তৃণমূলের পুর-প্রার্থী তালিকা

স্ত্রী-কন্যা-ভাই দিয়ে সাজানো ‘স্বজন বাগান’

সংরক্ষণের কোপে পড়া অধিকাংশ ওয়ার্ডে কাউন্সিলরের ‘স্বজন’দের কলকাতা পুরভোটে প্রার্থী করল তৃণমূল। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে রবিবার কালীঘাটে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করা হয়। উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী এবং প্রবীণ নেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায়-সহ পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সুব্রত বক্সী, ফিরহাদ হাকিম, অরূপ বিশ্বাস ও মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়রা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০১৫ ০২:১৬
Share:

সংরক্ষণের কোপে পড়া অধিকাংশ ওয়ার্ডে কাউন্সিলরের ‘স্বজন’দের কলকাতা পুরভোটে প্রার্থী করল তৃণমূল। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে রবিবার কালীঘাটে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করা হয়। উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী এবং প্রবীণ নেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায়-সহ পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সুব্রত বক্সী, ফিরহাদ হাকিম, অরূপ বিশ্বাস ও মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়রা। প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেন সুব্রতবাবু। এ বার যে সব কাউন্সিলরদের ওয়ার্ড তফসিলি এবং মহিলা হিসেবে সংরক্ষিত হয়েছে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই হয় তাঁদের ছেলে, মেয়ে, স্বামী বা স্ত্রীকে প্রার্থী করা হয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের একাংশ ক্ষুব্ধ। তাঁদের বক্তব্য, “এ ভাবে চললে তো কোনও বারই পরিবারের বাইরের কেউ সুযোগই পাবে না। পরিবার কেন্দ্রিক রাজনীতি চলবে।” মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় অবশ্য ওই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, “দল যাঁকে যোগ্য মনে করেছে, তাঁকে প্রার্থী করেছে।”

Advertisement

তৃণমূলের প্রায় জন্মলগ্ন থেকে প্রার্থী তালিকা তৈরির ক্ষেত্রে দলনেত্রীর পরেই যাঁর অন্যতম ভূমিকা ছিল, তিনি অর্থাৎ মুকুল রায়ও প্রার্থী তালিকা নিয়ে ‘কটাক্ষ’ করেছেন। এ বিষয়ে মুকুলের মন্তব্য, “প্রার্থী তালিকা তৈরিতে দল কোনও রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেনি। দল যাঁদের প্রার্থী করেছে, তাঁদের উপরে আস্থা রেখেছে। এখন মানুষও তাঁদের উপরে আস্থা রাখলে ভাল!” বিজেপির রাজ্য সম্পাদক রীতেশ তিওয়াড়ি বলেন,“তৃণমূল ভয় পেয়ে জেতা আসনের কাউন্সিলরকে বদলে অরাজনৈতিক ব্যক্তিকে প্রার্থী করেছে।” সিপিএমের রূপা বাগচী বলেন, “গণতন্ত্র দেব বলে দলতন্ত্র আগেই হয়েছে। এ বার পরিবারতন্ত্র শুরু হল।”


সবিস্তার জানতে ক্লিক করুন।

Advertisement

সংরক্ষণের কোপে পড়া যে সব কাউন্সিলরের আত্মীয়কে এ বার প্রার্থী করা হয়েছে, তাঁরা হলেন স্মরজিৎ ভট্টাচার্য, মৃণাল সাহা, ইকবাল আহমেদ, সুনীতা সাহা, সঞ্জয় দাসেরা। সংরক্ষণের কোপ পড়েনি, অথচ বাদ পড়েছেন বেশ কয়েক জন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ব্রজেন্দ্র বসু, ৬০ নম্বরের গুলজার জিয়া, ৬৯ নম্বরের অনিতা বসু (প্রয়াত তৃণমূল নেতা গৌতম বসুর স্ত্রী), ৭১ নম্বরে কাউন্সিলর অনিল মুখোপাধ্যায়, ৭২ নম্বরের কৃষ্ণা নন্দী, ৯৩ নম্বরের মালা মহলানবিশ, ১০৬ নম্বরের দীপু দাসঠাকুর, ১০৮ নম্বরের পার্থ রায়চৌধুরীরা। বাদ গিয়েছেন মন্ত্রী জাভেদ আহমেদ খানের স্ত্রী, ৬৬ নম্বরের কাউন্সিলর জাভেদ রফত্। তবে ওই ওয়ার্ডে প্রার্থী করা হয়েছে জাভেদের ছেলে ফৈয়াজ আহমেদ খানকে। কৃষ্ণা নন্দীর বদলে ৭২ নম্বরে প্রার্থী হয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সুব্রত বক্সীর ভাই সন্দীপ বক্সী। বর্তমানে তিনি সাই-এর (স্পোর্টস অথরিটি অব ইন্ডিয়া) পদস্থ অফিসার হিসেবে কর্মরত। খুব শীঘ্রই সন্দীপ ওই চাকরি ছেড়ে দেবেন বলে খবর। ১০৮ নম্বর ওয়ার্ডে নতুন প্রার্থী হচ্ছেন প্রাক্তন ফুটবলার শ্যামল বন্দ্যোপাধ্যায়। ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান কংগ্রেস কাউন্সিলর প্রকাশ উপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে প্রার্থী করা হয়েছে বিধায়ক পরেশ পালকে। ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে দু’জনের নাম বাছাই হয়ে আছে। দিল্লি থেকে ফিরে ওই ওয়ার্ডে প্রার্থীর নাম চূড়ান্ত করবেন মুখ্যমন্ত্রী।

তৃণমূল সূত্রের খবর, এ বার পুরভোটে কোনও মন্ত্রী প্রার্থী হবে না বলে সিদ্ধান্ত হয়। সেই মতো দীর্ঘদিন ধরে পুরসভার কাউন্সিলর থাকলেও এ বার প্রার্থী হননি রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ (ববি) হাকিম। এ বার তাঁর ওয়ার্ডে দলের হয়ে লড়বেন চিকিৎসক প্রণব বিশ্বাস। তিনি অবশ্য ৭৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলেন। এ বার ওই ওয়ার্ডটি মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত হওয়ায় প্রণববাবুকে ববির ওয়ার্ডে প্রার্থী করা হয়েছে। মন্ত্রী শশী পাঁজাও এ বার প্রার্থী হননি। তাঁর ওয়ার্ডে প্রার্থী করা হয়েছে পুরসভার এক প্রাক্তন অফিসার রবীন চট্টোপাধ্যায়কে। গার্ডেনরিচ-কাণ্ডে মহম্মদ ইকবালের নাম জড়িয়ে যাওয়ায় ১৩৪ ওয়ার্ডে প্রার্থী করা হয়েছে তাঁর ছেলে সামস ইকবালকে। বাদ গিয়েছে জেলবন্দি শম্ভুনাথ কাওয়ের নামও। সেখানে প্রার্থী হচ্ছেন মেয়র পারিষদ স্বপন সমাদ্দার।

এ দিন তালিকা প্রকাশ করে সুব্রতবাবু জানান, ১৪৩ জনের এই প্রার্থী তালিকায় ৬৬ জন মহিলা এবং ২০ জন সংখ্যালঘু রয়েছেন। তালিকায় নতুন মুখ ৪৬ জন। একই সঙ্গে তিনি জানিয়ে দেন, শোভন চট্টোপাধ্যায় এখন মেয়র। তৃণমূল জিতলে ফের তিনি মেয়র হবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন