বদলাবে ছবিটা। —নিজস্ব চিত্র।
এবড়ো-খেবড়ো রাস্তা। কাঁচা নর্দমা। পর পর বাড়ি। যত্রতত্র পড়ে রয়েছে আবর্জনা। পূতিগন্ধময় পরিবেশে চলছে প্রাইমারি স্কুল। শহরের অন্যান্য বস্তির মতোই এই ছবি কলকাতা পুরসভার ৫৮ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত হাটগাছিয়া বস্তির। কিন্তু কলকাতা পুরসভার দাবি, এ বার বদলাবে ছবি। কারণ, বস্তিটিকে ‘মডেল বস্তি’ করার জন্য বেছে নিয়েছে পুরসভা। এই কাজে তিন কোটি পাঁচ লক্ষ টাকা দেবে রাজ্যের নগরোন্নয়ন দফতর। যার ১,৫২,৩০,০০০ টাকা ইতিমধ্যেই অনুমোদন করেছে দফতর। কাজও শুরু হয়েছে সম্প্রতি।
কলকাতা পুরসভার বস্তি দফতর সূত্রে খবর, ঢেলে সাজা হবে হাটগাছিয়ার নিকাশি, রাস্তাঘাট। মূল রাস্তার উপরে আড়াই ফুট চওড়া ব্যাসের নিকাশি পাইপ বসানো হয়েছে। গলির ভিতরে প্রতি বাড়িতে নিকাশির পাইপ বসানো এবং সংযোগ দেওয়ার কাজও শুরু হবে শীঘ্রই। প্রায় কুড়ি ফুট চওড়া রাস্তায় বিটুমিন হবে। তার দু’ধারে হবে কার্ভ চ্যানেল। গলিতে বসবে পেভার ব্লক। রাস্তায় লাগানো হবে এলইডি আলো।
বাসিন্দাদের জন্য ১২০০ বর্গ ফুট এলাকা নিয়ে তৈরি হচ্ছে একটি কমিউনিটি হল। পুরসভা পরিচালিত এক মাত্র প্রাইমারি স্কুলটিরও সংস্কার করা হবে। হাটগাছিয়ায় এত দিন কোনও স্বাস্থ্যকেন্দ্র ছিল না। প্রকল্প অনুযায়ী তৈরি হচ্ছে একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রও। ছোটদের জন্য তৈরি হয়েছে পার্ক। পার্ক ও প্রাইমারি স্কুলের মাঝের বেশ কিছুটা জায়গা এখনও কাদা আর দুর্গন্ধময় হয়ে পড়ে। পুরসভার মেয়র পারিষদ (বস্তি) স্বপন সমাদ্দার জানালেন, “মাটি উঁচু করে বাহারি গাছ, ফুলগাছ আর ঘাস দিয়ে সাজানো হবে জায়গাটা। এলাকায় খোলা বা ঢাকা কোনও ভ্যাটই থাকবে না। দিনে দু’বার বাঁশি বাজিয়ে হাত গাড়ি নিয়ে প্রতিটি বাড়ি থেকে ময়লা তুলে নিয়ে যাবেন পুরকর্মীরা। বস্তির বাইরের বড় ভ্যাটে আবর্জনা জমা হবে। প্রবেশপথে ঢালাই করে সুসজ্জিত তোরণ তৈরি হবে। এ ছাড়াও বস্তিতে বিভিন্ন মণীষীর প্রতিকৃতি বসানো হবে। এতে শিক্ষা আর সৌন্দর্যায়ন
দুই-ই হবে।”
বস্তির এক দিকে রয়েছে আবর্জনায় প্রায় বুজে যাওয়া হাটগাছিয়া খাল। এক সময়ে এখানে মাছ চাষ করা হত বলে জানাচ্ছেন বাসিন্দারা। আশির দশকের মাঝামাঝি থেকে বর্জ্য পড়তে শুরু হলে নষ্ট হতে থাকে খাল। এ বার সংস্কার হবে খালটির। দফতর সূত্রে খবর, খালের সৌন্দর্যায়ন ঘটিয়ে বোটিং-এর ব্যবস্থা করা হবে। রেলিং বসানো হবে। ছোট ছোট গাছ লাগানো হবে। খালধারে যে সব দোকান রয়েছে তা উচ্ছেদ না করে এক রকম দেখতে দোকান ঘর তৈরি হবে।
কলকাতা শহরে এত বস্তি থাকতে কেন হাটগাছিয়াকেই ‘মডেল বস্তি’র জন্য নির্বাচন করল পুরসভা? স্বপনবাবু জানান, এ শহরের পিছিয়ে পড়া ৫৮ নম্বর ওয়ার্ডের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে অনেকগুলি বস্তি রয়েছে। কাজ শুরু করার জন্য যে কোনও একটি বস্তিকে বাছাই করতে হত। সে ক্ষেত্রে বস্তিবাসীর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। হাটগাছিয়ার বস্তিবাসীদের উৎসাহ থাকায় একে বেছে নেওয়া হয়।
মিলনমেলা প্রাঙ্গণের লাগোয়া এই বস্তিতে প্রায় ১০,০০০ জনের বাস। পানীয় জলের জন্য ভরসা রাস্তার কল। নিকাশি ব্যবস্থা কার্যত নেই। ফলে প্রতি বর্ষায় জমা জলের সমস্যা তো আছেই, জানালেন বাসিন্দা শ্রীদাম আদক। পুরসভা সূত্রে খবর, এ বার প্রতিটি বাড়িতে জল পৌঁছনোর ব্যবস্থা করা হবে। এক দশকে এলাকার আশেপাশে গজিয়ে উঠেছে বেশ কিছু বহুতল। এক ধাক্কায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে বস্তিগুলির উপরে। নিকাশি আর পানীয় জলের পরিকাঠামো আরও দুর্বল হয়ে পড়েছে। আগে এখানে চাষ হত। ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে জনবসতি। এত দিন নানা পরিষেবা থেকে বঞ্চিত ছিলেন বলে জানালেন বাসিন্দারা। পুরসভার এই উদ্যোগে খুশি সবাই।