ডাকঘরে পাসবই বাড়ন্ত, গ্রাহক-ভোগান্তি চরমে

পাসবইয়ের অভাবে শহরের বিভিন্ন ডাকঘরে পরিষেবা মার খাচ্ছে। ফিরে আসতে হচ্ছে গ্রাহকদের। রেকারিং ডিপোজিট, সেভিংস অ্যাকাউন্ট খোলা আপাতত বন্ধ। টার্ম ডিপোজিট করতে গেলেও পাসবই মিলছে না। ডাক-কর্তৃপক্ষ দাবি করেছেন, সমস্যা ছিল, এখন মিটে গিয়েছে। গ্রাহকদের অবশ্য অভিযোগ, ডাক-কর্তৃপক্ষের এই দাবি ভিত্তিহীন। বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থায় টাকা রেখে এ রাজ্যের বহু মানুষ প্রতারিত হন।

Advertisement

সোমনাথ চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০১৪ ০২:৩২
Share:

পাসবইয়ের অভাবে শহরের বিভিন্ন ডাকঘরে পরিষেবা মার খাচ্ছে। ফিরে আসতে হচ্ছে গ্রাহকদের। রেকারিং ডিপোজিট, সেভিংস অ্যাকাউন্ট খোলা আপাতত বন্ধ। টার্ম ডিপোজিট করতে গেলেও পাসবই মিলছে না। ডাক-কর্তৃপক্ষ দাবি করেছেন, সমস্যা ছিল, এখন মিটে গিয়েছে। গ্রাহকদের অবশ্য অভিযোগ, ডাক-কর্তৃপক্ষের এই দাবি ভিত্তিহীন। বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থায় টাকা রেখে এ রাজ্যের বহু মানুষ প্রতারিত হন। তখন প্রশাসনের তরফে মানুষকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, প্রতারণা থেকে বাঁচতে তাঁরা যেন ডাকঘরে টাকা রাখেন। কিন্তু সেখান থেকেও খালি হাতে ফিরছেন গ্রাহকরা। এই অবস্থায় স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্প মার খেতে পারে বলে মনে করছেন সরকারি কর্তাদের একাংশ।

Advertisement

যেমন, সল্টলেকের এ ই ব্লকের ডাকঘরে পাসবই বাড়ন্ত। ওই ডাকঘরটি বেলেঘাটা সদর ডাকঘরের অধীনে। এ ই ব্লক ডাকঘরের এক অফিসার বলেন, “পাসবই না পেয়ে গ্রাহকেরা ফিরে যাচ্ছেন, এই তথ্য ঠিক নয়। গ্রাহকদের তথ্য কম্পিউটারে নথিভুক্ত করে খাতায় নাম-ঠিকানা লিখে রাখা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, পাসবই এলে জানানো হবে।”

কার্যত একই অবস্থা দক্ষিণ কলকাতা এবং শহরতলির বিভিন্ন ডাকঘরেও। এ রকম প্রায় ৬৫টি ডাকঘর টালিগঞ্জ সদর ডাকঘরের অধীনে। সন্তোষপুর ডাকঘরের এক কর্তা বলেন, “কয়েক মাস ধরে গ্রাহকদের পাসবই দেওয়া যাচ্ছে না। এমনিতে ২০০টি করে পাসবই চাওয়ার রেওয়াজ। পর্যাপ্ত বই না থাকায় টালিগঞ্জ থেকে মঞ্জুর করছিল ১০০টি করে। তা আট-দশ দিনেই ফুরিয়ে যাচ্ছে।” টালিগঞ্জ সদর ডাকঘরের এক কর্তা বলেন, “প্রতিদিন বিভিন্ন ডাকঘর থেকে পাসবইয়ের আর্জি জানিয়ে চিঠি পাচ্ছি। ঘাটকি মেটানোর দ্রুত চেষ্টা চলছে।”

Advertisement

কেন এই হাল? চিফ পোস্টমাস্টার জেনারেল (বেঙ্গল সার্কল)-এর দফতর থেকে বলা হয়, “সহ-অধিকর্তা (সেভিংস ব্যাঙ্ক) অর্থাত্‌ ‘এডি এসবি’ এটা বলতে পারবেন।” এডি এসবি প্রশান্ত হালদার মেনে নিয়েছেন, পাসবইয়ের ঘাটতি আছে। তিনি জানান, ঘাটতির পরিমাণ বলতে পারবে ‘মেটিরিয়াল ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড পোস্টাল অর্গানাইজেশন’ (এমএমপিও) বিভাগ। ওই বিভাগের সহ-অধিকর্তা ঝন্টু রাউথ বলেন, “পাসবই ছাপানোর অনুমতি ও নির্দেশ দেওয়ার কাজ আমাদের। আমরা প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়েছি। বিশদ বলতে পারবে ‘পোস্টাল স্টোর্স ডিপো’ (পিএসডি)।” পিএসডি-র এক পদস্থ অফিসার অবশ্য দাবি করেছেন, “পাসবইয়ের ঘাটতি ছিল। এখন আর নেই।”

ডাকঘরগুলির দাবি ও বিভিন্ন বিভাগের চাপান-উতোর যা-ই হোক, গ্রাহক-ভোগান্তি চলছেই। সল্টলেকের সি সি ব্লকের ডাকঘর থেকে পাসবই চাওয়া হয়েছে বেলেঘাটা ডাকঘরের পোস্টমাস্টারের কাছে। কিন্তু বেলেঘাটা সদর ডাকঘর থেকে জানানো হচ্ছে, পাসবই তাদের কাছেও নেই। আমানতকারীরা যাতে বিক্ষোভ দেখাতে না পারেন, সে জন্য স্থানীয় থানায় বিষয়টি জানিয়ে রাখতে বলা হয়েছে। বাগুইআটি থেকে সল্টলেক, লেকটাউন, তিলজলা, তপসিয়া-সহ বিশাল এলাকার ৪৮টি ডাকঘর বেলেঘাটা সদর ডাকঘরের অধীনে। এগুলির প্রায় প্রতিটিতেই গত দু’সপ্তাহ ধরে পাসবইয়ের আকাল। বেলেঘাটা সদর ডাকঘরের এক অফিসার বলেন, “কাশীপুরে ডাক-ছাপাখানাকে জানিয়েছি। অবিলম্বে ২০-৫০ হাজার পাসবই চাই। না হলে সমস্যা বাড়বে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement