প্রয়াগের বিপুল জমি, তল্লাশিতে সিবিআই

পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসকের কাছে ওই জমিজমা সংক্রান্ত বিস্তারিত রিপোর্ট চেয়েছে সিবিআই। জেলাশাসকের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে, ফিল্ম সিটির জমির মধ্যে যে পাট্টা জমি রয়েছে, তা কি সরকার দিয়েছিল?

Advertisement

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় 

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০১৮ ০৩:৪৫
Share:

ভুয়ো অর্থলগ্নি সংস্থার তদন্তে নেমে এ বার প্রয়াগ গোষ্ঠীর বিপুল পরিমাণ জমিতে গরমিলের সন্ধান মিলেছে বলে দাবি সিবিআইয়ের।
কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার সূত্রে বলা হচ্ছে, পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতায় প্রায় ৪০০ একর জমি জুড়ে প্রয়াগ ফিল্ম সিটি গড়ে উঠলেও স্থানীয় রেজিস্ট্রেশন অফিস থেকে প্রয়াগের নামে মাত্র ৫০ একর জমির দলিল পাওয়া গিয়েছে। প্রয়াগ গোষ্ঠীর সংস্থা প্রয়াগ ইনফোটেক হাইরাইজ লিমিটেডের নামে থাকা ৯৯টি দলিলে ওই ৫০ একর জমির দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৭০ কোটি টাকা। কিন্তু বাকি ৩৫০ একর জমির মালিকানার কোনও পাকা কাগজ নেই। এমনকি, ওই অর্থলগ্নি সংস্থার দখলে থাকা জমির মধ্যে সরকারি পাট্টা বা বন দফতরের জমিও রয়েছে বলেও তদন্তকারীদের দাবি।
পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসকের কাছে ওই জমিজমা সংক্রান্ত বিস্তারিত রিপোর্ট চেয়েছে সিবিআই। জেলাশাসকের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে, ফিল্ম সিটির জমির মধ্যে যে পাট্টা জমি রয়েছে, তা কি সরকার দিয়েছিল? যদি না দিয়ে থাকে, তা হলে এত পরিমাণ পাট্টা জমি প্রয়াগের হাতে গেল কী ভাবে? পাট্টার জমি নিয়ে জমিদাতারে কোনও অভিযোগ করেছিলেন কিনা, এবং করে থাকলে সরকার কী ব্যবস্থা নিয়েছে, তা-ও জানতে চাওয়া হয়েছে।
সিবিআই সূত্রের দাবি, পুজোর ঠিক আগে তদন্তকারীদের একটি দল ফিল্ম সিটিতে তল্লাশি চালাতে গিয়েছিল। তখন স্থানীয় বাসিন্দারা অনেকেই অভিযোগ করেন, নামমাত্র দরে তাঁদের কাছ থেকে জমি নেওয়া হয়েছিল। এমনকি অনেকে কোনও টাকাই পাননি। এ ব্যাপারে প্রয়াগের কর্ণধার বাসুদেব বাগচীর বক্তব্য জানতে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। এসএমএসেরও জবাব দেননি।
সিবিআইয়ের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘স্থানীয় তফসিলি জাতি, জনজাতির মানুষকে দিয়ে সাদা কাগজে জমির দখলনামা লিখিয়ে নিয়েছিল ওই সংস্থা। কাউকে আবার অন্যত্র জমি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। ফিল্মসিটিতে জমি দিলে মোটা টাকা ফেরত দেওয়ার কথাও বলেছিল।’’ সিবিআইয়ের দাবি, জমিদাতাদের অনেকেই তাদের কাছে অভিযোগ করেছেন, বাম জমানার এক মন্ত্রী এবং পঞ্চায়েত প্রধানের ‘মদতে’ এই ভাবে সাদা কাগজে জমির দখলনামা লেখানো হত। সরকার বদলের পর প্রয়াগ গোষ্ঠীর সঙ্গে তৃণমূলের কয়েক জন নেতা-মন্ত্রীর ‘ঘনিষ্ঠতা’ হয়। বর্তমান শাসক দলের এক হেভিওয়েট নেতার সঙ্গে প্রয়াগের ‘যোগাযোগের প্রমাণ’ তাদের কাছে রয়েছে বলে সিবিআইয়ের দাবি। সংস্থার এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘গরিব মানুষের প্রায় সাড়ে তিনশো একর জমি হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। সরকারি মদত না-থাকলে কেউ এমন কাজ করতে পারে না।’’
এ প্রসঙ্গে সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন,‘‘এত বড় ঠগবাজ আর তার প্রশ্রয়দাতাকে খুঁজে বের করুক সিবিআই। জমিদাতারা জমি বা টাকা যাতে ফেরত পান সেই ব্যবস্থা করা হোক।।’’ আর পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের মন্তব্য, ‘‘সিবিআই তো নিজেরাই ডামাডোলের মধ্যে রয়েছে। আগে ওদের বিশ্বাসযোগ্যতা ফিরুক। তার পর কোন দল বা নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তা শোনা যাবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন