সহকর্মীর মৃত্যুর ঘটনায় গ্রেফতার এটিসি অফিসার

সহকর্মীর মৃত্যুর ঘটনায় জড়িত থাকতে পারেন, এই সন্দেহে ঘটনার প্রায় আড়াই মাস পরে কলকাতা বিমানবন্দরের এক এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল (এটিসি) অফিসারকে গ্রেফতার করল পুলিশ। ধৃতের নাম পল্লব স্বর্ণকার। বাড়ি মধ্যপ্রদেশে। তাঁর বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত খুনের অভিযোগ এনেছে বিমানবন্দর থানার পুলিশ। সোমবার কৈখালির কাছে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০১৪ ০১:৫৮
Share:

সহকর্মীর মৃত্যুর ঘটনায় জড়িত থাকতে পারেন, এই সন্দেহে ঘটনার প্রায় আড়াই মাস পরে কলকাতা বিমানবন্দরের এক এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল (এটিসি) অফিসারকে গ্রেফতার করল পুলিশ। ধৃতের নাম পল্লব স্বর্ণকার। বাড়ি মধ্যপ্রদেশে। তাঁর বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত খুনের অভিযোগ এনেছে বিমানবন্দর থানার পুলিশ। সোমবার কৈখালির কাছে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

Advertisement

পুলিশ জানিয়েছে, কলকাতা বিমানবন্দরে যাওয়ার যে নতুন সেতু রয়েছে, তার তলায় ১৬ মে ভোরে আহত অবস্থায় পাওয়া যায় এটিসি অফিসার সৌম্য মজুমদারকে (২৬)। পরে হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়।

পুলিশ জানিয়েছে, সৌম্যের বাড়ি কল্যাণীতে। বছরখানেক আগে চাকরিতে যোগ দেন তিনি। পল্লবও মাত্র দু’বছর আগে যোগ দেন কলকাতা বিমানবন্দরে। তাঁর বয়স সৌম্যের চেয়ে সামান্য বেশি। সৌম্যের মৃত্যুর পরে পল্লব অনির্দিষ্টকালের জন্য ছুটি নিয়ে দেশের বাড়ি চলে যান। ১০ জুলাই তাঁর ফের চাকরিতে যোগ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু, তিনি ফিরে আসেননি। পুলিশ তাঁকে খুঁজছে জেনে বারাসত ও কলকাতা হাইকোর্টে আগাম জামিনের আবেদনও করেন পল্লব। দু’বারই আবেদন নাকচ হয়।

Advertisement

পুলিশ জানিয়েছে, বিমানবন্দরের আড়াই নম্বর গেটের কাছে একটি ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকতেন সৌম্য। পল্লব ভাড়া থাকতেন ভিআইপি রোডের একটি ফ্ল্যাটে। ১৫ মে রাতে তাঁদের কারও ডিউটি ছিল না। অভিযোগ, রাত দশটার পরে পল্লব সৌম্যকে ডেকে নিয়ে যান। তদন্তে জানা গিয়েছে, সেই রাতে চিনার পার্কের কাছে এক রেস্তোরাঁয় বসে তাঁরা দু’জনে খাবার খান। রাত প্রায় দুটো নাগাদ পল্লবের মোটরবাইকের পিছনে বসে ফিরছিলেন সৌম্য। মোটরবাইক কৈখালি ছাড়িয়ে ওঠে বিমানবন্দরের সেতুতে। পল্লব পুলিশকে জানিয়েছিলেন, তিনি টাল সামলাতে না পেরে রেলিং-এ ধাক্কা মেরে চেতনা হারান। জ্ঞান ফিরলে দেখেন সৌম্য নেই। তখন তিনি একাই মোটরবাইক তুলে নিয়ে বাড়ি ফেরেন।

যদিও বিমানবন্দর থানার পুলিশ ১৬ তারিখ ভোরে টহল দেওয়ার সময়ে ওই সেতুর তলায় আহত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে সৌম্যকে। তাঁর পরনে হাফ-প্যান্ট ও স্যান্ডো গেঞ্জি। পুলিশ জানায়, বারাসত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরে তাঁর মৃত্যু হয়।

সৌম্যের বাবা, পেশায় চিকিৎসক বিজন মজুমদার ঘটনার পরে পল্লবের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁর দাবি, পল্লবের কথায় কিছু অসঙ্গতি ছিল। দিন দশ আগে বিজনবাবু সিআইডি-র কাছে পল্লবের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানান। বিজনবাবুর দাবি, ১৫ মে রাত প্রায় পৌনে এগারোটা পর্যন্ত বাড়িতে ছিলেন সৌম্য। মায়ের সঙ্গে তাঁর ফোনে কথাও হয়। সৌম্য বলেছিলেন, ‘‘শরীর ভাল লাগছে না। শুয়ে পড়ব।’’ তা হলে অত রাতে কেন তিনি বন্ধুর সঙ্গে রেস্তোরাঁয় যাবেন? তা ছাড়া বাড়িতে পরার হাফ-প্যান্ট ও স্যান্ডো গেঞ্জি পরেই বা কেন বেরোবেন? বিজনবাবুর দাবি, পল্লব তাঁকে জানিয়েছিলেন, তাঁরা দু’জনে চিনার পার্কে বারে বসে মদ্যপান করেছিলেন। অথচ ময়না তদন্তের রিপোর্টে সৌম্যের পাকস্থলীতে মদ পাওয়া যায়নি।

বিজনবাবুর আরও প্রশ্ন, ফেরার পথে সৌম্যকে বাড়িতে নামানোর কথা পল্লবের। কিন্তু আড়াই নম্বর গেটে আসতে গেলে বিমানবন্দরের সেতুতে ওঠার কথা নয়। তাঁর অভিযোগ, দুর্ঘটনার পরে যখন সৌম্যকে খুঁজে পাওয়া গেল না, তখন পল্লব কাছেই থাকা এটিসি বিল্ডিং-এ গিয়ে তা না জানিয়ে বাড়ি ফিরে ভোর সাড়ে চারটের সময়ে এক সহকর্মীকে ফোনে জানালেন কেন?

ময়না-তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট বলেছিল, মৃত্যুর কারণ দুর্ঘটনা। ফলে পুলিশও প্রাথমিক ভাবে দুর্ঘটনার মামলাই করেছিল। পুলিশ সূত্রে খবর, প্রাথমিক তদন্তের পরে তা অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলায় বদলে যায়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement