বাস-সন্ধানে জিপিএস প্রযুক্তি চালু হয়নি এখনও

রাত সাড়ে ন’টা। তেঘরিয়া যাওয়ার জন্য বৃদ্ধা মাকে নিয়ে কাঁকুড়গাছির মোড়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন সৌমেন রায়। মায়ের বয়স হয়েছে, তাই ভেবেছিলেন ভূতল পরিবহণের ভলভো বাসে যাবেন। কিন্তু বাস কখন আসবে, বুঝতে পারছিলেন না।

Advertisement
আর্যভট্ট খান শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০১৪ ০৪:৪০
Share:

রাত সাড়ে ন’টা। তেঘরিয়া যাওয়ার জন্য বৃদ্ধা মাকে নিয়ে কাঁকুড়গাছির মোড়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন সৌমেন রায়। মায়ের বয়স হয়েছে, তাই ভেবেছিলেন ভূতল পরিবহণের ভলভো বাসে যাবেন। কিন্তু বাস কখন আসবে, বুঝতে পারছিলেন না।

Advertisement

একই সময়ে মুম্বই কিংবা বেঙ্গালুরুর ছবিটা কিন্তু আলাদা। সেখানে বাস ধরতে যাওয়ার আগে ইন্টারনেটে বাসের সময়সূচি এবং অবস্থান দুটোই জেনে নিতে পারেন যাত্রীরা। দেশ-বিদেশের সব বড় শহরেই বাস পরিষেবার নির্দিষ্ট তথ্য ইন্টারনেটে মেলে। তা হলে কলকাতায় এই সুবিধা মেলে না কেন?

ফারাকের কারণটা প্রযুক্তিগত। মুম্বই কিংবা বেঙ্গালুরুতে ভলভো-র মতো উন্নত বাস পরিষেবায় গ্লোবাল পোজিশনিং সিস্টেম (জিপিএস) প্রযুক্তির সুবিধা রয়েছে। তাই ইন্টারনেটে সহজেই বাসের অবস্থান ও সময়সূচি মেলে। এই শহরে ভলভো বাসে এখনও এই প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে না। ফলে বাস ধরতে গিয়ে ঠায় অপেক্ষা করতে হয় অনেককেই।

Advertisement

কলকাতায় অনেকেই এখন বেশি ভাড়া দিয়ে ট্যাক্সিতে যাওয়ার বদলে আরামদায়ক ভলভো বাসে উঠতে চান। এই পরিষেবা চালুর সময়ে বাসগুলিতে যাত্রী কম হতো। কিন্তু ইদানীং যাত্রী বাড়ছে। অনেক সময়ে যাত্রীদের দাঁড়িয়েও যেতে দেখা যায়। কিন্তু তাঁদের অভিযোগ, বাসের সময়সূচি সম্পর্কে নির্দিষ্ট কোনও তথ্য মেলে না। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাসে জিপিএস ব্যবস্থা চালু থাকলে এই হেনস্থা এড়ানো যেতে পারে।

বিশেষজ্ঞেরা জানান, জিপিএস থাকলে সংশ্লিষ্ট বাস পরিষেবার ওয়েবসাইটে গিয়ে বাসের রুট নম্বর দিয়ে ‘সার্চ’ করলেই কোন কোন বাস চলছে এবং সেগুলির অবস্থান জানা যাবে। বাসটি কোন স্টপে কখন পৌঁছবে, মিলবে সেই তথ্যও। ওই রাস্তায় যানজট রয়েছে কি না, তা-ও যাত্রীরা জানতে পারেন। যাত্রী-সুরক্ষাতেও জিপিএস-এর সুবিধা রয়েছে। রাতে অনেক মহিলাই একা চলাচল করেন। তাঁরা বিপদে পড়লে বাসের রুট ও নম্বর দিয়ে পুলিশকে জানালে সহজেই সংশ্লিষ্ট বাসটিকে চিহ্নিত করা যাবে। বাসে কিছু ফেলে এলেও পুলিশ তা উদ্ধার করতে হবে।

বস্তুত, এই শহরের ভলভো বাসেও জিপিএস প্রযুক্তির কথা জানানো হয়েছিল। বাসস্ট্যান্ডে বসেছিল ডিসপ্লে বোর্ড। কিন্তু ঘোষণার বাস্তবায়ন হয়নি। ধর্মতলা থেকে ভলভো বাসের এক নিত্যযাত্রী নির্মাল্য বসু জানান, ধর্মতলায় ডিসপ্লে বোর্ড লাগানোর পরে তাঁরা ভেবেছিলেন, বাসের নির্দিষ্ট তথ্য মিলবে। কিন্তু বোর্ডগুলি কাজ করেনি। নির্মাল্যবাবুর কথায়, “দিন কয়েক পরেই ডিসপ্লে বোর্ড নষ্ট হয়ে গেল। পরে কারা যেন সেটা খুলেও নিয়ে গিয়েছে!”

মুম্বইয়ের এক নিত্য বাসযাত্রী সন্দীপ মোসমকর বলেন, “অফিস থেকে ফেরার আগে মোবাইলে ইন্টারনেট খুলে দেখি বাস কোথায় আছে। ফলে আর স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে সময় নষ্ট হয় না।” একই ব্যবস্থা বেছেছেন বেঙ্গালুরুর বাসিন্দা শান্তনু দাশগুপ্তও।

ভূতল পরিবহণ নিগম সূত্রের খবর, ভলভো বাসে জিপিএস যন্ত্র লাগানো হয়েছিল। চালকের বাঁ দিকে ছোট্ট যন্ত্রটি চোখেও পড়বে। ভূতল পরিবহণের এক পদস্থ অফিসার বলেন, “ভলভো বাসগুলিতে জিপিএস প্রযুক্তি দ্রুত চালু হবে। ইতিমধ্যে পরীক্ষামূলক ভাবে এই পরিষেবা চালু করেছি।” সংস্থার এমডি নীলাঞ্জন শান্ডিল্য বলেন, “পরীক্ষামূলক ভাবে পরিষেবা চালু আছে। শীঘ্রই তা আরও বিস্তৃত হবে।”

কিন্তু সেই পরিষেবা জনসাধারণ পাবেন কবে থেকে? কর্তাদের আশ্বাস, এই ব্যবস্থা সম্পর্কে মানুষকে অবহিত করতে বাসে পোস্টার সাঁটা হবে। বিলি হবে লিফলেটও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন