পুকুরে নেমে ডুবে মারা গেল ৩ কিশোর

সোমবার বাজার বন্ধ। তাই একবালপুর থেকে ময়দানে ফুটবল খেলতে গিয়েছিল ছ’সাত জন কিশোরের একটি দল। খেলার পরে কয়েক জন যায় ময়দানের একটি পুকুরে স্নান করতে। কিন্তু জল থেকে আর উঠতে পারেনি তারা। কয়েক মুহূর্তে পুকুরে তলিয়ে যায় তিন জন। সোমবার বিকেল চারটে নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে ময়দানের পার্ক স্ট্রিট লাগোয়া একটি পুকুরে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:৪৩
Share:

সোমবার বাজার বন্ধ। তাই একবালপুর থেকে ময়দানে ফুটবল খেলতে গিয়েছিল ছ’সাত জন কিশোরের একটি দল। খেলার পরে কয়েক জন যায় ময়দানের একটি পুকুরে স্নান করতে। কিন্তু জল থেকে আর উঠতে পারেনি তারা। কয়েক মুহূর্তে পুকুরে তলিয়ে যায় তিন জন। সোমবার বিকেল চারটে নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে ময়দানের পার্ক স্ট্রিট লাগোয়া একটি পুকুরে।

Advertisement

পুলিশ জানিয়েছে, মৃতদের নাম শেখ মজহর (১৫), শেখ সানি (১৫) ও শাহিদ (১৯)। বন্ধুদের তলিয়ে যেতে দেখে তাঁদের বাঁচাতে জলে ঝাঁপ দেয় শেখ জুম্মান নামে তাদেরই আর এক বন্ধু। কিন্তু বন্ধুদের উদ্ধার করতে পারেনি সে। নিজেও ডুবতে ডুবতে কোনও রকমে জল থেকে উঠে আসে। পুলিশ জানিয়েছে, তলিয়ে যাওয়া তিন কিশোরকে জল থেকে উদ্ধার করে এস এস কে এম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাদের মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। দেহগুলির ময়না-তদন্ত করা হবে।

দুর্ঘটনার খবর পেয়ে একবালপুর এলাকা থেকে ভিড় জমতে শুরু করে এসএসকেএম হাসপাতালে। হাসপাতালের মর্গের সামনে শুরু হয়ে যায় কান্নার রোল। কার কার মৃত্যু হয়েছে বুঝতে না পেরে প্রথমে ছোটাছুটি করতে থাকেন ওই কিশোরদের পরিজনেরা। ফুটবল খেলতে আসা বাকি ছেলেরাও তখন কান্নাকাটি করছে। এর মধ্যেই জানা যায়, শেখ জুম্মান নামে এক কিশোর পুকুরে যাওয়া দলটিতে ছিল। ওই কিশোরই জানায়, আড়াইটে নাগাদ ফুটবল খেলতে ময়দানে পৌঁছয় তারা। চারটে নাগাদ খেলা শেষ করে কয়েক জন ওই পুকুরে স্নান করতে নামে।

Advertisement

জুম্মান বলে, “ময়দানে যেখানে খেলছিলাম, পুকুরটা তার থেকে কিছুটা দূরে। আমরা চার জন যাই। প্রথমে মজহর ও সানি জলে নামে। সঙ্গে সঙ্গেই ওরা হাবুডুবু খেতে থাকে। ওদের দেখে বাঁচাতে নামে শাহিদ। দেখি শাহিদও তলিয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থায় আমিও ওদের বাঁচাতে জলে ঝাঁপ দিই। কিন্তু সামলাতে পারছিলাম না। কোনও মতে উপরে উঠে আসি।” ওই কিশোর জানায়, পুকুরটির আকার অনেকটা গর্তের মতো। ওই কিশোরেরা কেউ সাঁতার জানত না। তাই জলে নেমেই তলিয়ে যেতে থাকে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, জল থেকে উঠে এসে চিৎকার শুরু করে জুম্মান। ময়দানের ওই পুকুরটি এমনিতেই নির্জন এলাকায়। ওই কিশোরের চেঁচামেচিতে আশপাশের লোকেরা জড়ো হলেও কেউ নামতে সাহস পাননি। শেষ পর্যন্ত ময়দান থানার পুলিশের সঙ্গে আসেন দক্ষ সাঁতারুরা। তাঁরাই তিন কিশোরের নিথর দেহ উদ্ধার করেন।

এ দিন এসএসকেএমে গিয়ে দেখা যায়, ছেলেকে হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন শেখ সানির মা শাহিদা বিবি ও মজহরের বাবা শেখ ইউসুফ। ইউসুফ বলেন, “দুপুরে ছেলে বলল, খেলতে যাব। ছুটি ছিল, তাই বারণও করিনি। তার পরেই বিকেলে খবর এল, পাড়ার তিনটে ছেলে জলে ডুবে গিয়েছে। ছুটে হাসপাতালে এলাম। সেই তিন জনের মধ্যে যে আমার ছেলেও রয়েছে, স্বপ্নেও ভাবিনি!” শাহিদের মেসোমশাই শেখ কাল্লু বলেন, “ওকে মানুষ করব বলে উত্তরপ্রদেশ থেকে এখানে এনে আমার কাছে রেখেছিলাম। কী যে হয়ে গেল! ওর মা-বাবাকে কী বলব!”

একবালপুরের সুধীর বসু রোডের একটি বস্তিতে একই বাড়িতে ভাড়া থাকত ওই তিন কিশোর। মজহর ও সানি বাড়ির একতলায়, শাহিদ তিনতলায়। তাদের মৃত্যুর খবরে বাড়ির সামনে প্রতিবেশীদের ভিড় জমে যায়। বাড়ির মালিক শেখ ইয়াসিন বলেন, “খিদিরপুরের ফাইভ স্টার মার্কেটে কাপড়ের কাজ করত ওরা। ছুটিতে মাঝেমধ্যেই ময়দানে খেলতে যেত। বারণ করতাম। শীতকাল, তবু যে কেন জলে নামতে গেল!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন