মেট্রো-কর্তৃপক্ষ। বাকি অংশে বাচ্চাদের স্লিপ হয়ে উঠেছে ইট মজুতের জায়গা। দোলনাও নষ্ট। একাধিক বাতিই ভাঙা। যদিও গিরিশ পার্কের গায়েই ৪ নম্বর বরো কমিটির অফিস। মেট্রো জমি নিয়ে নেওয়ায় ছোট হয়ে গিয়েছে যতীন দাস পার্ক বা হাজরা পার্কের ডান দিকের উদ্যান। পিছনের বাগানটির রক্ষণাবেক্ষণ করেছে পুরসভা। কিন্তু সামনে মেট্রো স্টেশনের দু’টি গেটের মাঝখানে উদ্যানের অংশটি পরিচর্যার অভাবে বেহাল। রেলিংয়ে জং ধরে ভেঙে গিয়েছে, জংলা গাছে ও আবর্জনায় ভরে গিয়েছে চার দিক। বহু দিনের পুরনো ফোয়ারাটিও নষ্ট।
কার্জন পার্ক
মানিকতলা মেন রোডের কাছে বাগমারি পার্কের অবস্থাও ভাল নয়। এক দিকে পাম্পিং স্টেশন, অন্য দিকে পার্কের মধ্যে কর্মীদের থাকার ঘর। ছোট পার্কটির বাকি অংশের অনেকটা জায়গায় বছরের বেশির ভাগ সময়ে জল জমে থাকে। ফলে সেখানে খেলাধূলা করা দুষ্কর।
ধর্মতলায় কার্জন পার্কে লর্ড কার্জনের মূর্তির পিছনে আবর্জনায় মুখ ঢেকেছে বেঞ্চ। তাই গাছের বাঁধানো বেদীতেই বসতে হচ্ছে মানুষদের। এর পাশেই ভাষা-উদ্যান। মূল উদ্যানটির পাশে জঞ্জালের স্তূপ, একাধিক বাতিহীন স্তম্ভ।
কয়েক দশক আগে অবশ্য পার্কগুলির এই অবস্থা ছিল না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নানা রকম নির্মাণের ফলে পার্ক ছোট হয়ে গিয়েছে। পার্কে যাতায়াতের সময়ও বেঁধে দেওয়া হয়েছে। কয়েকটি পার্ক আবার সন্ধ্যার পরে অসামাজিক কাজের আখড়া হয়ে ওঠে বলে অভিযোগ। ফলে সন্ধ্যা ঘনালেই পার্কে সাধারণ মানুষের যাতায়াত কমে যায়।
গিরিশ পার্ক
কলকাতার মতো বড় শহরে পরিবেশের সামঞ্জস্য বজায় রাখতে এবং পার্কের ঘাটতি কমাতে কসবা, গরফা, কালীঘাট এলাকায় জলাধারের উপরেও পার্ক বানিয়েছে পুরসভা। সেগুলির অবস্থা অবশ্য ভালই। অন্য দিকে, কার্জন পার্কের হাল নিয়ে পরস্পরকে দোষারোপ করেছে কলকাতা পুরসভা এবং পূর্ত দফতর। কার্জন পার্কটি দেখাশোনার দায়িত্বে রয়েছে কলকাতা পুরসভা, পূর্ত দফতর এবং কলকাতা ট্রাম কোম্পানি। লর্ড কার্জনের মূর্তির নিচে আবর্জনা জমা নিয়ে পূর্ত দফতরের এক কর্তা বলেন, “কার্জন পার্কের ওই অংশে কলকাতা পুরসভা আবর্জনা ফেলে। সময়ে সময়ে তা পরিষ্কার করার কথা থাকলেও তা হয় না। অনেক বার ওখান থেকে আবর্জনার স্তূপ সরানোর কথা বলা হলেও বিকল্প জায়গা না থাকায় তা করতে পারেনি পুরসভা।” ওই কর্তা জানিয়েছেন, সম্প্রতি পর্যটন দফতরের কাছে ওই পার্কের সৌন্দর্যায়ন করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। প্রস্তাবটি সেনাবাহিনীর অনুমতির জন্যও পাঠানো হয়েছে।
পার্কগুলির দুর্দশা নিয়ে পুরসভার মেয়র পারিষদ (উদ্যান) দেবাশিস কুমার এ দিন বলেন, “শহরে পার্কগুলি নানা ভাবে ব্যবহৃত হয়। কোনও কোনও পার্ক পুজো এবং বিভিন্ন মিটিং-এর জন্যও ব্যবহার করা হয়। সৌন্দর্যায়নের কথা যেমন ভাবতে হয়, বাচ্চাদের খেলার জায়গার কথাও মাথায় রাখতে হয়। সব রকম ব্যবহারের কথা মাথায় রেখে পার্কগুলির রক্ষণাবেক্ষণ করতে হয়। তাই কম বেশি এ ধরনের সমস্যা থাকবেই। তবে কোথায় কোন পার্কে কী খারাপ অবস্থা রয়েছে, তা অবিলম্বে দেখে জরুরি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ছবি: রণজিৎ নন্দী