সন্ধ্যারাতে হঠাৎ বিকট আওয়াজ। ঘর থেকে ছুটে বেরিয়ে আসেন উল্টোডাঙা উড়ালপুলের নীচে দু’পাশের বস্তির বাসিন্দারা। শব্দ কীসের? আলো-আঁধারিতে উৎসটা খুঁজতে থাকেন তাঁরা। তার মধ্যেই গোঙানি শুনে তাঁরা দেখেন, রক্তাক্ত অবস্থায় দু’টি বাড়ির টালি ও টিনের চালের খাঁজে আটকে আছেন এক তরুণী।
খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে বছর কুড়ির ওই তরুণীকে উদ্ধার করে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় এলাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে। রবিবার রাত ৮টা ৪০ মিনিট নাগাদ ঘটনাটি ঘটে ভেঙে পড়া উল্টোডাঙা উড়ালপুলের চালু থাকা একটি লেনের নীচের বস্তিতে। পুলিশ জানায়, ওই উড়ালপুলের বাইপাস থেকে ভিআইপি রোডমুখী লেন থেকেই ওই তরুণী নীচে ঝাঁপ দেন।
ঠিক কী ঘটেছিল?
পুলিশি সূত্রের খবর, তরুণীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তারা জেনেছে, তিনি বনগাঁর বাসিন্দা। কাজ করেন একটি বেসরকারি সংস্থায়। এ দিন পরিচিত এক যুবকের মোটরসাইকেলে চেপে তিনি ভিআইপি রোডের দিকে যাচ্ছিলেন। ওই যুবক কেষ্টপুরের রবীন্দ্রপল্লির বাসিন্দা। কোনও একটি বিষয় নিয়ে তাঁদের মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। উল্টোডাঙা উড়ালপুলের উপরে মোটরবাইক দাঁড় করিয়ে বচসায় জড়িয়ে পড়েন তাঁরা। তার পরেই তিনি ঝাঁপ দেন বলে ওই তরুণী পুলিশকে জানিয়েছেন।
উল্টোডাঙা-হাডকো মোড়ে একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ওই তরুণী। মানিকতলা থানার পুলিশ হাসপাতালে তাঁর বয়ান লিপিবদ্ধ করেছে। হাসপাতাল সূত্রের খবর, গুরুতর আহত অবস্থায় ভর্তি করানো হয়েছে তরুণীকে। তাঁর মাথা, ঘাড় ও কোমরে আঘাত রয়েছে।
২০১৩ সালের মার্চের এক ভোরে ওই উড়ালপুলের একটি লেন খালের উপরে ভেঙে পড়ে। সেটির মেরামতি চলছে। পাশের লেনটি কিছু দিন বন্ধ রাখার পরে ফের খুলে দেওয়া হয়। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, তরুণীটি উড়ালপুলের ওই লেনেরই নীচে, উল্টোডাঙা স্টেশন যাওয়ার রাস্তার ধারে বস্তির দু’টি ঘরের টালি ও টিনের চালের খাঁজে আটকে গিয়েছিলেন। তাঁর মাথা ও নাক-মুখ থেকে অঝোরে রক্ত ঝরছিল। ‘আমাকে বাঁচাও’ ‘আমাকে বাঁচাও’ বলে কাতরাচ্ছিলেন তিনি। ওই তরুণী স্থানীয় বাসিন্দাদের জানান, তাঁর মোবাইলটা ওখানেই পড়ে গিয়েছে। বাসিন্দারা মোবাইল খুঁজে পেয়ে তরুণীকে দেন। খবর পাঠানো হয় পুলিশের কাছে।
তরুণীর বয়ান যাচাই করছেন তদন্তকারীরা। তিনি সত্যি সত্যি নিজেই ঝাঁপ দিয়েছিলেন, নাকি অন্য কোনও রহস্য রয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তাঁর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে পুলিশ। তরুণীর সঙ্গী যুবকের খোঁজ চলছে। তরুণী ওই উড়ালপুল থেকে নীচে পড়ে যাওয়ার সময় যুবকটি ঘটনাস্থলে ছিল কি না, তা জানারও চেষ্টা করছে পুলিশ।