অপেক্ষা: মণি বাসকি। —নিজস্ব চিত্র।
একমাত্র মেয়ে খুন হয়েছে সাত বছর আগে। সেই খুনে অভিযুক্ত যুবক জামিনে মুক্ত। সংসারও পেতেছেন। খুনের মামলার সাজা ঘোষণা হওয়ার দিনে অসহায় মা এসেছেন আদালত চত্বরে। এসে দেখলেন, আদালত খোলা, আইনজীবীরাও রয়েছেন। নিজেদের মধ্যে গল্প করছেন। কিন্তু, তাঁদের কর্মবিরতি। আইনজীবীদের প্রশ্ন করলেও সদুত্তর মেলেনি। তাই পর দিন ফের গিয়েছেন আদালতে। দিনভর অপেক্ষা করেছেন। রোদে তেতে পুড়ে বিচার চাইতে আসা পাথর খাদানের শ্রমিক মণি বাসকি বুঝতেই পারছেন না, কবে তাঁর মেয়ে বিচার পাবে।
এই দৃশ্য রামপুরহাট আদালতের। হাওড়া আদালতের কিছু আইনজীবী আক্রান্ত হয়েছেন, এই অভিযোগে গোটা রাজ্যেই আইনজীবীরা কর্মবিরতি চালিয়ে যাচ্ছেন। যার জেরে চূড়ান্ত ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন বিচারপ্রার্থীরা। গত বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া এই কর্মবিরতির ফলে মণি বাসকির মতো অনেকেরই মামলার রায় স্থগিত হয়ে গিয়েছে।
রামপুরহাটের রানিগ্রামে, ভাইয়ের বাড়িতে এখন আশ্রিতা অসুস্থ মণি বাসকি। বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার ক্ষমতা নেই। ঠা-ঠা রোদে রুগ্ণ শরীর নিয়ে গত বৃহস্পতিবার সকাল সকাল আদালতে পৌঁছে বিচারকক্ষের কাছে দাঁড়িয়েছিলেন। কখন রায় জানাতে পারবেন, সেই অপেক্ষায়। মণির কথায়, ‘‘একমাত্র মেয়েটাকে সাত বছর আগে খুন করে বাবলা গাছে গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলিয়ে দেওয়া হল। পাথর খাদানে শ্রমিকের কাজ করে যা আয় হয়, তা দিয়ে খাবারটুকুও জোটে না ঠিকমতো। শরীরে জোর নেই, তবু এতগুলো বছর মামলার দিনগুলোতে আদালতে এসেছি এই আশায় যে, উকিল নিশ্চয়ই আমার মেয়ের খুনিকে সাজা দেওয়ার ব্যবস্থা করাবেন।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
কিন্তু, আইনজীবীদের কর্মবিরতির ঠেলায় পরপর দুদিন আদালতে এসেও হতাশ হয়ে ফিরতে হয়েছে মণি।
রানিগ্রামের বাসিন্দারা জানান, ঝাড়খণ্ডের সারাসডাঙ্গায় একটি পাথর ভাঙার কারখানায় শ্রমিকের কাজ করে একমাত্র মেয়েকে লেখাপড়া শেখানো শুরু করেছিলেন মণি। স্বামী মারা গিয়েছেন ২০০০ সালে। মেয়ে বড় হয়ে তাঁর সহায় হবে, এমনটাই স্বপ্ন ছিল মণির। ২০১২ সালে মেয়ে তখন নবম শ্রেণির ছাত্রী। গ্রামের এক যুবকের সঙ্গে মেয়ের মেলামেশার খবর মণি জানতেন। মণি জানান, সে বছর কালীপুজোর পরে গ্রামে যখন উৎসব চলছে, তখন ওই যুবকের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার কথা বলেই এক সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল মেয়ে। মণি আপত্তি করলেও তাড়াতাড়ি ফিরে আসার কথা বলেছিল। মণি বলেন, ‘‘মেয়েটা সেই যে গেল ফিরল লাশ হয়ে। রাতভর খুঁজেও পেলাম না, ওই ছেলেটার বাড়িতে গেলাম, তাড়িয়ে দিল। ভোরবেলা গ্রামের ধারে বাবলা গাছে ঝুলন্ত অবস্থায় মেয়েটাকে যখন পেলাম, তখন দেহে প্রাণ ছিল না।’’
পুলিশ জানায়, রামপুরহাট থানায় খুনের অভিযোগ দায়ের পরে অভিযুক্ত যুবক তিন মাস ফেরার ছিল। ধরা পড়ার পরে জেল হয়। পরে জামিনে ছাড়াও পেয়ে যান। এই মামলার সরকারি আইনজীবী উৎপল মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার এই মামলার রায় ঘোষণার কথা ছিল। কিন্তু আইনজীবীদের কর্মবিরতিতে রায় ঘোষণা স্থগিত আছে। আদালতে কাজ শুরু হলে রায় ঘোষণার দিন জানা যাবে।’’
মণি বাসকিকে আরও কয়েক বার আদালতে আসতে হবে।