তৃণমূল ও বিজেপির দুর্নীতির প্রতিবাদে কলেজ স্কোয়ার থেকে রানি রাসমণি অ্যাভিনিউ পর্যন্ত ১৭টি বাম দলের মিছিল। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
তৃণমূলের একুশে জুলাইয়ের সমাবেশের ঠিক আগের দিন কলকাতায় পথে নেমে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিল বামেরা। তিনি যে ‘সাদা’, মদন মিত্রকে মন্ত্রিসভা থেকে অপসারিত করে মুখ্যমন্ত্রীকে তা প্রমাণ করতে বললেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র।
সারা দেশেই সোমবার দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ দিবস পালন করেছে বামেরা। তার অঙ্গ হিসেবেই কেন্দ্র ও অন্যান্য রাজ্যে বিজেপি এবং এ রাজ্যে তৃণমূলের দুর্নীতির বিরুদ্ধে এ দিন কলেজ স্কোয়ার থেকে রানি রাসমণি অ্যাভিনিউ পর্যন্ত ১৭টি বাম দলের মিছিলে ভিড় হয়েছিল ভালই। মিছিল শেষে ম্যাটাডোর-মঞ্চের সমাবেশ থেকে মমতাকে ‘নীল-সাদা মুখ্যমন্ত্রী’ বলে কটাক্ষ করে সূর্যবাবু বলেন, ‘‘আপনি নীল না সাদা, তা বুঝিয়ে দিন। মন্ত্রিসভার এক জন সদস্য এত দিন জেলে থেকেও মন্ত্রী পদে থাকতে পারেন! এটা রেকর্ড। কোথাও কখনও হয়নি। মুখ্যমন্ত্রীকে বলতে চাই, আপনি যদি সাদা হন, তা হলে বলুন ওঁকে অপসারিত করা হল!’’ সিপিআই (এম-এল) লিবারেশনের রাজ্য সম্পাদক পার্থ ঘোষও প্রশ্ন তোলেন, ‘‘দিদির কাছে জানতে চাই, মদন কবে ইস্তফা দেবেন?’’
মদনকে মন্ত্রী পদ থেকে অপসারণের দাবি বিরোধীরা বহু বার তুলেছেন। কিন্তু মমতা বারবারই অভিযোগ করেছেন, চক্রান্ত করে মদনকে ফাঁসানো হয়েছে। তৃণমূলের জন্ম ইস্তক এ বারই প্রথম ২১শের সভায় থাকছেন না জেলবন্দি মদন। সেই সভার ঠিক আগের দিন মদনকে বরখাস্ত করার দাবি তুলে মুখ্যমন্ত্রীর উপরে বাড়তি চাপ সৃষ্টি করতে চেয়েছে বামেরা। সূর্যবাবু এ দিন বলেন, ‘‘আপনি (মমতা) যদি নীল হন, তা হলে যে নীল নকশা নিয়ে সরকার চালাচ্ছেন, তা আমরা দেখে নেব। যদি নীল নকশা বাদ দিয়ে আপনি সাদা হন, তা হলে নতুন আইন প্রয়োগ করে প্রতারকদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করুন। পুরী, কালীঘাট, যেখানে যা আছে, হোটেল বা টিভি চ্যানেল সব বাজেয়াপ্ত করে গরিব মানুষের টাকা ফেরত দিন!’’ তৃণমূল নেতারা অবশ্য বলছেন, যা জবাব দেওয়ার আজ, মঙ্গলবার ধর্মতলার সভা থেকেই দেওয়া হবে।
একই দিনে দিল্লিতেও মান্ডি হাউস থেকে যন্তর মন্তর পর্যন্ত প্রতিবাদ মিছিল করেছে ৬টি বাম দল। কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদীর সরকার এবং মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থানে বিজেপি সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে পথে নেমেছিলেন সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য বৃন্দা কারাট, হান্নান মোল্লা, সিপিআইয়ের ডি রাজারা। বৃন্দা কটাক্ষ করেন, মোদী রেডিওয় ‘মন কি বাত’ চালাচ্ছেন। কিন্তু মনের কথা বলছেন না! পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে বিক্ষোভকারীরা এগিয়ে যেতে চাওয়ায় সাময়িক উত্তেজনাও তৈরি হয় এ দিন।
কলকাতায় আবার বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু মন্তব্য করেন, ‘‘কলকাতা থেকে শুরু করে গোটা রাজ্যে ২১ জুলাইয়ের জন্য যে হাজার হাজার হোর্ডিং লাগানো হয়েছে, তা সব দুর্নীতির টাকায় তৈরি! সারদা, এমপিএস, রোজভ্যালির দুর্নীতির সঙ্গে তৃণমূলের মন্ত্রী-নেতারা আগাপাশতলা জড়িত!’’ সিপিআইয়ের প্রবোধ পণ্ডা, ফরওয়ার্ড ব্লকের নরেন চট্টোপাধ্যায়, আরএসপির মনোজ ভট্টাচার্য, এসইউসির তরুণ নস্কর প্রত্যেকেই বিজেপির ব্যপম থেকে নানা স্তরে তৃণমূলের দুর্নীতির বিরুদ্ধে সুর চড়ান। শপিং মল কেলেঙ্কারি, কলেজে ভর্তির জন্য টাকা নেওয়া, টেট কেলেঙ্কারি সব প্রসঙ্গই তোলেন বাম নেতারা। বিজেপির সঙ্গে তৃণমূলের ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ তোলার পাশাপাশিই সূর্যবাবুর হুঁশিয়ারি, ‘‘আগামী ১০ অগস্ট কৃষকেরা নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়েছেন। বাম দলগুলিও অভিযানে সামিল হবে। আপনি যদি সাদা হন, তা হলে ওই দিন নবান্ন ছেড়ে পালাবেন না!’’
নকশাল নেতা অসীম চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে যে ‘চিট ফান্ড সাফারার্স ফোরাম’ গঠিত হয়েছে, কলকাতায় তার কোনও ঠিকানা না থাকায় প্রতারিত আমানতকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার সমস্যা হচ্ছে। বিমানবাবুর প্রস্তাব, সিটু দফতরে শ্যামল চক্রবর্তীর ঠিকানা ব্যবহার হোক। অসীমবাবু তা মেনে নিয়েছেন।