গাড়িমালিক ও চালকদের জন্য সুখবর!
পরিষেবা আরও আধুনিক করতে বেশ কিছু পদক্ষেপ করতে চলেছে কলকাতা পুরসভার পার্কিং দফতর। শহরের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার পার্কিং-এ বসতে চলেছে সিসিটিভি। প্রতিটি এলাকায় পার্কিং-এর জায়গা স্পষ্ট করে চিহ্নিত করা থাকবে। পার্কিং-এর কোটা পূর্ণ হয়ে গেলে গাড়িচালকদের তা জানাতে বোর্ড লাগিয়ে দেবে দায়িত্বে থাকা কো-অপারেটিভ। গাড়ি রাখা বা বার করার সময়ে কোনও ক্ষয়ক্ষতি বা চুরি হলে তার দায় বর্তাবে সেই কো-অপারেটিভের উপরে, পুরসভার উপরে নয়। এমনটাই জানিয়েছে কলকাতা পুরসভার পার্কিং দফতর।
পুরসভার পার্কিং দফতর প্রতি বছর টেন্ডার ডেকে কো-অপারেটিভ নিয়োগ করে। এ বছরের টেন্ডারে থাকছে এই নতুন নির্দেশিকাগুলি। দফতর সূত্রে খবর, এই মুহূর্তে শহরের পার্কিং-এর দায়িত্ব সামলাচ্ছে প্রায় ৪৫টি সংস্থা। কলকাতা পুর-এলাকায় পার্কিং-এ গাড়ি রাখতে গিয়ে মাঝেমধ্যেই কো-অপারেটিভের কর্মীদের কাছে মানুষের হেনস্থার অভিযোগ শোনা যায়। নতুন ব্যবস্থায় সেই সমস্যার অনেকটা সমাধান হবে বলে দাবি করেছেন দফতরের মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার।
পুর-এলাকায় পার্কিংকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়। সকাল ৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত দিনের পার্কিং। রাত ১০টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত রাতের পার্কিং। অন্য ভাগটি এক্সক্লুসিভ পার্কিং। যদিও এই এক্সক্লুসিভ পার্কিং-এর দায়িত্ব কোনও এজেন্সির উপরে বর্তায় না। ফলে কোনও ফি ধার্য হয় না। এ ক্ষেত্রে সরাসরি পুরসভাকে টাকা দিতে হয়। দিনের পার্কিং-এর দু’টি ভাগ এ এবং বি। দু’ক্ষেত্রেই দু’চাকার গাড়ির ভাড়া দৈনিক ঘণ্টায় ৫ টাকা। গাড়ি, ভ্যান ও মিনিবাসের ক্ষেত্রে দৈনিক ভাড়া ঘণ্টায় ১০ টাকা। ‘এ’ বিভাগে বাস ও লরির ভাড়া দৈনিক ঘণ্টায় ২০ টাকা। ‘বি’ বিভাগে বাস ও লরির ভাড়া দৈনিক ঘণ্টায় ১৫ টাকা। নতুন টেন্ডারে পুরসভার নির্ধারিত ভাড়ার হার একই থাকছে। পার্কিং ফি বাবদ বছরে পুরসভার আয় হয় প্রায় ন’কোটি টাকা। এক্সক্লুসিভ পার্কিং-এ আয়ের পরিমাণ প্রায় এক কোটি টাকা। পরিষেবার উন্নতি ঘটলে আয়ের পরিমাণ আরও বাড়বে বলে মনে করছেন মেয়র পারিষদ।
দেবাশিস কুমার বলেন, “প্রাথমিক ভাবে সেন্ট্রাল বিজনেস এরিয়ায় বেসরকারি সাহায্যে এই সিসিটিভি বসানোর কথা চলছে। পার্ক স্ট্রিট, ডালহৌসি, ধর্মতলা চত্বরের পার্কিং-এ সিসিটিভি বসানোর চেষ্টা চলছে। কখন, কোন গাড়ি পার্কিং-এ এল, কতক্ষণ থাকল তার গতিবিধি সবটাই ক্যামেরাবন্দি থাকবে। কোনও ঘটনায় তদন্তের ক্ষেত্রেও তাতে সুবিধা হবে। পুজোর আগেই শহরবাসী নতুন এই পরিষেবা পাবেন।”
এ বার থেকে বাসযাত্রীদের ছাউনি আড়াল না করে পার্কিং-এ গাড়ি রাখতে হবে। বাংলা, হিন্দি আর ইংরেজিতে দু’টি ৬/৪ ফুটের গ্লো-সাইন বোর্ডে পার্কিং রেট এবং সেই সংক্রান্ত কোনও অভিযোগ জানানোর জন্য দফতরের নম্বর এবং ই-মেল দেওয়া থাকবে। পার্কিং-এর স্থান নির্দিষ্ট করতে শুরু এবং শেষে থাকবে ওই দু’টি বোর্ড। গাড়ি রাখার নির্দিষ্ট কোটা ভরে গেলে গাড়ির প্রবেশপথে বোর্ড লাগিয়ে সেই তথ্য চালকদের জানাবে কো-অপারেটিভ।
পার্কিং-এ গাড়ি রাখা বা বার করার সময়ে পার্কিং-এ থাকা অন্য কোনও গাড়ির, কোনও ব্যক্তিগত বা সরকারি সম্পত্তির ক্ষতি হলে বা দুর্ঘটনায় কোনও ব্যক্তির ক্ষতি হলে এবং পার্কিং-এ থাকাকালীন গাড়ি চুরি হলে তার দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে কো-অপারেটিভ।
বেসরকারি এক সংস্থার কর্মী আদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “কিছু দিন আগে কলামন্দিরে একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে লাউডন স্ট্রিটের পার্কিং-এ গাড়ি রাখার সময়ে আমার থেকে ঘণ্টায় কুড়ি টাকা হিসেবে টাকা নেওয়া হয়েছিল।” এক কো-অপারেটিভ সংস্থার কর্তা জানাচ্ছেন, দু’একটি কো-অপারেটিভ পার্কিং ফি আদায় করতে অনৈতিক ভাবে দায়িত্ব দিচ্ছে অন্য সংস্থাকে। কখনও সেই সংস্থা দায়িত্ব দিচ্ছে অন্য কোনও সংস্থাকে। ফলে ওই অতিরিক্ত টাকা দিতে হচ্ছে। পুর-কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছে, এই পরিস্থিতি বন্ধ করতে এ বার পার্কিং দফতর নতুন টেন্ডারে ‘সাবলেট’ প্রথা বন্ধ করার স্পষ্ট নির্দেশ দিচ্ছে। সে ক্ষেত্রে অভিযোগ প্রমাণিত হলে অনুমোদনও বাতিল করা হবে।