আলিপুর থানায় হামলার দু’মাস পরে ওই ঘটনায় চার্জশিট জমা দিল পুলিশ। লালবাজার সূত্রের খবর, সেই চার্জশিটে রাজ্যের এক প্রভাবশালী মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত প্রতাপ সাহার নাম নেই। গত ১৪ নভেম্বর আলিপুরে একটি সরকারি জমিতে আবাসন তৈরির কাজে বাধা দেওয়া নিয়ে গোলমালের সূত্রপাত। তা থেকেই স্থানীয় একটি কলোনির বাসিন্দারা আলিপুর থানায় হামলা চালায় বলে অভিযোগ। ওই হামলায় প্রতাপ পরিকল্পনা ও উস্কানি দিয়েছেন বলেও অভিযোগ উঠেছিল।
পুলিশ সূত্রের খবর, শনিবার আলিপুর আদালতে জমা দেওয়া চার্জশিটে তদন্তকারীরা দাবি করেছেন, থানায় হামলার ঘটনায় কোনও পূর্ব-পরিকল্পনা ছিল না। যা থেকে অনেকেই মনে করছেন, প্রতাপকে বাঁচাতেই গোটা ঘটনাকে আকস্মিক বলে ব্যাখ্যা করতে চেয়েছে পুলিশ।
১৪ নভেম্বর রাতেই থানায় হামলার ঘটনায় পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। কিন্তু ১৫ নভেম্বর আদালতে হাজির করানোর পরে রীতিমতো ভর্ৎসনা সইতে হয়েছিল পুলিশকে। আদালতে দাখিল করা তথ্যে পুলিশ জানিয়েছিল, ওই পাঁচ জনের বাড়ি আলিপুর থেকে দূরে একেবারে অন্য এলাকায়। থানায় হামলার ঘটনার সঙ্গে তাঁদের প্রত্যক্ষ প্রমাণও পেশ করতে পারেনি পুলিশ। লালবাজার সূত্রের খবর, প্রতাপের নাম না-থাকলেও ওই পাঁচ জনের নাম চার্জশিটে রয়েছে। রয়েছে ঘটনায় ধৃত স্থানীয় তৃণমূলকর্মী যোগেশ বোরার নাম। এ ছাড়া, আরও দশ জনের নাম ওই চার্জশিটে রয়েছে।
ঘটনার পর থেকেই পুলিশের বিরুদ্ধে শাসক দলকে বাঁচানোর চেষ্টার অভিযোগ উঠেছিল। পুলিশের একাংশের বক্তব্য ছিল, শাসক দল এবং রাজ্যের এক প্রভাবশালী মন্ত্রীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণেই প্রতাপ ও তাঁর ঘনিষ্ঠদের ধরছেন না আলিপুর থানার ওসি বুদ্ধদেব কুণ্ডু। এই অভিযোগ এবং আদালতে তিরস্কৃত হওয়ার পরেই তদন্তকারী অফিসারকে সরিয়ে ওই থানার অতিরিক্ত ওসি-র হাতে তদন্তভার দেওয়া হয়। আলিপুর থানার ওসি বুদ্ধদেব কুণ্ডুর বদলে তদন্ত দেখভালের দায়িত্ব পান এক সহকারী কমিশনার।
সে সময়ে লালবাজারের একাংশের বক্তব্য ছিল, নিরপেক্ষ তদন্তের জন্যই ওসি এবং তদন্তকারী অফিসারকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এ দিন চার্জশিট জমা দেওয়ার খবর শুনে তাঁরা অনেকেই বলছেন, ওই সিদ্ধান্ত নিছকই লোক দেখানো ছিল। এ ব্যাপারে বুদ্ধদেববাবুকে প্রশ্ন করা বলে তিনি বলেন, “আমি এ নিয়ে কিছু বলব না।” সংশ্লিষ্ট প্রভাবশালী মন্ত্রীকেও রাত পর্যন্ত যোগাযোগ করা যায়নি।
পুলিশের আর একটি সূত্রের দাবি, ওই চার্জশিটে নাম থাকা অনেকেই প্রতাপের ঘনিষ্ঠ। তার মধ্যে আট জন ওই কলোনির বাসিন্দা। বাকি দু’জন চেতলা এলাকার তৃণমূলকর্মী বলে পরিচিত। এ ব্যাপারে প্রতাপের মন্তব্য জানতে ফোন করা হলে তিনি বলেন, “যা ইচ্ছে লিখুন। আমি কিছু বলব না।”
হামলার ঘটনায় প্রথমে গ্রেফতার হওয়া সেই পাঁচ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া নিয়েও ব্যাখ্যা দিয়েছে পুলিশ। কলকাতা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “বিস্তারিত তদন্তে ওই পাঁচ জনের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রমাণ মিলেছে। তার ভিত্তিতেই চার্জশিট দেওয়া হয়েছে।” পুলিশ সূত্রের খবর, চার্জশিটে পুলিশ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ছ’টি ধারায় (১৪৩- বেআইনি জমায়েত, ১৪৭- গোলমাল বাধানো, ১৪৯- একই উদ্দেশ্যে অপরাধমূলক কাজ করার জন্য জড়ো হওয়া, ৩৫৩- সরকারি কর্মীর উপরে আক্রমণ, ২৮৩- জোর করে রাস্তায় বাধা সৃষ্টি করা এবং সরকারি সম্পত্তি নষ্টের ৩ নম্বর ধারা) অভিযোগ এনেছে।