প্রতীকী ছবি।
বছর চারেক আগের সেই রাতের কথা মনে পড়লে আজও শিউরে ওঠেন আদিবাসী তরুণী। ভিন্ জাতের বিবাহিত যুবকের সঙ্গে সম্পর্ক রাখার অভিযোগে সে রাতে সালিশি সভার রায়ে গণধর্ষিতা হয়েছিলেন তিনি। বীরভূমের লাভপুর থানার সুবলপুরের সেই ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছিল গোটা দেশকে।
সেই অত্যাচারের ক্ষতচিহ্ন এখনও রয়ে গিয়েছে বছর পঁচিশের তরুণীর দেহে, আরও বেশি করে মনে। যার মাসুল আজও গুনতে হচ্ছে তাঁকে। জন্মভিটে ছেড়ে সপরিবার অন্য গ্রামে আশ্রয় নিতে হয়েছে। পুলিশি নিরাপত্তার ঘেরাটোপে কার্যত একঘরে দিন কাটাতে হচ্ছে তাঁদের। পরকীয়া সংক্রান্ত সুপ্রিম কোর্টের রায়ের কথা জেনে ওই তরুণীর প্রতিক্রিয়া— ‘‘আইন করলেই হয় না, তা প্রতিষ্ঠিত করার ব্যবস্থা করতে হবে। সালিশি সভা বসানোও তো বেআইনি, কে শোনে সে কথা! ক’টা সালিশির খবর প্রশাসনের কানে পৌঁছোয়। আর পৌঁছলেই বা কত বার তা আটকাতে প্রশাসন উপযুক্ত পদক্ষেপ করে?’’
২০১৪ সালে জানুয়ারির এক রাতে আদিবাসী অধ্যুষিত সুবলপুর গ্রামের বাসিন্দাদের একাংশ ওই তরুণী এবং তাঁর বিবাহিত প্রেমিককে মোড়লের বাড়ির কাছে একটি গাছে বেঁধে সালিশি সভা বসায়। দু’জনেরই মোটা টাকা জরিমানা করা হয়। অভিযুক্ত যুবক টাকা মিটিয়ে দিলেও, দরিদ্র পরিবারের ওই তরুণী তা দিতে পারেননি। অভিযোগ, ধর্ষণ করে ওই তরুণীর ‘জরিমানা উসুল’ করে নেওয়ার নির্দেশ দেয় মোড়ল। সালিশি সভা থেকেই টেনে ঝোপে নিয়ে গিয়ে ১৩ জন তাঁকে ধর্ষণ করে। ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই তোলপাড় পড়ে। মো়ড়ল-সহ ১৩ জন গ্রেফতার হয়। তারা যাবজ্জীবন সাজা খাটছে।
লাভপুরেরই অন্য একটি আদিবাসী গ্রামে তাঁকে পুনর্বাসন দেয় প্রশাসন। বৃদ্ধা মা, দুই দাদা-বৌদি এবং এক বিবাহিতা বোনকে নিয়ে সেখানেই বাস। দাদা, বোনেরা অবশ্য আলাদা বাড়িতে থাকেন। আদালতের রায়ে ক্ষতিপূরণ বাবদ এককালীন কিছু টাকা পেয়েছিলেন তরুণী। এখন ভাতা আর সেই টাকা ভেঙেই দিন কাটে মা-মেয়ের। ওই তরুণীর কথায়, ‘‘রাস্তায় বের হলেই লোকে আমার দিকে আঙুল তুলে হরেক আলোচনা শুরু করে। তাই কাজে যেতে পারি না। জানি না টাকা ভেঙে ভেঙে আর কত দিন চলবে।’’ ওই তরুণীর মা বলেন, ‘‘এখানেও একঘরের মতোই হয়ে রয়েছি। গ্রামের মানুষ কথা বলে ঠিকই, কিন্তু কোনও পালা-পার্বণে যেতে পারি না।’’ জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘ওই তরুণীর চাকরি ব্যাপারে খোঁজ না নিয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে সালিশি সভার খবর পেলেই কড়া হাতে তা দমন করা হবে।’’