অটো আছে, তবুও প্রতীক্ষা। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়।
ব্যস্ত সড়কে যাত্রী বেড়েছে। বেড়েছে অটোও। তবু ডানলপ থেকে ব্যারাকপুর রুটের অধিকাংশ যাত্রী ডানলপ বা ব্যারাকপুরে অটোর জন্য দীর্ঘ ক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকেন। ডানলপে ব্যারাকপুর লেখা অটোগুলি দাঁড়িয়ে থাকলেও ডানলপ ব্রীজের নীচ থেকে সাধারণত ব্যারাকপুরের যাত্রী তোলে না। যাত্রীরা জিজ্ঞাসা করলে অটোচালকদের সাফ জবাব, ‘‘ভাড়ায় পোষাবে না তাই পুরো রুট যাব না।’’
ডানলপ থেকে সোদপুর আবার সোদপুর থেকে ব্যারাকপুর। কাটা রুটের এই শর্ত না-মানলে এ পথে যাওয়া যায় না। ডানলপ থেকে ব্যারাকপুর পর্যন্ত ভাড়া ২০টাকা। অটোচালকদের যুক্তি, ডানলপ থেকে সোদপুর পর্যন্ত অটোর ভাড়া ১০টাকা। আর সোদপুর থেকে ব্যারাকপুর পর্যন্তও ১০টাকা। একই ভাড়া দিয়ে যেতে অসুবিধা কোথায়? বেলঘরিয়ার বাসিন্দা কুহেলি ভট্টাচার্য বা কাকলি মজুমদারদের অভিযোগ, ভাড়া একই হলেও নানা সমস্যা হয়। সোদপুরেও পাঁচ জন যাত্রী ছাড়া অটো ছাড়ে না। বার বার ওঠা-নামায় সময় নষ্টের পাশাপাশি হয়রানি হয়। প্রবীণ এবং মহিলাদের পক্ষে অটোর সামনে একফালি কাঠের আসনে চালক-সহ তিন জন গুঁতোগুঁতি করে যেতে হয়।
পরিবহণ দফতরের নির্দেশে খুশি মতো রুট ভাঙা বা পাঁচ জন যাত্রী তোলা বেআইনি। কিন্তু অভিযোগ, এখানে সে সব তোয়াক্কা করা হয় না। পুলিশের কাছে অভিযোগ জমাও পড়েছে। কামারহাটির তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র নিজে নির্দিষ্ট রুটে অটো চলছে কি না খতিয়ে দেখতে রাস্তায় নেমেছিলেন। মন্ত্রী বলেছিলেন, ‘‘বেশি রাতে অটো কম থাকে। তখন যাত্রীদের কথা ভেবেই পাঁচ জন যাত্রী তোলায় ছাড় দেওয়া যায়। কিন্তু তা বলে ব্যস্ত সময়ে রাস্তায় পাঁচ জনকে তোলা কোনও ভাবেই বরদাস্ত করা হবে না।’’ ব্যারাকপুর কমিশনারেট ফেসবুকে এক সময়ে রীতিমতো ফলাও করে রাস্তায় যে কোন সমস্যার অভিযোগ জানানোর জন্যে বিজ্ঞাপন দিয়েছিল। প্রথম দিকে কিছু ক্ষেত্রে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ায় হয়েছিল। তার পরে যে-কে-সেই। ডিসি (ট্রাফিক) দেবাশিস বেজ বলেন, ‘‘ফেসবুকে বা সরাসরি, যে ভাবেই অভিযোগ আসুক আমরা তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা নিই। কিন্তু কাটা রুটে অটো চালানোর বিষয়টি পরিবহণ দফতর-সহ সংশ্লিষ্ট সব দফতরের সঙ্গে আলোচনা করে আটকাতে হবে।’’
অটোচালকদের অভিযোগ, রুট নিয়ে সমস্যা হলে ইউনিয়নের নেতারা পুলিশের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। ব্যারাকপুর থেকে ডানলপের মধ্যে একটি মাত্র সিএনজি ফিলিং স্টেশন আছে। এই রুট এবং পাশাপাশি ছোট রুটগুলিতে বৈধ ও অবৈধ মিলিয়ে প্রায় তিন হাজার অটো চলে। এত অটোর জন্য একটি ফিলিং স্টেশন যথেষ্ট নয়। তাই গ্যাস ভরতে সিঁথির মোড় বা পলতা যেতে হয়। অটোচালক অধীর সরকার বলেন, ‘‘ব্যারাকপুর থেকে ডানলপ এক পিঠেই ৩৫ টাকার গ্যাস খরচ হয়ে যায়। তার উপর অটো বেশি হওয়ায় ইউনিয়ন এক বেলার বেশি চালাতে দেয় না। আমাদের কী করে চলবে?’’ ব্যারাকপুর, টিটাগড়, খড়দহ, সোদপুর এই রুটের একাধিক জায়গায় ব্যাঙের ছাতার মতো ইউনিয়ন গজিয়ে উঠেছে। অটোচালকেরাই জানান, অটোর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় খুবই সমস্যা হয়। অবৈধ অটো নিয়ে ইউনিয়নের কাছে আপত্তি করেও ফল হয়নি বলে তাঁদের অভিযোগ। ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের সভাপতি অর্জুন সিংহ বলেন, “কোনও অটোচালক নিয়ম মানছেন না, এমন অভিযোগ পেলে আমরা সেই অটোচালককে জিজ্ঞাসাবাদ করে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। এ বিষয়ে যাত্রীরা তাঁদের অভিযোগ সংশ্লিষ্ট থানায়ও জানাতে পারেন।”
পরিবহণমন্ত্রী বলেন, “অটোর দৌরাত্ম্য বা গন্তব্যে যেতে না চাওয়া নিয়ে অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট পরিবহণ দফতর বা পুলিশকে জানান। সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”