রাতের আঁধারে খালে গাড়ি, মৃত্যু যুবকের

খালের মধ্যে মুখ গুঁজে পড়ে রয়েছে একটি দামি গাড়ি। তার জানলা দিয়ে কোনও মতে শরীরের খানিকটা অংশ বার করে বাঁচার আর্ত চিত্‌কার করছেন এক তরুণী। শীতের রাতে ওই ঘটনা দেখে কিছুক্ষণের জন্য হকচকিয়ে গিয়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:০১
Share:

খালের মধ্যে মুখ গুঁজে পড়ে রয়েছে একটি দামি গাড়ি। তার জানলা দিয়ে কোনও মতে শরীরের খানিকটা অংশ বার করে বাঁচার আর্ত চিত্‌কার করছেন এক তরুণী। শীতের রাতে ওই ঘটনা দেখে কিছুক্ষণের জন্য হকচকিয়ে গিয়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁদের তত্‌পরতায় অবশ্য উদ্ধার করা হয় ওই তরুণীকে। কিন্তু গাড়ির সামনের অংশ পাঁকে গেঁথে যাওয়ায় বাঁচানো যায়নি চালকের আসনে বসে থাকা যুবককে।

Advertisement

মঙ্গলবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে নিউ টাউনের ইকো পার্কের কাছে। পুলিশ জানায়, মৃত যুবকের নাম অতনু ভট্টাচার্য (৩১)। তিনি উল্টোডাঙার একটি আবাসনে থাকতেন। আদতে তাঁর বাড়ি মালদহে। তিনি রাজ্যের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরীর শ্যালক। ওই যুবকের সঙ্গী, বছর আঠাশের তরুণীকে বিধাননগর পুর-হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিত্‌সার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়।

ইকো পার্কের তিন কন্যা মোড়ের কাছে রাস্তা থেকে কী ভাবে ওই দামি গাড়িটি খালে গিয়ে পড়ল, তার তদন্তে নেমে এক ডাম্পার-চালকের সন্ধান পেয়েছে পুলিশ। তাঁর সঙ্গে কথা বলে তদন্তকারীরা জেনেছেন আসল ঘটনাটি। পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ ওই ডাম্পার-চালক দেখেন, তাঁর পাশের রাস্তা দিয়ে বেসামাল ভাবে তীব্র গতিতে ওই গাড়িটি ছুটে আসছে। গাড়িটি দেখে ডাম্পার থামিয়ে দেন চালক। দেখেন, সেটি রাস্তা ধরে সোজা চলে গেল। কিছুক্ষণ পরেই একটি বিকট শব্দ। তাই শুনে ডাম্পার-চালক বুঝতে পারেন কিছু একটা ঘটেছে। সে সময়ে ওই রাস্তা দিয়েই বাড়ি ফিরছিলেন একটি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার কর্মী গৌরাঙ্গ দাভে। শব্দ শুনে ডাম্পার-চালকের সঙ্গে তিনিও সে দিকে ছুটে যান।

Advertisement

পুলিশ জানায়, ওই গাড়িটি যে দিকে গিয়েছিল, সেই রাস্তায় তাঁরা কিছুটা গিয়ে দেখেন, চার দিক অন্ধকার। আর কয়েক পা এগোলেই রাস্তার শেষ প্রান্তে একটি খাল। তার মধ্যেই পড়ে রয়েছে ওই দামি গাড়িটি। অন্ধকার ভেদ করে শোনা যাচ্ছে এক মহিলা-কণ্ঠের আর্তনাদ। নিজেদের মোবাইলের আলো জ্বালিয়ে পুরো বিষয়টি দেখে সঙ্গে সঙ্গে ইকো পার্কের সামনে কর্তব্যরত পুলিশকর্মীদের খবর দেন ডাম্পার-চালক। পাশাপাশি, স্থানীয় লোকজনকেও ডেকে আনেন। তাঁরাই খালে নেমে গাড়িটি থেকে ওই তরুণীকে উদ্ধার করেন।

পুলিশ সূত্রের খবর, গাড়ির চালকের আসনে এক যুবক আটকে রয়েছেন বোঝা গেলেও কোনও ভাবেই তাঁকে বার করতে পারেননি স্থানীয় লোকজন। পরে ক্রেন এনে গাড়িটি টেনে তোলার পরে দেখা যায়, চালকের আসনে সিট বেল্ট বাঁধা অবস্থাতেই আটকে রয়েছেন অতনু। গাড়ির সঙ্গে তাঁর শরীরের অর্ধেক অংশ পাঁকে গেঁথে গিয়েছিল। তাতেই আঘাত লেগে ও শ্বাস বন্ধ হয়ে ওই যুবকের মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিক ভাবে অনুমান তদন্তকারীদের।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, নিউ টাউনের ওই রাস্তাটির শেষ কুড়ি মিটার অংশে কোনও আলো নেই। উপরন্তু রাস্তাটি খালে গিয়ে মিশেছে। যদিও ওই অভিযোগ অস্বীকার করে হিডকো-র চেয়ারম্যান দেবাশিস সেন বলেন, “নিউ টাউনের সব রাস্তাতেই আলো রয়েছে। আর কোনও রাস্তা খালে গিয়ে শেষ হয়নি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন