ধর্মতলায় সভা করতে এসে বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ বলেছিলেন, “কলকাতায় এক বার আপনারা বিজেপি-র মেয়র দিন! বিজেপি রাজ্যে আপনাদের সরকার দেবে।” সেই স্বপ্ন পূরণে এ বার সোশ্যাল মিডিয়াকে আরও বেশি হাতিয়ার করার সিদ্ধান্ত নিল বিজেপি।
অমিতের জনসভার দেড় মাসের মধ্যে কলকাতায় এসে এ শহরের পুরভোটের প্রস্তুতি বৈঠক করলেন বিজেপি-র কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) রামলাল এবং এ রাজ্যে দলের পর্যবেক্ষক সিদ্ধার্থনাথ সিংহ। রাজ্য বিজেপি-র প্রতি তাঁদের পরামর্শ, ফেসবুকে কলকাতা পুরসভার প্রত্যেক ওয়ার্ডের জন্য পৃথক অ্যাকাউন্ট খোলা হবে। প্রত্যেকটি অ্যাকাউন্ট আবার গাঁথা হবে এক সূত্রে। প্রত্যেক ওয়ার্ডের অ্যাকাউন্টে সেখানকার সমস্যা, সমাধানের পথ ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করতে পারবেন নাগরিকরা। নেতারা বলছেন, এতে দলের বক্তব্য ভোটারদের বোঝানো-সহ সামগ্রিক জনসংযোগ সহজ হবে।
এ রাজ্যে উদীয়মান শক্তি বিজেপি-র এখন ‘পাখির চোখ’ ২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচন। এ বছরে পুরভোটকে তারই মহড়া হিসেবে দেখছে তারা। সে জন্যই দলের সর্বভারতীয় সভাপতি স্বয়ং কলকাতার পুরভোট নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন। বিজেপি-র কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন)-কে সাধারণত পুরভোটের মতো স্থানীয় স্তরের নির্বাচন নিয়ে উদ্যোগী হতে দেখা যায় না। কিন্তু এ বার বাংলায় দেখা যাচ্ছে।
বিজেপি-র কলকাতার চার সাংগঠনিক জেলার সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, নির্বাচনী পর্যবেক্ষক ও সোশ্যাল মিডিয়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের নিয়ে সোমবার বৈঠক করেন রামলাল ও সিদ্ধার্থনাথ। সূত্রের খবর, সেখানে ঠিক হয়, তৃণমূল শাসিত কলকাতা পুরসভার ব্যর্থতা এবং ত্রিফলা, লেক মল-সহ বিভিন্ন কেলেঙ্কারির কথা প্রচার করা হবে। প্রতি ওয়ার্ডের সমস্যা, দাবি এবং তৃণমূল জমানার অভিজ্ঞতা নিয়ে আলাদা আলাদা পুস্তিকা করার কথা উঠলেও তা থেকে পিছিয়ে এসে প্রত্যেক ওয়ার্ডের জন্য পৃথক ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খোলার কথা ভাবা হয়েছে। বেহালা, রাসবিহারী, কসবার মতো জায়গায় সে কাজ শুরুও হয়েছে।
অমিত শাহের মতোই রামলালও দলের বুথ স্তরের সংগঠন মজবুত করতে বলেছেন। বিজেপি-র রাজ্য নেতৃত্ব রামলালকে জানিয়েছেন, তৃণমূলের হামলায় সংগঠন বিস্তার কঠিন হয়ে যাচ্ছে। তা ছাড়া দলেরই অনেকে তৃণমূলের আর্থিক প্রলোভনের ফাঁদে পা দিচ্ছেন। ফলে সদস্য সংগ্রহও ধাক্কা খাচ্ছে। পুরভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী আসবে না। রাজ্য পুলিশ দিয়ে ভোট হবে। ফলে সেখানে তৃণমূলের হামলার মুখে পড়তে হবে। রামলাল জানিয়েছেন, রাজ্য নেতৃত্বকেই ঠিক করতে হবে, কী করে হিংসা এড়িয়ে প্রত্যেক ওয়ার্ডে জয়ের জন্য ঝাঁপানো যায়। এখন কলকাতা পুরসভায় তিনটি ওয়ার্ড বিজেপি-র দখলে। দলের এক রাজ্য নেতার কথায়, “এত দিন মানুষ ভাবত, বিজেপি কি পারবে? এখন মানুষ ভাবছে, বিজেপি-ই পারবে! তাই এ বার আমরা তিনটি ওয়ার্ডে সন্তুষ্ট হব না।”
বিজেপি সূত্রের খবর, দলের সুদিনে অনেকেই পুরভোটে প্রার্থী হতে চাইছেন! ফলে বহু ক্ষেত্রেই যোগ্যতর প্রার্থীর নাম বাদ দেওয়ার চেষ্টা চলছে। সুদিনের এই বিড়ম্বনা নিয়েও রামলালের সঙ্গে কথা বলেন রাজ্য নেতারা।