নারকেলডাঙায় দুষ্কৃতীর গুলি, জখম ২

বড়দিনের সকালে নারকেলডাঙা মেন রোডে দুষ্কৃতীদের গুলিতে জখম হলেন দু’জন। পুলিশের দাবি, এর পিছনে রয়েছে স্থানীয় দু’দলের মধ্যে এলাকা দখলের লড়াই। খোদ পুলিশই বলছে, এলাকায় দাপট কায়েম রাখা নিয়ে দুই গোষ্ঠীর গোলমাল লেগেই থাকে। তার পরেও কেন এলাকাবাসীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয় না, এই ঘটনায় ফের প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়ে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:০১
Share:

বড়দিনের সকালে নারকেলডাঙা মেন রোডে দুষ্কৃতীদের গুলিতে জখম হলেন দু’জন। পুলিশের দাবি, এর পিছনে রয়েছে স্থানীয় দু’দলের মধ্যে এলাকা দখলের লড়াই। খোদ পুলিশই বলছে, এলাকায় দাপট কায়েম রাখা নিয়ে দুই গোষ্ঠীর গোলমাল লেগেই থাকে। তার পরেও কেন এলাকাবাসীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয় না, এই ঘটনায় ফের প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়ে।

Advertisement

বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৭টা নাগাদ নারকেলডাঙা পোস্ট অফিসের সামনে স্কুটি-আরোহী দুই ব্যক্তিকে লক্ষ করে গুলি ছোড়ে এক দল দুষ্কৃতী। পুলিশ জানায়, জখম স্কুটি চালকের নাম সেলিম হোসেন। পিছনে বসা সঙ্গীর পরিচয় অবশ্য জানাতে পারেনি পুলিশ। সেলিমের হাতে এবং অন্য জনের পায়ে চোট লেগেছে। দু’জনকেই ভর্তি করা হয়েছে এনআরএস হাসপাতালে।

পুলিশ সূত্রে খবর, এলাকার দখল কার হাতে থাকবে, তা নিয়ে সেলিম হোসেন এবং সুরিন্দর পাল সিংহ ওরফে গুগগির লড়াইয়ে মাঝে মধ্যেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে নারকেল ডাঙা মেন রোড। মাস পাঁচেক আগেও প্রকাশ্যে দু’দলের গুলির লড়াই হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এ দিনের ঘটনায় সুরিন্দর ও তার দলবলের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছে সেলিম। অভিযুক্তদের সন্ধানে তল্লাশি শুরু হলেও রাত পর্যন্ত কারও হদিস মেলেনি বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। এলাকাবাসীদের একাংশ জানান, সেলিমের বিরুদ্ধে এলাকায় তোলাবাজি থেকে বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজের অভিযোগ রয়েছে। তাঁদের দাবি, সুরিন্দররা সেলিমের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়নোয় এলাকায় সেলিমের দাপট আগের চেয়ে অনেকটাই কমেছে।

Advertisement

অভিযোগ, গত বছর নভেম্বর মাসে প্রকাশ্যেই নারকেলডাঙা মেন রোডে সুরিন্দরকে লক্ষ করে গুলি চালিয়েছিল সেলিম ও তার দলবল। গুলি সুরিন্দরের বাঁ পায়ের উরু ভেদ করে বেরিয়ে যায়। তাঁর সহকর্মী প্রেমনাথ ঠাকুর জানান, এ দিন সকালে তাঁরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। তখনই সেলিম ও আর এক ব্যক্তি স্কুটি চেপে যাচ্ছিল। পিছনে একটি স্কুটারে দু’জন মাফলারে মুখ ঢেকে যাচ্ছিল। ওই স্কুটার থেকেই সেলিমকে লক্ষ করে গুলি চালানো হয় বলে দাবি করে প্রেমনাথ বলেন, “আমাদের কেউ গুলি চালায়নি। আমাদের ফাঁসাতেই এই ছক কষা হয়েছে। সেলিম কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ ও তৃণমূল কাউন্সিলর স্বপন সমাদ্দারের ছত্রছায়ায় রয়েছে।” যদিও স্বপনবাবু বলেন, “সেলিমকে আমি চিনি না। শুনেছি, এক সময়ে সিপিএম করত। সুরিন্দররা সিপিএম ছেড়ে আরএসপি করছে।”

লালবাজার সূত্রের খবর, ওই এলাকায় সুরিন্দররা ডাকাবুকো বলেই পরিচিত। আরএসপি-র যুব সংগঠনের নারকেলডাঙা আঞ্চলিক কমিটির সম্পাদক সুরিন্দর ২০০৫ সাল থেকেই সেলিমের দাপট কমাতে এলাকায় পাল্টা দাপট বিস্তার শুরু করে। পুলিশ বলছে, এলাকায় দাপট কায়েমের জন্য দু’পক্ষের প্রায়শই গোলমাল হয়। আগে সেলিম এলাকার হাট থেকে তোলা তুলত। এখন বস্তি এলাকায় বহুতল নির্মাণ শুরু হওয়ায় সেখান থেকেও টাকা আদায়ে হুমকি দেওয়া শুরু করেছিল। সুরিন্দর ও তার দলের ঠিকাদারি ও ইমারতি দ্রব্য সরবরাহের ব্যবসা আছে। পুলিশের একাংশের বক্তব্য, সেলিম যেমন এলাকায় ত্রাস বলে পরিচিত, সুরিন্দররদের সেই পরিচিতি নেই। তাঁদের বিরুদ্ধে পুলিশের খাতায় অভিযোগ থাকার কথা স্বীকার করে প্রেমনাথ বলেন, “সেলিম ও তার দলবল আমাদের নামে বেশ কয়েক বার মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেছে। কিন্তু সব ক’টাতেই জামিন পেয়েছি আমরা।”

কিন্তু সাতসকালে শহরের ব্যস্ত রাস্তায় গুলি চালানোর অভিযোগ ওঠার পরেও কোনও কিনারা করা যাচ্ছে না কেন? পুলিশের বক্তব্য, এই ঘটনার পরে সেলিম তাঁর বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর সকলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে। প্রত্যেকের খোঁজেই তল্লাশি চলছে। এলাকায় পুলিশ পিকেট বসেছে। পুলিশের আর একটি সূত্র জানাচ্ছে, আগে গুন্ডামি এবং বোমাবাজির অভিযোগে সেলিমের বাড়িতে হানা দেয় পুলিশ। বাড়ি থেকে ইট-পাথর-গরম জল ছোড়া এবং বোমাবাজি শুরু হলে শেষ পর্যন্ত পুলিশ ফিরে আসে।

সংঘর্ষে জখম এক। এলাকা দখলকে কেন্দ্র করে বুধবার রাতে দুই দুষ্কৃতীর সংঘর্ষের জেরে আহত হল তাদেরই এক জন। ঘটনাটি ঘটেছে বেনিয়াপুকুর থানা এলাকার হাতিবাগানের একটি বহুতলে। পুলিশ জানায়, রহিস নামে আহত ওই ব্যক্তি এনআরএসে ভর্তি। এই ঘটনায় গ্রেফতার হয়েছে সাজিদ নামে এক যুবক। লালবাজার সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার তপসিয়া থেকে ধরা হয় তাকে। পুলিশ জানায়, সাজিদের বিরুদ্ধে একাধিক অপরাধের অভিযোগ রয়েছে।

প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের দাবি, ওই রাতে তপসিয়া এলাকা থেকে অটো করে পদ্মপুকুরে আসে সাজিদ। সেই সময়ে ওই আবাসনে ছিলেন রহিস। সাজিদ প্রথমে রহিসের কাছে জানতে চায় কেন সে এলাকায় ঢুকেছে। তদন্তকারীদের দাবি, এলাকার দখল নিয়ে বচসা বাধে দু’জনের। আচমকাই নিজের কাছে থাকা দেশি রিভলভার থেকে রহিসকে লক্ষ করে গুলি করে সাজিদ। পুলিশ জানায়, রহিসের তলপেটে গুলি লাগে। স্থানীয় বাসিন্দারাই রহিসকে এনআরএসে ভর্তি করান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন