পুর-প্রার্থী তালিকা

পদ্মের ঘরে ঘাসফুলের ছক, ভাঙছে কংগ্রেসও

এক ‘ফুল’-কে টেক্কা দিতে জোড়া ফুলের কৌশল। পরিবারে রাজনৈতিক ফাটল ধরাতে বিজেপি নেতা জয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আসন্ন পুরভোটে প্রার্থী করতে চায় তৃণমূল। গত লোকসভা নির্বাচনে জয় বীরভূম কেন্দ্রে বিজেপির প্রার্থী ছিলেন। জেতেননি। যদিও এক সময়ে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুগামী ছিলেন জয়। কলকাতা বা জেলায় নেত্রীর অনেক সভামঞ্চে তাঁকেও দেখা যেত। পরে বিজেপিতে যোগ দিয়ে লোকসভার প্রার্থী হন।

Advertisement

অনুপ চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০১৫ ০১:৪৫
Share:

অঙ্কন: সুমন চৌধুরী।

এক ‘ফুল’-কে টেক্কা দিতে জোড়া ফুলের কৌশল।

Advertisement

পরিবারে রাজনৈতিক ফাটল ধরাতে বিজেপি নেতা জয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আসন্ন পুরভোটে প্রার্থী করতে চায় তৃণমূল। গত লোকসভা নির্বাচনে জয় বীরভূম কেন্দ্রে বিজেপির প্রার্থী ছিলেন। জেতেননি। যদিও এক সময়ে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুগামী ছিলেন জয়। কলকাতা বা জেলায় নেত্রীর অনেক সভামঞ্চে তাঁকেও দেখা যেত। পরে বিজেপিতে যোগ দিয়ে লোকসভার প্রার্থী হন।

এ বার যাদবপুরে সিপিএমের জেতা একটি ওয়ার্ডে জয়-জায়া অনন্যাকে দলের প্রার্থী করে টক্কর দিতে চায় তৃণমূল। গত লোকসভা ভোটের সময়ে বিজেপির বিরুদ্ধে প্রচারে স্বামী-স্ত্রীর ‘অন্দরের দ্বন্দ্ব’ রাজনৈতিক ভাবে ব্যবহারও করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। স্বামী বিজেপি-তে নাম লেখালেও অনন্যা তৃণমূলের সক্রিয় কর্মী বলেই মনে করেন খোদ দলনেত্রীও। হয়তো সে কারণেই তিনি অনন্যাকে এ বার পুরভোটের প্রার্থী করতে চাইছেন বলে অভিমত মুখ্যমন্ত্রী-ঘনিষ্ঠদের।

Advertisement

তৃণমূল সূত্রের খবর, রবিবার মুখ্যমন্ত্রী দিল্লি যাচ্ছেন। এখনও পর্যন্ত ঠিক আছে, ওই দিন বিকেলে কলকাতা পুরভোটের প্রার্থী-তালিকা ঘোষণা করা হবে। দলের এক নেতার কথায়, রাজ্যের কোনও মন্ত্রী এ বার কলকাতা পুরভোটে প্রার্থী হচ্ছেন না। বর্তমানে রাজ্যের দুই মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এবং শশী পাঁজা পুরসভার কাউন্সিলর। মন্ত্রী ফিরহাদের স্ত্রী রুবি হাকিমকে এ বার দক্ষিণ কলকাতার একটি ওয়ার্ডে প্রার্থী করার কথা শোনা গেলেও এখনও তা চূড়ান্ত নয়। ফিরহাদ (ববি) ৮২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে শশী পাঁজার জায়গায় তৃণমূলের প্রার্থী হতে পারেন পুরসভার এক সদ্য অবসরপ্রাপ্ত অফিসার রবীন চট্টোপাধ্যায়। ডেপুটি মেয়র ফরজানা আলমকে সরানো হতে পারে গত নির্বাচনে তাঁর জেতা ২৮ নম্বর ওয়ার্ড থেকে। সেখানে প্রার্থী হতে পারেন রাজাবাজারের তৃণমূল নেতা ইকবাল আহমেদ। আসন্ন পুরভোটে ফরজানা ৬৫ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী হতে পারেন। ওই ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর আরএসপি-র সুশীল শর্মা। এ বার ওই ওয়ার্ডটি মহিলা ওয়ার্ড হিসেবে সংরক্ষিত হওয়ায় বামপ্রার্থী সুশীলবাবুও দাঁড়াতে পারবেন না। রাজাবাজার এলাকায় ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান কংগ্রেস কাউন্সিলর প্রকাশ উপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে প্রার্থী হতে পারেন বেলেঘাটার তৃণমূল বিধায়ক পরেশ পাল। নিজের ওয়ার্ড মহিলা প্রার্থীর জন্য সংরক্ষিত হওয়ায় উত্তর কলকাতার ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শান্তনু সেনকে ৩ নম্বর ওয়ার্ড থেকে প্রার্থী করা হতে পারে বলে দলীয় সূত্রের খবর। ইতিমধ্যেই কংগ্রেস কাউন্সিলর সুমন সিংহ তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। তিনি তাঁর বর্তমান ওয়ার্ড থেকেই দাঁড়াবেন। কংগ্রেসেরই ৫৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অরুণ দাস (বিশু) তৃণমূলে যোগ দিচ্ছেন বলে তৃণমূল সূত্রের খবর। আজ, শনিবার পুরসভার অন্তর্বর্তী বাজেট।

এ দিনই অরুণবাবুর তৃণমূলে যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা।

এ বার সংরক্ষণের কোপে বাদ না পড়া প্রায় সিংহভাগ কাউন্সিলর ফের প্রার্থী হচ্ছেন। যদিও কয়েক জন বর্তমান কাউন্সিলরকে এ বার প্রার্থী করা হচ্ছে না বলে দলীয় সূত্রের খবর। তৃণমূলের এক নেতার কথায়, প্রার্থী পদ থেকে বাদ যাওয়ার তালিকায় থাকতে পারে অনিল মুখোপাধ্যায়, পার্থ রায়চৌধুরী, মালা মহলানবিশ, গুলজার জিয়া, ব্রজেন্দ্রকুমার বসু এবং অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম। প্রার্থী করা হচ্ছে না গার্ডেনরিচ কাণ্ডে নাম জড়ানো, ১৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মহম্মদ ইকবালকেও।

সংরক্ষণের কোপে পড়া যে কয়েকটি ওয়ার্ডে প্রার্থী রদবদল হচ্ছে তা হল, মহিলা-সংরক্ষিত হওয়ায় ১৫ নম্বরের কাউন্সিলর সাধন সাহা এ বার ১৬ নম্বরের প্রার্থী হতে পারেন। ১৬ নম্বরের কাউন্সিলর শুক্লা ভোড় ১৫ থেকে দাঁড়াতে পারেন। ৬২ নম্বর ওয়ার্ড মহিলা সংরক্ষিত হওয়ায় বর্তমান কাউন্সিলর ইকবাল আহমেদের মেয়েকে সেখানে প্রার্থী করা হচ্ছে। ইকবালও প্রার্থী হতে পারেন ৬৪ নম্বর ওয়ার্ডের। ৭৯ নম্বর ওয়ার্ড তফসিলি মহিলা হিসেবে সংরক্ষিত হওয়ায় সেখানে প্রার্থী হতে পারেন রাম পেয়ারি রামের স্ত্রী এবং ৮০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হেমা রাম। আর স্ত্রীর ওয়ার্ডে দাঁড়াতে পারেন রাম পেয়ারি রাম। একই ভাবে মহিলা সংরক্ষিত হওয়ায় ১১২ নম্বরের বর্তমান কাউন্সিলর গোপাল রায় ১১৩ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী হতে পারেন। সে ক্ষেত্রে ১১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অনিতা করমজুমদার গোপালবাবুর ওয়ার্ড থেকে দাঁড়ানোর সুযোগ পাবেন। ৮৬ নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর দুর্গাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের ওয়ার্ড এ বার তফসিলি মহিলা সংরক্ষিত। সেখানে প্রার্থী হতে পারেন স্থানীয় তৃণমূল কর্মী মোনালিসা হাজরা।

এ বার কলকাতা পুরভোটে মোট ওয়ার্ড ১৪৪টি। আগে ছিল ১৪১। জোকা ১ এবং ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত কলকাতা পুরসভার অধীনে আসায় আরও তিনটি ওয়ার্ড বেড়েছে। পুরসভা সূত্রের খবর, ২০১৫ সালে কলকাতা পুরভোটে ৪, ৩০, ৪৬, ৭৯, ৮৬, ১১৪, ১২৪ এবং ১৪৪ নম্বর ওয়ার্ড তফসিলির জন্য সংরক্ষিত হচ্ছে। এর মধ্যে ৩০, ৮৬ এবং ১৪৪ তফসিলি মহিলা। সাধারণ মহিলা সংরক্ষিত হচ্ছে ৪৪টি ওয়ার্ড। সংরক্ষণের কোপে এ বার বর্তমান পুর-বোর্ডের তিন মেয়র পারিষদের ওয়ার্ড তফসিলি ও মহিলা সংরক্ষিত হয়েছে। এঁরা হলেন, ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা বস্তি দফতরের মেয়র পারিষদ স্বপন সমাদ্দার, ৬৮ নম্বরের কাউন্সিলর মেয়র পারিষদ রাজীব দেব এবং ৯৭ নম্বরের কাউন্সিলর জঞ্জাল অপসারণ দফতরের মেয়র পারিষদ দেবব্রত মজুমদার। রাজীববাবু অসুস্থ থাকায় তাঁর জায়গায় এক মহিলাকে প্রার্থী করা হতে পারে। স্বপনবাবুকে ৫৮ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী করা হবে। ওই ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর শম্ভুনাথ কাও এখন জেলবন্দি। দেবব্রতবাবুকে এ বার ৯৬ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী করা হবে বলে দলীয় সূত্রের খবর। তাঁর বর্তমান ওয়ার্ডে প্রার্থী হতে পারেন ৯৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মিতালি বন্দ্যোপাধ্যায়। ৮৮ নম্বর ওয়ার্ডে এ বার কংগ্রেস প্রার্থী তথা দীর্ঘদিনের কাউন্সিলর মালা রায়ের বিরুদ্ধে তৃণমূলের প্রার্থী হতে পারেন রাজ্য বিধানসভায় তৃণমূলের মুখ্য সচেতক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের পুত্রবধূ। ভবানীপুর এলাকায় আরও একটি ওয়ার্ডে প্রার্থী হতে পারেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সুব্রত বক্সীর ভাই। শনিবার পুরভোটে দলের প্রার্থী তালিকা প্রাথমিক ভাবে ঠিক করে দেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর অনুমোদন নিয়ে আরও কিছু রদবদল ঘটিয়ে এখন চলছে তার চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার পালা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন