মিউটেশন-কাণ্ডে দোষ ঢাকতে সচেষ্ট পুরসভা

কর মূল্যায়ন দফতরের মুখ্য অফিসারকে মিউটেশন-কেলেঙ্কারি থেকে ‘আড়াল’ করতে আসরে নেমে পড়ল পুর-প্রশাসন। ৮০ বি কসবা-বোসপুকুর রোডে বেআইনি ভাবে মিউটেশন দেওয়ার ঘটনাকে এখন স্রেফ পদ্ধতিগত ভুল হয়েছিল বলে চালাতে চাইছেন পুরকর্তারা। এ ভাবে শুধু বিষয়টিকে লঘু করাই নয়, ওই জমির আর এক বার মিউটেশনের পথও খুলে দিচ্ছেন তাঁরা।

Advertisement

অনুপ চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০১৪ ০১:৫৩
Share:

কর মূল্যায়ন দফতরের মুখ্য অফিসারকে মিউটেশন-কেলেঙ্কারি থেকে ‘আড়াল’ করতে আসরে নেমে পড়ল পুর-প্রশাসন। ৮০ বি কসবা-বোসপুকুর রোডে বেআইনি ভাবে মিউটেশন দেওয়ার ঘটনাকে এখন স্রেফ পদ্ধতিগত ভুল হয়েছিল বলে চালাতে চাইছেন পুরকর্তারা। এ ভাবে শুধু বিষয়টিকে লঘু করাই নয়, ওই জমির আর এক বার মিউটেশনের পথও খুলে দিচ্ছেন তাঁরা।

Advertisement

ওই জমির মিউটেশন যাঁরা পেয়েছেন, বৃহস্পতিবার তাঁদের পুরসভায় ডাকা হয়েছিল। পুরসভা সূত্রের খবর, সেখানেই পুর-কমিশনার খলিল আহমেদ তাঁদের জানিয়ে দেন মিউটেশন দেওয়ার পদ্ধতিতে ভুল ছিল। তাই তা বাতিল করা হল। তবে ফের তাঁরা মিউটেশনের জন্য আবেদন করতে পারবেন। যে জমির মিউটেশন দেওয়ায় দুর্নীতির অভিযোগে তদন্ত কমিটি গড়েছে পুর-প্রশাসন, কমিশনারের এই বক্তব্যে সেই ‘বেআইনি’ কাজকে পরোক্ষে মদত দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে কর মূল্যায়ন দফতরেই। এক অফিসারের কথায়, “তদন্তের আগে এমন কথা বলা মানে তদন্তের কাজে ব্যাঘাত ঘটানো।” যদিও তদন্ত কমিটির একাধিক সদস্য জানান, নথিপত্রই আসল। কে কী বললেন, তা গৌণ। আগামী সপ্তাহের গোড়ায় তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করবে বলে জানা গিয়েছে।

কসবার ওই জমি ঘিরে বিতর্ক কেন? পুরসভার নথি অনুযায়ী, বহুকাল আগে ৮০ নম্বর কসবা-বোসপুকুরের ঠিকানায় একটি জলাশয় ছিল। পরে ওই জলাশয়ের একটা অংশ ৮০বি ঠিকানায় চিহ্নিত হয়। অর্থাৎ জলাশয় থেকে জমিকে আলাদা করার জন্য ওই পৃথকীকরণ করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। আর সেই কাজ পুর কমিশনারের কোনও অনুমোদন ছাড়াই করা হয়েছে। পুরসভার নিয়মে যা বেআইনি। পুর-নথি অনুযায়ী, ২০০১ সালে পুরসভার চিফ মিউনিসিপ্যাল আর্কিটেক্ট অ্যান্ড টাউন প্ল্যানার এক নির্দেশে জানিয়ে দিয়েছিলেন, ওই জমি যেন কোনও ভাবে মিউটেশন করা না হয়। যদিও পুরসভার কর মূল্যায়ন দফতর সেই নির্দেশ না মেনে মিউটেশন করে দিয়েছে। এবং দফতরের চিফ ম্যানেজার তা অনুমোদনও করেছেন। পুরসভার এক পদস্থ অফিসারের কথায়, “এটা কখনওই পদ্ধতিগত ভুল বলে এড়ানো যায় না।”

Advertisement

এ দিকে, এই ঘটনার কথা জানাজানি হতেই মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় সদ্য সমাপ্ত পুর-অধিবেশনে বলেন, “বোসপুকুরের ঘটনায় কাউকে ছাড়া হবে না।” এবং তার জন্য অফিসারদের বদলে পুর-বোর্ডের তিন গুরুত্বপূর্ণ মেয়র পারিষদকে দিয়ে ওই তদন্ত করানোর সিদ্ধান্ত হয় এক বৈঠকে। ওই তদন্ত কমিটিতে রয়েছেন তিন মেয়র পারিষদ দেবব্রত মজুমদার, অতীন ঘোষ এবং দেবাশিস কুমার। পুর সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই যাবতীয় নথিপত্র তাঁদের হাতে চলে এসেছে।

অন্য দিকে, ওই জমিটি যাঁরা কিনেছেন তাঁদেরই এক জনের বক্তব্য, “কার কী ভুল হল, তার দায় তো আমাদের নয়।” এর জন্য যাঁরা দায়ী, তাঁদের শাস্তির দাবি করে তিনি বলেন, “ওই কাজ করানোর জন্য ৭৫ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছে।” ইতিমধ্যেই ওই ঘটনায় পুর-প্রশাসন গড়িয়াহাটের টলিট্যাক্সের চার অফিসারকে শো-কজ করেছেন। পুর কমিশনার খলিল আহমেদ জানান, তদন্তের পরে এ নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন