পুজো দেখা তো বন্ধ, তা সত্ত্বেও ভোগান্তি কাটছে না দেশপ্রিয় পার্কে

দেশপ্রিয় পার্কে বিপদ যেন কাটছেই না! প্রথমে ছিল পাহাড়প্রমাণ ভিড়ের ঠেলা। আর এখন পুলিশের ‘গুঁতো’। দুয়ের চক্করে পড়ে বাড়ি থেকে ঢোকা-বেরোনোই দায় হয়ে উঠেছে মতিলাল নেহরু রোডের বাসিন্দাদের। ট্রাফিক সামলানোর মতো ওই এলাকার বাসিন্দাদের বাড়িতে ঢোকা বেরোনোর রাস্তাও বদলে দিয়েছে কলকাতা পুলিশ।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০১৫ ১৭:৪১
Share:

ষষ্ঠীর দিন সকালে।

দেশপ্রিয় পার্কে বিপদ যেন কাটছেই না! প্রথমে ছিল পাহাড়প্রমাণ ভিড়ের ঠেলা। আর এখন পুলিশের ‘গুঁতো’। দুয়ের চক্করে পড়ে বাড়ি থেকে ঢোকা-বেরোনোই দায় হয়ে উঠেছে মতিলাল নেহরু রোডের বাসিন্দাদের। ট্রাফিক সামলানোর মতো ওই এলাকার বাসিন্দাদের বাড়িতে ঢোকা বেরোনোর রাস্তাও বদলে দিয়েছে কলকাতা পুলিশ। এমনকী, বাসিন্দাদের কাছে আবাসিক প্রমাণপত্রও চাওয়া হচ্ছে। অথবা বলা হচ্ছে ফোন করে আত্মীয়কে ডেকে আনতে। এমনটাই অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের।

Advertisement

সোমবার সকালে বাড়ি থেকে ব্যক্তিগত কাজে বেরিয়েছিলেন রাজীব চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু, দুপুরে ফেরার পথে রাসবিহারী অ্যাভিনিউ-এর উপরেই তাঁর পথ আটকান পুলিশ কর্মীরা। প্রশ্ন আসে, কোথায় যাবেন? ‘বাড়ি যাব’ বলতে রাজীববাবুর কাছে তাঁর আবাসিক প্রমাণপত্র চাওয়া হয়। রাজীববাবুর অভিযোগ, ‘‘সারা জীবন রাসবিহারী অ্যাভিনিউ দিয়েই বাড়িতে ঢুকি। আজ পুলিশ আমার কাছে আবাসিক প্রমাণপত্র চাইছে।’’ বলা হয়, ‘‘আপনি যে ওখানেই থাকেন তারা প্রমাণ কী? আপনি তো দর্শকও হতে পারেন।’’ শেষমেশ কিন্তু ওই রাস্তা দিয়ে নিজের বাড়িতে আর ঢোকা হয়নি রাজীববাবুর। অনেকটাই ঘুরে তাঁকে ঢুকতে হয়েছে নিজের বাড়িতে। তাঁদের দেখাদেখি অনেক দর্শকও ঘুরে যাওয়ার পথ ধরেছিলেন। শেষমেশ পুলিশ তাঁদের আটকে দেয়।

শুধু রাজীববাবুই নয়, এমনই অভিযোগ ওই রাস্তার উপরের অনেক বাসিন্দারই। প্রেয়সী অ্যাপার্টমেন্টের বাসিন্দা শুকদেব ভট্টাচার্যের অভিযোগ, ‘‘সকাল থেকে বাড়ি থেকে বেরোতে গেলেই পুলিশ আটকে দিচ্ছে।’’ অনেকেই বলছেন, পুলিশের অপদার্থতার ফল ভুগতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। শেষ মুহূর্তে এখন ‘ক্ষমতা’ দেখাচ্ছে পুলিশ। বাংলাদেশ থেকে সপরিবারে এসেছিলেন শেখ মতিউর খালেক। তিনি বলেন, ‘‘এত দিন ধরে এই পুজোর এত প্রচারের পর স্থানীয় পুলিশ-প্রশাসনের কাছ থেকে এরকম অব্যবস্থা আশা করা যায় না।’’

Advertisement

পুজো-বিধি

দেশপ্রিয় পার্কের পুজোকে কেন্দ্র করে ভিতরে বাইরে বিভিন্ন খাবারের স্টল দিয়েছেন অনেক দোকানদার। পুলিশের ব্যবহারে ক্ষেপে গিয়েছেন তাঁরাও। রবিবার বিকেল থেকেই পুজোয় দর্শনার্থীদের ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। তাতে ক্ষোভ ছিলই মাঠের ভিতরের দোকানদারদের। মঙ্গলবার তো আবার কাউকে ওই রাস্তার উপর দাঁড়াতেও দেওয়া হচ্ছে না। কাজেই খাবারদাবার সাজিয়ে কার্যত মাছি মারতে হচ্ছে তাঁদের। শেষে তাঁদের ক্ষোভে বাধ্য হয়ে কাছের স্টলগুলিতে পুলিশ দু’এক জন করে যেতে দিয়েছে। কিন্তু অভিযোগ, প্রথম দিকের স্টলগুলি খদ্দের পেলেও রাস্তার ভিতরের দিকে থাকা স্টলগুলিতে লোক হচ্ছে না। ফাস্ট ফুডের দোকানদার রহমান নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘লোকে তো আর আমাদের এখানে ঢুকে এমনি এমনি খেতে আসবে না। পুজো দেখার ফাঁকে চলত খাওয়াদাওয়া। সেই পুজো দেখাই তো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ব্যবসা আর হবে কী করে!’’

সকাল থেকে অবশ্য উৎসাহী জনতাকে আটকাতে কসুর করেনি পুলিশ। সকালে বড় কাপড় দিয়ে মণ্ডপটি ঢেকে দেওয়া হলেও পরে তা খুলে দেওয়া হয়। লোকজন আগের দিন রাতের মতই রেলিঙে উঠে ছবি তোলার চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকেন। সেই মুহূর্তে ঠিক করা হয়, মাঠের ভিতরে বড় বড় ব্যানার দিয়ে বাইরে দিয়ে ঘিরে দেওয়া হবে। সেই মতো ভিতরে বাঁশ পুঁতে ব্যানার পুঁতেও ঘিরে দেওয়ার চেষ্টা চলতে থাকে। রেলিঙে পুজো বন্ধের নোটিশও টাঙিয়ে দেওয়া হয়। তারপরেও ফাঁকফোকর দিয়ে ছবি শিকার চলতে থাকে উৎসাহী জনতার। হাত দিয়ে তাদের তাড়ানোরও ক্রমাগত চেষ্টা হতে থাকে। জনতাকে থামানো যাচ্ছে না দেখে ব্যারিকেড করতে বাধ্য হয় পুলিশ। সারাদিন এ ভাবেই চলতে থাকে ‘পুলিশ-জনতা’ লুকোচুরি।

মানুষকে আটকালেও সকাল থেকে দেশপ্রিয় পার্কের পুজোয় পুলিশের বড়কর্তাদের ভিড় ছিল পুরো মাত্রায়। সকালে ঘটনাস্থল ঘুরে যান বিশেষ কমিশনার সোমেন মিত্র। বেলায় ঘটনাস্থলে আসেন কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ) পল্লবকান্তি ঘোষ, ডেপুটি কমিশনার গৌরব শর্মা-সহ অন্যান্য পদস্থ কর্তারা। ঘটনাস্থলে সাধারণ মানুষের ভোগান্তির কথা শুনে পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান পল্লবকান্তি ঘোষ বলেন, ‘‘আলোচনা চলছে। আমরা দেখছি কী করা যায়।’’ এরপরই নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে রাসবিহারী অ্যাভিনিউ, শরৎ বোস রোড, মনোহরপুকুর রোড এবং দেশপ্রিয় পার্ক (পূর্ব)-এর দিকে ব্যারিকেড দিয়ে ঘিরে দেয় কলকাতা পুলিশ। সমস্ত জনতাকে নির্দেশ দেওয়া হয় সোজা হেঁটে গড়িয়াহাট মোড়ের দিকে চলে যাওয়ার জন্য। যদিও তাতেও ক্ষান্ত হয়নি জনতা। রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ের দিকে লোকজন ক্রমাগত ব্যারিকেড ভেঙে ঢোকার চেষ্টা চালিয়ে যান। ফের রাস্তার দিকে আরেক একপ্রস্থ ব্যারিকেড করে জনতাকে কোনওরকমে আটকায় পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন