মুচিপাড়া এলাকায় বারান্দা ভেঙে পড়ে চিঁড়েচ্যাপ্টা গাড়ি।
দু’টি বাড়ির অংশ ভেঙে পড়ে এক জনের মৃত্যু হল শহরে। আহত আরও এক।
শুক্রবার প্রথম ঘটনাটি ঘটেছে রামমন্দিরের কাছে। পুলিশ জানায়, এ দিন ভোর ৪টে নাগাদ একটি তিনতলা বাড়ির ঝুলবারান্দা ভেঙে পড়ে। সেই সময়ে নীচে ফুটপাথে ঘুমোচ্ছিলেন রাজা প্রসাদ ও তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী সীতা প্রসাদ। সীতাদেবী জানান, কংক্রিটের চাঙড় ভেঙে পড়ে তাঁর স্বামীর উপরে। তাতেই গুরুতর আহত হন রাজা। রক্তাক্ত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। সেই সঙ্গেই সামান্য জখম হন সীতাদেবী নিজেও।
ঘটনার সময়ে ওই দম্পতির থেকে হাত কয়েক দূরে ছোট মেয়েকে নিয়ে শুয়ে ছিলেন সুমিতা পাসোয়ান। তিনি বলেন, “বিকট একটা শব্দে ঘুম ভেঙে যায়। উঠে দেখি বাড়ির গা থেকে একটা বড় কংক্রিটের চাঙড় ভেঙে পড়ে গিয়েছে। টুকরো টুকরো আরও কিছু কংক্রিট তখনও খসে পড়ছিল।” সুমিতা জানান, ততক্ষণে সবাই ঘুম ভেঙে বিষয়টি বুঝতে পেরে পালাতে শুরু করেছেন। রাজাকে নিথর হয়ে পড়ে থাকতে দেখে এর পরেই সবাই মিলে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যান। খবর পেয়ে বৌবাজার থেকে ঘটনাস্থলে পৌঁছন রাজার ভাই সানি প্রসাদ।
তিনতলা ওই বাড়িটির একতলায় একাধিক ঘর ভাড়া নিয়ে কয়েকটি অফিস রয়েছে। একটি অফিসের মালিক অনিল অগ্রবাল বলেন, “প্রায় চল্লিশ বছর ধরে এখানে আমাদের অফিস রয়েছে। এত বছরে বাড়িটি এক বারের জন্যও মেরামতি করতে দেখা যায়নি।” একই বক্তব্য আর একটি অফিসের মালিক বীরেন্দ্র গোয়েনকারও। তবে, এ বিষয়ে বাড়িটির মালিকের পরিবারের তরফে কেউ কথা বলতে রাজি হননি। এ দিন দুর্ঘটনার পরে বাড়িটি দেখতে যান ৫ নম্বর বরো চেয়ারম্যান অপরাজিতা দাশগুপ্ত। তিনি বলেন, “শুনলাম এক ভাড়াটে দীর্ঘদিন ধরে বাইরে রয়েছেন। তাঁর দিকেরই বারান্দা ভেঙে গিয়েছে। আজই পুরসভা থেকে ওই বাড়িটির বিপজ্জনক অংশ ভেঙে দেওয়ার নোটিস জারি করা হবে।”
রামমন্দির এলাকায় বারান্দা ভেঙে মৃত
রাজা প্রসাদের শোকস্তব্ধ স্ত্রী সীতা প্রসাদ।
অন্য দিকে, এ দিন সকাল সাড়ে ৯টার কিছু পরে মুচিপাড়া থানা এলাকার একটি বাড়ির তিনতলার বারান্দা-সহ ছাদের একাংশ ভেঙে পড়ে। তবে এই ঘটনায় কেউ হতাহত হননি। তবে বাড়িরই একটি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বাড়ির এক বাসিন্দা জানান, বিপিনবিহারী দে নামে বাড়ির এক শরিক বাইরে থাকেন। গোটা বছরে হয়তো বা দু’এক দিন থেকে ফের ঘর বন্ধ করে বাইরে চলে যান। তাই বাড়ির বাকি অংশে মেরামতি হলেও তাঁর অংশে দীর্ঘ কয়েক বছর কোনও কাজ হয়নি। বাড়িটির অছি পরিষদের এক সদস্য কাশীনাথ দে-ও একই অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, “এই বাড়ি প্রায় দেড়শো বছরের পুরনো। বাড়ির আলাদা ঐতিহ্য রয়েছে। বছরের পর বছর বাড়ির ওই অংশ মেরামতি করতে না দেওয়ার জন্য পরিবারের সদস্য হলেও বিপিনবিহারীবাবুর বিরুদ্ধে মুচিপাড়া থানায় অভিযোগ দায়ের করা হবে।” যদিও এ দিন বিকেল পর্যন্ত থানায় কোনও অভিযোগ জমা পড়েনি বলে পুলিশ জানিয়েছে।
—নিজস্ব চিত্র।