এক উন্মত্ত ব্যক্তির হাতে নিজের রিভলভারের গুলিতেই এক হোমগার্ড নিহত হওয়ার পরে পুলিশকর্তাদের টনক নড়ল। হরিদেবপুরের ওই ঘটনার পরে আর হোমগার্ডদের আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ডিউটি করতে দেওয়া হবে কি না, সেটা এ বার পুনর্বিবেচনা করে দেখছে লালবাজার।
কলকাতা পুলিশ সূত্রের খবর, প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে একান্ত প্রয়োজন ছাড়া আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হোমগার্ডদের আপাতত ডিউটি দেওয়া হবে না। তবে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ডিউটি দেওয়ার জন্য কোনও কনস্টেবল পাওয়া যাচ্ছে না, এমন পরিস্থিতিতে হোমগার্ডকে ওই ডিউটি দেওয়া যেতে পারে। সেই সঙ্গে হোমগার্ডদের অস্ত্র প্রশিক্ষণের মেয়াদ তিন মাস থেকে বাড়িয়ে কনস্টেবলদের মতো ছ’মাস করার কথা ভাবছেন পুলিশকর্তাদের একাংশ।
শুক্রবার রাতে হরিদেবপুরের ব্রিকফিল্ড রোডে হোমগার্ড রাজু গোয়ালার কোমরের খাপ থেকে রিভলভার তুলে তাঁরই বুকে গুলি করেন অশোক দাস নামে এক উন্মত্ত ব্যক্তি। .৩৮ বোরের ওয়েবলি স্কট রিভলভারে সেফ্টি ক্যাচ না থাকায় ট্রিগার টেপা মাত্র গুলি চলেছে। নিহত হয়েছেন রাজু, আহত স্থানীয় এক যুবকও। গণপ্রহারে জখম অভিযুক্ত অশোক দাস বাঙুর হাসপাতালে ভর্তি। রবিবার তাঁকে একপ্রস্ত জেরা করা হয়। তাঁর মানসিক অবস্থা খতিয়ে দেখা হবে।
এলাকায় গোলমালের খবর পেয়ে ওই রাতে হোমগার্ড রাজুর সঙ্গে মোটরবাইকে যান টহলদার কনস্টেবল মহম্মদ ওয়াহিদ আলমও। কিন্তু লালবাজারের কর্তারা প্রাথমিক তদন্তে জেনেছেন, রিভলভার ছিল কেবল হোমগার্ড রাজুর কাছেই। আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ডিউটিতে বেরোনোর আগে থানায় একটি জেনারেল ডায়েরি করতে হয়, যা পুলিশি পরিভাষায় ‘জিডি এন্ট্রি’। লালবাজার সূত্রের খবর, শুক্রবার রাতে থানার ‘জিডি এন্ট্রি’ রয়েছে শুধু রাজুর নামেই।
আর এখানেই পুলিশের অন্দরে প্রশ্ন উঠেছে, কনস্টেবল ও হোমগার্ড যখন একসঙ্গে টহলদারিতে বেরোচ্ছেন, তখন কী করে কনস্টেবল আগ্নেয়াস্ত্র নিলেন না, অথচ হোমগার্ড রিভলভার নেওয়ার অনুমতি পেয়ে গেলেন? কলকাতা পুলিশের শীর্ষকর্তারা শনিবারই জানান, কোনও হোমগার্ডের আগ্নেয়াস্ত্রের প্রশিক্ষণ থাকলে বন্দুক নিয়ে তাঁর ডিউটি করা বেআইনি না হলেও রেওয়াজ বা প্রথা-বহির্ভূত বিষয়। তা হলে হরিদেবপুর থানা সেই রেওয়াজ ভাঙল কেন, তারই উত্তর খুঁজছেন লালবাজারের কর্তারা। তাঁদের একাংশের মতে, হোমগার্ড ও কনস্টেবলের মধ্যে যে কোনও এক জন আগ্নেয়াস্ত্র পাওয়ার হলে তা কনস্টেবলেরই পাওয়ার কথা।
পুলিশকর্তাদের একাংশের বক্তব্য, আইন অনুযায়ী পুলিশ বাহিনী সরকারি কর্তব্য পালনের সময়ে আগ্নেয়াস্ত্র বহন ও ব্যবহার করতে পারে। কিন্তু হোমগার্ডরা বাহিনীর অংশ নন। পুলিশ বাহিনী স্বরাষ্ট্র দফতরের অধীন, হোমগার্ডরা অসামরিক প্রতিরক্ষা দফতরের আওতায়। হোমগার্ডরা এক ধরনের স্বেচ্ছাসেবক। যদিও তাঁরা পারিশ্রমিক পান।
লালবাজার সূত্রের খবর, কলকাতায় মোট হাজার চারেক হোমগার্ডের প্রায় এক চতুর্থাংশের অস্ত্র প্রশিক্ষণ রয়েছে। কলকাতা পুলিশের বহু থানায়, বিশেষত সংযোজিত এলাকার থানাগুলিতে কনস্টেবল কম হওয়ায় হোমগার্ডদের কনস্টেবলদের ভূমিকা পালন করতে হয়। তবে হোমগার্ডকে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে ডিউটি করানোর বিষয়টি সম্পূর্ণ থানার ওসি-র সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করে। লালবাজার জেনেছে, সংযোজিত এলাকারই বহু থানায় এমন ভাবে ডিউটি ভাগ হয়, যাতে কখনও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হোমগার্ডের ডিউটি করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয় না বললেই চলে। কিন্তু কয়েক জন ওসি এ সব মাথায় রাখেন না বলেও পুলিশকর্তারা জেনেছেন।
তবে এক অফিসার জানান, এ বার লোকসভা ভোটের সময়ে হোমগার্ডরা রাইফেল কাঁধে ইভিএম পাহারা দিয়েছেন। এই মর্মে যুগ্ম কমিশনার (সদর) নির্দেশও জারি করেছিলেন। ব্যাঙ্ক পাহারার ক্ষেত্রেও অনেক সময়ে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হোমগার্ডদের ডিউটি দেওয়া হয়। ওই অফিসারের কথায়, “পুলিশের সংখ্যা অপ্রতুল। হোমগার্ডদের অস্ত্র নিয়ে ডিউটি দিতেই হয়। কিন্তু সেই ডিউটি দেওয়ার সিদ্ধান্ত যেন পরিণতমস্তিষ্কের হয়। না হলেই বিপত্তি।”