cpm rally

ইডি-সিবিআই ঘেরাও হবে, হুঁশিয়ারি বাম সমাবেশে

ধর্মতলায় বামেদের সমাবেশ করতে অনুমতি দিতে চায়নি পুলিশ। রাণি রাসমণি অ্যাভিনিউ বা ওয়াই চ্যানেলে সমাবেশ করার প্রস্তাব বামেরা মানতে চায়নি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৫:০৭
Share:

খাদ্য আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে ধর্মতলায় বামফ্রন্টের সমাবেস-মঞ্চে বিমান বসু। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।

দুর্নীতি, কেলেঙ্কারির মাথাদের এক মাসের মধ্যে গ্রেফতার করে জেরায় না বসালে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার দফতর ঘেরাও করার ফের হুঁশিয়ারি দিল বামফ্রন্ট। তাদের আক্রমণের নিশানায় অবশ্যই তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। খাদ্য আন্দোলনের ‘শহিদ স্মরণ’ সমাবেশ থেকে বৃহস্পতিবার বাম নেতারা অভিযোগ করেছেন, দুর্নীতি ও লুট আড়াল করার জন্য কেন্দ্র ও রাজ্যের দুই শাসক দল বিজেপি ও তৃণমূলের ‘বোঝাপড়া’ রয়েছে। ‘আঁধার’ কাটাতে দুই শক্তিকেই পরাস্ত করার ডাক দিয়েছেন তাঁরা। তৃণমূল অবশ্য কটাক্ষ করেছে, লোকসভা নির্বাচনের সামনে দাঁড়িয়েও বামেদের মূল আক্রমণের লক্ষ্য যে বিজেপির বদলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলই, তা ফের বুঝিয়ে দিচ্ছেন বাম নেতৃত্ব।

Advertisement

ধর্মতলায় বামেদের সমাবেশ করতে অনুমতি দিতে চায়নি পুলিশ। রাণি রাসমণি অ্যাভিনিউ বা ওয়াই চ্যানেলে সমাবেশ করার প্রস্তাব বামেরা মানতে চায়নি। শেষ পর্যন্ত জওহরলাল নেহরু রোডের উপরে পাঁচ তারা হোটেলের উল্টো দিকে ম্যাটাডোরের উপরে অস্থায়ী মঞ্চ করে সমাবেশ হয়েছে। বৃষ্টির মধ্যেই শিয়ালদহ, হাওড়া-সহ পাঁচটি জায়গা থেকে মিছিল নিয়ে ধর্মতলা চত্বরে আসেন সুজন চক্রবর্তী, কনীনিকা ঘোষ, মধুজা সেন রায়-সহ বাম নেতা-নেত্রীরা। প্রবল দুর্যোগের মধ্যেও সমাবেশে ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। সমাবেশের জেরে ধর্মতলা চত্বরে দক্ষিণমুখী যান চলাচল ঘুরিয়ে দিয়েছিল পুলিশ।

সমাবেশে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেছেন, ‘‘আমরা বলেছিলাম, লুটের টাকা কালীঘাটে গিয়েছে। অনেকে বিশ্বাস করেনি। এখন আদালত বলছে। এক মাসের মধ্যে অভিষেককে গ্রেফতার করে জেরা করতে হবে। নইলে এখানে যত লোক এসেছেন, তার চেয়েও বেশি লোক নিয়ে ইডি-সিবিআই দফতর ঘেরাও হবে!’’ দিল্লিতে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর সঙ্গে অভিষেকের গোপন বৈঠকের প্রসঙ্গও তুলেছেন সেলিম। তাঁর মন্তব্য, ‘‘নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ, মোহন ভাগবতকে ধরে বাঁচার চেষ্টা করেছিলেন। দাদাকে দিয়ে হচ্ছে না দেখে ভাইকে ধরেছেন! কিন্তু মোদী, রাহুল কেউ বাঁচাতে পারবেন না। যারা লুট করেছে, তাদের বিচার হবেই!’’

Advertisement

তৃণমূলের রাজ্য নেতা তাপস রায় অবশ্য পাল্টা বলেন, ‘‘লোকসভা নির্বাচন সামনে চলে এলেও ওঁদের লক্ষ্য বিজেপি নয়, তৃণমূলই। ওঁরা সেটাই বুঝিয়ে দিচ্ছেন। আর ভুঁইফোঁড় অর্থলগ্নি সংস্থার কেলেঙ্কারিতে সেলিম ও আরও কিছু সিপিএম নেতার নাম জড়িয়েছিল। সিবিআই, ইডি দফতর ঘেরাও করতে গেলে সেটাও যেন মনে করে তদন্তকারীদের বলে আসেন!’’ তাপসের আরও কটাক্ষ, ‘‘খাদ্য আন্দোলন নিয়ে সমাবেশ হচ্ছে কিন্তু নুরুলের মায়ের কথা ওঁদের মনে থাকে না। নুরুলের মা-কে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছেই যেতে হয়।’’

খাদ্য আন্দোলনে ১৯৫৯ সালের ৩১ অগস্ট এই রকমই প্রবল বৃষ্টির মধ্যে ভুখা জনতার মিছিল হয়েছিল, স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু। রাজভবন পেরিয়ে বিবাদি বাগের দিকে যাওয়ার পথে পুলিশ লাঠি চালিয়েছিল, মৃত্যু হয়েছিল ৮০ জনের। বর্তমান পরিস্থিতির প্রসঙ্গে বিমানবাবুর বক্তব্য, ‘‘পঞ্চায়েত নির্বাচনে খুন হচ্ছে। গণতন্ত্রের উৎসবে প্রাণহানি কেন হবে? রাজ্যে অপশাসন চলছে। একই কায়দায় দিল্লিতে আরএসএস-বিজেপি সরকার চালাচ্ছে। পশ্চিমবাংলায় তৃণমূল তাদের ডেকে এনেছে। সংবাদমাধ্যম দেখায় তৃণমূল বনাম বিজেপি লড়াই। কিন্তু তাদের বোঝাপড়া প্রকাশ্যে আনে না। গণ-আন্দোলনের পথ প্রশস্ত করতে হলে দুই শক্তিকেই হারাতে হবে।’’ বক্তা ছিলেন ফরওয়ার্ড ব্লক, আরএসপি ও সিপিআইয়ের তিন রাজ্য সম্পাদক নরেন চট্টোপাধ্যায়, তপন হোড় এবং স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়ও।

প্রবল বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়ার মধ্যে বিমানবাবু যখন সমাবেশের সমাপ্তি ঘোষণা করছেন, কাকভেজা বাম জনতা দাবি তোলে, মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়ের বক্তৃতা চাই! দাবি মেনে জনতাকে অভিনন্দন জানানোর জন্য মীনাক্ষীকে এগিয়ে দিয়েছিলেন বিমানবাবু। সদ্য ডেঙ্গি থেকে ওঠা ডিওয়াইএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী ওই মঞ্চে বলেন, ‘‘যারা কাজ ও খাদ্যের অধিকার লুট করেছে, পঞ্চায়েতে ভোট লুট করেছে, তাদের সকলকে জেলে না পোরা পর্যন্ত লড়াই থামবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন