নিলামে উঠছে সস্তার সিডি প্লেয়ারও

চলছে নিলাম! হাতুড়ির তিন ঠোকাতেই নির্ধারণ হয়ে যায় সর্বোচ্চ দাম। কিন্তু কীসের নিলাম? না, কোনও রাজা-মহারাজার সংগ্রহ নয়, হাল আমলের কাঠের আসবাব, ডেস্কটপ, শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র, সিডি প্লেয়ার থেকে শুরু করে জামা-কাপড়ের নিলাম। সময়ের সঙ্গে এ শহরের নিলামঘরগুলির মান কি তা হলে পড়ে গিয়েছে?

Advertisement

বিভূতিসুন্দর ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০১৪ ০৩:৫৮
Share:

রাসেল স্ট্রিটের একটি নিলামঘর। —নিজস্ব চিত্র।

চলছে নিলাম! হাতুড়ির তিন ঠোকাতেই নির্ধারণ হয়ে যায় সর্বোচ্চ দাম। কিন্তু কীসের নিলাম? না, কোনও রাজা-মহারাজার সংগ্রহ নয়, হাল আমলের কাঠের আসবাব, ডেস্কটপ, শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র, সিডি প্লেয়ার থেকে শুরু করে জামা-কাপড়ের নিলাম। সময়ের সঙ্গে এ শহরের নিলামঘরগুলির মান কি তা হলে পড়ে গিয়েছে?

Advertisement

বিদেশের সদবিজ বা ক্রিস্টিজ-এর মতো নিলামঘর যেখানে আজও বজায় রেখেছে তাদের নিলামের মান আর ঐতিহ্য সেই তুলনায় কলকাতার নিলামঘরগুলি যেন ম্লান হয়ে এসেছে। আগে পার্ক স্ট্রিট, রাসেল স্ট্রিট বা ডালহৌসির নিলামঘরে চলত রমরমিয়ে ব্যবসা। তবে সে দিন আর নেই! বন্ধ হয়েছে এ শহরের বেশির ভাগ নিলামঘর। আজ ভরসা রাসেল স্ট্রিটের তিনটি নিলামঘর। প্রতি রবিবার রাসেল স্ট্রিটের নিলামঘরগুলিতে পুরনো জিনিসের হাতছানিতে আজও ভিড় করেন নানা বয়সের মানুষ।

রাসেল স্ট্রিটের রাসেল এক্সচেঞ্জ-এর আরসদ সেলিম বললেন, “শুধু অ্যান্টিক আসবাব কিংবা শৌখিন জিনিস নয়। এখানে নিলাম হয় জামাকাপড় থেকে শুরু করে হাল আমলের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম এবং দৈনন্দিন ব্যবহারের জিনিসও। প্রতি বৃহস্পতিবার হয় পুরনো জামাকাপড়ের নিলাম আর প্রতি রবিবার অন্যান্য জিনিসের নিলাম। ১০০ থেকে ১৫০জন ক্রেতা আজও আসেন। তবে বাজারে আজও ভাল চাহিদা আছে অ্যান্টিক আসবাব, ল্যাম্পশেড ও আয়নার। কিন্তু পুরনো জিনিসের উপর সাড়ে চোদ্দো শতাংশ সরকারি কর বসায় ব্যবসায় খারাপ প্রভাব পড়েছে। ক্রেতারা অনেকেই এটা মানতে চান না। অবশ্য ভাল জিনিসের চাহিদা আজও আছে। আগামী দিনেও থাকবে। আর নিলামের জিনিসের চাহিদা না থাকলে ব্যবসা চালানো কী সম্ভব হত?”

Advertisement

শোনা যায় এক সময় ব্যবসায় মন্দার কারণেই বন্ধ হয়েছিল এ শহরের স্টেনার কিংবা বা ডালহৌসি এক্সচেঞ্জের মতো নাম করা নিলামঘর। ঠিক তেমনই এক সময় এই ব্যবসাটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবেই নিয়েছিলেন সুমনস এক্সচেঞ্জ-এর শিব বক্সি। তিনি বললেন, “সারা বছরই চলে নানা সংস্থার বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ও আসবাবের নিলাম। অ্যান্টিক জিনিসপত্র আগের তুলনায় কম পাওয়া যায়। তবু সেগুলির ভাল চাহিদা আছে।” অন্য দিকে মডার্ন এক্সচেঞ্জ-এর সৈকত দের কথায়, “পুরনো শৌখিন জিনিস কমই আসে, সেই কারণেই সংগ্রাহকরা এখানে আসার আগ্রহ হারিয়েছেন।”

আজকের দিনে কারা আসেন নিলামে? রাসেল এক্সচেঞ্জ-এর আরসদ সেলিম জানালেন, নিত্য প্রয়োজনীয় নানা জিনিসের সন্ধানে আসেন সাধারণ মানুষ। এর পাশাপাশি আসেন মুম্বই ও বেঙ্গালুরুর আসবাব ব্যবসায়ীরা। এক সময় পুরনো জিনিস সংগ্রহ করতে আসতেন বিভিন্ন বনেদি পরিবারের বাবুরা। আজ ভরসা কেবল দৈনন্দিন জিনিসপত্র আর সাধারণ ক্রেতা।

আর কী বলছেন নিলামের ক্রেতারা? জীবনে প্রথম বার নিলামে এসে গড়িয়ার সুবোধ রায় মাত্র ৫০০ টাকায় পেয়েছিলেন এক জোড়া পোর্সেলিনের পুতুল। বাগবাজারের সৈকত চক্রবর্তী সে দিন মাত্র ১০০০ টাকায় পেয়েছিলেন পছন্দের সিডি সিস্টেম।

অবশ্য পুরনো ক্রেতাদের অনেকেই মনে করেন পড়ে গিয়েছে এ শহরে নিলামের মান। যেমন চোরবাগান শীল পরিবারের বিমানবিহারী শীল এক সময় মাঝে মাঝেই নিলামে যেতেন। তিনি জানালেন, পুরনো সেই জিনিসও নেই, খাস ক্রেতাও নেই। আজকাল নিলামে যা পাওয়া যায় তার বেশির ভাগ জিনিস কি আদৌ নিলামে ওঠার যোগ্য?

পুরনো লন্ঠন ও সিনেমার প্রজেক্টরের সংগ্রাহক নব্বই অতিক্রান্ত সুশীলকুমার চট্টোপাধ্যায় জানালেন, আগে নিয়মিত নিলামে গেলেও বছর দুয়েক আর যাওয়া হয় না। কারণ নিলামে সংগ্রহ করার মতো জিনিস এখন কমই আসে। আর যেগুলি আসে মনে হয় নিলামের মান আর নেই।

তবে পুরনো সেই নিলামের ঐতিহ্য আজও আছে গল্পের পাতায়। সত্যজিৎ রায়ের ছোটগল্প থেকে শুরু করে শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের ভূতের গল্পে ঘুরে ফিরে এসেছে নিলামঘর।

কিন্তু বাস্তবের নিলামঘর? তার দশা আজ নিলামওয়ালা ছে আনার মতো!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন