কাউন্সিলরকে বাঁচাতে এসে জুটল এমনই বেধড়ক মার।—নিজস্ব চিত্র।
বাড়িতে ইট ছোড়ার প্রতিবাদ জানাতে বাড়ির বাইরে বেরোতেই বিক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন কলকাতা পুরসভার ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ঝুমা দাস। সে সময়ে ফরওয়ার্ড ব্লকের ওই কাউন্সিলরকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেন এক ব্যক্তি। অভিযোগ, পুলিশের সামনেই তাঁকে বেধড়ক মারধর করেন বিক্ষোভকারীরা। বুধবার সকাল ১০টা নাগাদ বেলেঘাটা মেন রোডে ঘটনাটি ঘটেছে। পরে, পুলিশের হস্তক্ষেপেই সেই ব্যক্তিকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। অভিযোগের তির অবশ্য তৃণমূল কংগ্রেসের স্থানীয় কর্মীদের দিকেই। যদিও এই ঘটনায় তৃণমূলকর্মীদের কারও জড়িত থাকার অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন স্থানীয় তৃণমূল-নেতৃত্ব। এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি।
পুলিশ জানায়, এ দিন সকালে ফরওয়ার্ড ব্লক অফিস থেকে অভিযোগ আসে, ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের বাড়িতে কয়েক জন দুষ্কৃতী ইট মারায় তাঁর স্বামী আহত হয়েছেন। এর পরেই কাউন্সিলরের বাড়ির সামনে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। কাউন্সিলর ওই ঘটনার অভিযোগ জানাতে বাইরে এলে স্থানীয়েরা তাঁকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। সে সময়ে পথচলতি এক ব্যক্তি এসে কাউন্সিলরকে বিক্ষোভকারীদের হাত থেকে উদ্ধার করতে যান। অভিযোগ, তিনি একটি রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে বিরূপ মন্তব্যও করেন। এর জেরেই এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায় বলেই জানিয়েছে পুলিশ। বিক্ষোভকারীরা ওই ব্যক্তিকে এর পরে বেধড়ক মারধর করে। যদিও পুলিশের দাবি, ওই ব্যক্তিকে সঙ্গে সঙ্গেই ঘটনাস্থল থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, ওই ব্যক্তি স্থানীয় বাসিন্দা নন। তিনি তখন ওই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন। ঘটনাটি দেখে তিনি দাঁড়িয়ে পড়েন। তাঁর সম্পর্কে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
কাউন্সিলর ঝুমা দাস এ দিন বলেন, “আমার স্বামী ঘরে একাই বসেছিলেন। তখন বাইরে থেকে জানলা দিয়ে কেউ ইট ছুড়ে মারায় তা আমার স্বামীর চোখে লাগে। আমি সঙ্গে সঙ্গে দলীয় কার্যালয়ে ঘটনাটি জানাই। সেখান থেকে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়।” ঝুমাদেবীর স্বামী প্রশান্ত দাস বলেন, “একটুর জন্য আমার বাঁ চোখটা বেঁচে গিয়েছে। কারা ইট ছুড়েছে জানি না। তাই নির্দিষ্ট ভাবে কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ নেই।”
ফরওয়ার্ড ব্লকের কলকাতা জেলা আহ্বায়ক জীবনপ্রকাশ সাহা বলেন, “এ দিনের ঘটনা কোনও ব্যতিক্রম নয়। এমন ঘটনা সারা রাজ্যেই হচ্ছে। নিচুতলার নয়, তৃণমূলের শীর্ষ স্থানীয় নেতাদের মদতেই এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। কাউন্সিলরের বাড়িতে হামলার ঘটনায় দলের তরফে তৃণমূলের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ জানিয়েছি।”
স্থানীয় তৃণমূল নেতা তথা মধ্য কলকাতা জেলা তৃণমূল ছাত্র পরিষদ সভাপতি মিঠু মল্লিক বলেন, “ঝুমাদেবী অন্য দলের কাউন্সিলর হলেও স্থানীয় তৃণমূলকর্মীরা তাঁকে বরাবরই মর্যাদা দেন। তাঁর বা তাঁর পরিবারের উপরে এই ধরনের আক্রমণ তৃণমূলের কারও কাজ নয়। এটা নিতান্তই তাঁদের পারিবারিক ঝামেলা। বহিরাগত ব্যক্তিকে মারধরের যে অভিযোগ তৃণমূলের বিরুদ্ধে উঠছে, তা-ও ঠিক নয়। যাঁরা ওই অপরিচিত ব্যক্তিকে মেরেছেন, তাঁরাও তৃণমূলের নন।”