রাজারহাট পুরসভা জুড়ে কর্পোরেশন হচ্ছে বিধাননগর

যা হওয়ার তা-ই হল। লোকসভা নির্বাচনে ভরাডুবি আর গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জরাজীর্ণ বিধাননগরে এখন এক প্রকার কোণঠাসা শাসক দল। এ অবস্থা কোনও মতেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি শীর্ষ নেতৃত্ব। তাই এক ঢিলে দুই পাখি মারার কৌশল নিলেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। এক দিকে ভোটের বৈতরণী পার হওয়া, অন্য দিকে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য দরকার ছিল শক্ত ভিতের। সেই বিবেচনাতেই বিধাননগর, রাজারহাট-গোপালপুর পুরসভার সঙ্গে মহিষবাথানের মতো পঞ্চায়েত এলাকা মিলিয়ে তৈরি হতে চলেছে নতুন একটি কর্পোরেশন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০০:০১
Share:

যা হওয়ার তা-ই হল। লোকসভা নির্বাচনে ভরাডুবি আর গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জরাজীর্ণ বিধাননগরে এখন এক প্রকার কোণঠাসা শাসক দল। এ অবস্থা কোনও মতেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি শীর্ষ নেতৃত্ব। তাই এক ঢিলে দুই পাখি মারার কৌশল নিলেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব।

Advertisement

এক দিকে ভোটের বৈতরণী পার হওয়া, অন্য দিকে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য দরকার ছিল শক্ত ভিতের। সেই বিবেচনাতেই বিধাননগর, রাজারহাট-গোপালপুর পুরসভার সঙ্গে মহিষবাথানের মতো পঞ্চায়েত এলাকা মিলিয়ে তৈরি হতে চলেছে নতুন একটি কর্পোরেশন। শনিবার ক্যাবিনেটে সেই প্রস্তাব পাশ হয়েছে বলে নবান্ন সূত্রের খবর। পরে সেই ঘোষণাই করেন পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম।

কিন্তু স্রেফ ভোটের অঙ্ক পার হতেই কি বামেদের দেখানো পথ ধরে তৃণমূল এই নতুন পুরসভা তৈরির পরিকল্পনা নিল, প্রশ্ন উঠছে তা নিয়ে। কেন না কিছু দিন আগেই লোকসভা নির্বাচনে বিধাননগর বিধানসভা এলাকায় প্রায় সাড়ে ছ’হাজার ভোটে বিজেপি-র তুলনায় পিছিয়ে পড়ে তৃণমূল। পুর-এলাকার নিরিখে প্রায় অধিকাংশ ওয়ার্ডেই পিছিয়ে শাসক দল। অন্য দিকে বিধাননগরে শাসক দলের নেতাদের গতিবিধি, কর্মকাণ্ড নিয়েও নানা প্রশ্ন ঘুরে ফিরে আসছে বাসিন্দাদের মনে।

Advertisement

শাসক দলের অবশ্য যুক্তি, উন্নয়নের নিরিখে কর্পোরেশন হলে কেন্দ্রীয় সরকারি প্রকল্পের অনেক বেশি সুযোগ মিলবে। যার ফলে পরিষেবাও উন্নত হবে।

যদিও রাজ্য সরকারের এই পরিকল্পনা মানতে নারাজ বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, ভোটের অঙ্কের কথা মাথায় রেখেই সাবেক সল্টলেকের সঙ্গে বামেরা রাজারহাট ও ভাঙরের কিছু অনুন্নত এলাকা জুড়ে দিয়েছিলেন। এখন তৃণমূলও একই পথে হেঁটে ভোট ব্যাঙ্ক ধরে রাখতে চাইছে।

বিধাননগরের বাসিন্দাদের একটি সংগঠনের কর্ণধার কুমারশঙ্কর সাধু বলেন, “সামগ্রিক ভাবে এই পরিকল্পনা ঠিক নয়। সরকারের কাছে পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানাচ্ছি।” বাসিন্দাদের অভিযোগ, সল্টলেকের সঙ্গে অন্যান্য এলাকার জমির চরিত্র, মালিকানা সংক্রান্ত একাধিক পার্থক্য রয়েছে। কর-কাঠামোও সম্পূর্ণ আলাদা। সে সব সমস্যা না মিটিয়ে একটি কর্পোরেশন তৈরি করা হচ্ছে। শাসক দলের একাংশের অবশ্য দাবি, কর্পোরেশন তৈরির সময়ে এই যাবতীয় সমস্যার সমাধানের কথা ভাবা হবে। ফিরহাদ হাকিম বলেছেন, “আগামী তিন মাসের মধ্যেই রাজারহাট-গোপালপুর পুরসভা এবং বিধাননগর মিলে নতুন কপোর্রেশনটি তৈরি হতে চলেছে।”

পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর সূত্রে খবর, রাজারহাট-গোপালপুর ও বিধাননগর মিলে ৫০টির মতো ওয়ার্ড হতে চলেছে। পুরসভা এলাকার মধ্যে যুক্ত হতে চলেছে মহিষবাথানের মতো পঞ্চায়েত এলাকাও। রাজারহাট-গোপালপুর পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান সিপিএমের তাপস চট্টোপাধ্যায় বলেন, “কর্পোরেশন তৈরিতে আপত্তি নেই। বৃহত্তর প্রশাসনকে স্বাগত। নাগরিক চাহিদা বাড়ছে। প্রযুক্তির উন্নয়নও দরকার। তবে ভৌগলিক কারণের জন্য কিছু সমস্যা থেকেই যায়। শুধু রাজারহাট-নিউ টাউন মিলেই একটি কর্পোরেশন হতে পারত।” তিনি আরও বলেন, “অনেক দিন ধরেই পুরভোট আটকে রয়েছে। পরিষেবা পাচ্ছেন না মানুষ। তাই দীর্ঘসূত্রতা না করে দ্রুত কর্পোরেশন তৈরির জন্য ভোটে যাক রাজ্য সরকার। ভোটে হেরে যাওয়ার আশঙ্কায় যেন কোনও রকম টালবাহানা না করা হয়।”

অন্য দিকে বিজেপি নেতৃত্বের একাংশের দাবি, তাঁদের দলের সমর্থনে যে ভাবে মানুষ পথে নেমেছেন, তাতে ভয় পেয়েছে তৃণমূল। তার সঙ্গে গোপনে যোগ দিয়েছে সিপিএম। তাই কর্পোরেশন তৈরির নামে ভোট-ব্যাঙ্ক ধরে রাখার চেষ্টা করছে শাসক দল। তবে যে প্রক্রিয়ায় এটা করা হচ্ছে, তা ঠিক নয়। তাঁদের অভিযোগ, নতুন প্রস্তাব কার্যকর হলে প্রশাসনিক জটিলতা কার্যত বেড়ে যাবে।

তবে নতুন প্রস্তাব কার্যকর হলে আখেরে বিধাননগরের শাসক দলের একাংশের লাভ হবে বলেই মনে করছেন দলীয় কর্মীদের একাংশ। তাঁদের মতে, আপাত ভাবে মুকুল ঘনিষ্ঠ বলা হলেও নতুন কর্পোরেশন হলে সব্যসাচী দত্ত এবং তাঁর অনুগামীদেরই বেশি করে গুরুত্ব দেওয়া হতে পারে। তাতে ভোট-ব্যাঙ্ক অটুট থাকবে, দলে ভাঙনের রাজনীতিও নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

তবে সত্যিই এমনটা ঘটবে কি না, তার জবাব ভবিষ্যতেই মিলবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন