ফাইল চিত্র।
হাওড়া স্টেশনের ২১ নম্বর প্ল্যাটফর্ম। কেরলে বন্যার কবল থেকে সরিয়ে আনা কিছু মানুষকে নিয়ে প্রথম বিশেষ ট্রেন তখনও ঠিকঠাক দাঁড়ায়নি। তার আগেই চেনা শহরের প্ল্যাটফর্মে আছড়ে পড়ল দুর্গতদের স্রোত। বন্যার ভয়াবহ অভিজ্ঞতা ভুলে তখন শুধুই ঘরে ফেরার আনন্দ!
বিপদের মুখে হাতের কাছে যা পেয়েছেন, তা-ই নিয়ে কেরল ছাড়েন মোহাবুল, শহিদুল, মহসিনেরা। গত কয়েক দিনে যাঁরা এক ভয়াবহ অভিজ্ঞতার সাক্ষী। নামখানার বাসিন্দা সিরাজ খান সপরিবার পলকটে আটকে পড়েছিলেন। সিরাজ বলেন, ‘‘পলকটে আমার সঙ্গে ছিল ভাইবৌ, এক বছরের ছেলে এবং চার বছরের মেয়ে। ওদের নিয়ে কী ভাবে ফিরেছি, আমিই জানি।’’ হাওড়া স্টেশন থেকে শিয়ালদহের বাস ধরার তাড়ার মধ্যে সিরাজ জানান, রাতে ঘুমোতে যাওয়ার সময়েও জল বিপদসীমা ছোঁয়নি। সকালে উঠে চক্ষু চড়কগাছ! তেতলা বাড়ির দোতলায় জল। জলের স্রোত যখন তাড়া করছে, উঁচু আশ্রয়ের খোঁজে গাছের ডালকেও আঁকড়ে ধরেছেন দুর্গতেরা। জলের মধ্যে লরিকে সেতু হিসেবে ব্যবহার করে তাঁদের উদ্ধার করে পুলিশ। সিরাজ মলয়ালি জানেন বলে সুবিধা হয়েছে। কিন্তু ভাষা-সমস্যা দুর্ভোগের মাত্রা বাড়িয়েছে অনেকেরই।
মুর্শিদাবাদের ডোমকলের বাসিন্দা সানাউল্লা খান আটকে ছিলেন ত্রিশূরে। তাঁর কথায়, ‘‘পরিস্থিতি ভয়াবহ। আমাদের বাড়ির কাছে একটা মুদিখানা ছিল। সকালে দেখি, আস্ত মুদিখানা জলের তলায়! তার মধ্যেই দোকানির পরিবার জলবন্দি হয়ে মারা গিয়েছেন।’’ তার পরেই কেরল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন রাজমিস্ত্রির কাজে ওই রাজ্যে যাওয়া সানাউল্লারা। মাথাপিছু ৫০০ টাকায় মিনিবাস ভাড়া করা হয়। সানাউল্লা জানান, কোন পথে গেলে তাঁরা ৩৫ জন কোয়ম্বত্তূর পৌঁছতে পারবেন, তাঁদের মালিকই সেটা মিনিবাসের চালককে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। সানাউল্লার কথায়, ‘‘ওই রাস্তা মোটরবাইকের জন্য। আগ্রাসী জলস্রোত থেকে বাঁচতে বিপদ মাথায় নিয়ে সেই সরু রাস্তা দিয়েই দ্রুত ছুটতে থাকল আমাদের মিনিবাস।’’
বর্ধমানের বাসিন্দা মহম্মদ মহসিনের অভিযোগ, বিশেষ ট্রেনে টিকিট কাটার দরকার নেই বলে ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু বিশাখাপত্তনমে টিকিট পরীক্ষক যাঁর কাছ থেকে যে-ভাবে পেরেছেন, টাকা নিয়েছেন। ‘‘ওই টাকা খাবার কেনার জন্য রেখেছিলাম,’’ বললেন মহসিন। মালদহের মোহাবুল শেখ জানান, ৭০ টাকার বিরিয়ানি ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তা-ও পাওয়া যাচ্ছে না। খাবার, পানীয় জল কিছুই পর্যাপ্ত নয়।